নিজস্ব প্রতিবেদক:
দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের পদ্মা নদীতে নাব্যতা সংকট ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। আর নৌ চ্যানেলে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে এই দুই ঘাটে ড্রেজিং কার্যক্রম তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে অব্যাহত রয়েছে। তবে লঞ্চ ও ফেরি মাস্টারদের অভিযোগ, পরিকল্পিতভাবে ড্রেজিং না করা ও নদীতে কোনো মারকিং চিহ্ন (ভূত বাতি) না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে লঞ্চ-ফেরিসহ সকল প্রকার নৌযান।
রাজধানী ঢাকার সাথে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান নৌ পথ রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট। এ নৌরুটে প্রতিদিন ছোটবড় ১৪/১৫টি ফেরি ও ২৫টি লঞ্চ চলাচল করে। তবে বর্ষা মৌসুম শেষ হওয়ায় পদ্মা নদীতে নাব্যতা সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে ব্যাহত হচ্ছে ফেরী লঞ্চসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল। এ অবস্থায় নাব্যতা সংকট নিরসনে পাটুরিয়া ঘাটে গত ৫ সেপ্টেম্বর এবং ১৯ অক্টোবর থেকে দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে ড্রেজিং কার্যক্রম শুরু করেছে বিআইডব্লিউটিএ।
দৌলতদিয়া লঞ্চ ঘাটের সুপার ভাইজার মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ‘দৌলতদিয়া পাটুরিয়া নৌরুটে লঞ্চ চলাচলে খুব বিঘ্ন ঘটছে, কারণ লঞ্চ নিয়ে ফেরি চ্যানেলে প্রবেশ করতে হয়। লঞ্চ চালানোর জন্য আলাদা কোন চ্যানেল নেই। নদীতে মার্কার বা সিগনাল বাতি নেই। রাতে লঞ্চ চালাতে খুব সমস্যা হয়। নদীতে ড্রেজিং করে সেই বালি আবার নদীতেই ফেলা হচ্ছে। এই ড্রেজিং করে যদি বালি অন্য স্থানে ফেলতো তাহলে লঞ্চ চালাতে কোন সমস্যা হতো না। নাব্যতা সংকট নিরসনে কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করি।’
এমভি নাজির এক্সপ্রেসের লঞ্চ মাস্টার মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘দৌলতদিয়া পাটুরিয়া নৌরুটে যাবার পথে বা সাইডে খাড়ি কাটছে। নদীতে মার্কার দরকার তা নেই। রাতে পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়া আসার পথে দৌলতদিয়া টেকে যে ভূত বাতি থাকার কথা তাও নেই। এরূপ অবস্থায় লঞ্চ চালাতে অসুবিধা হয়। চলাচলে ঝুঁকিও থাকে।’ ইউটিলিটি ফেরি হাসনা হেনার মাস্টার মাইনুদ্দিন হালদার বলেন, ‘পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে নাব্যতা সংকটের কারণে বিভিন্ন সময়ে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। পদ্মায় পানি কম থাকায় ফেরি চালাতে সমস্যা হচ্ছে। পদ্মায় এখন নব্যতা সংকট। দুই পারেই ড্রেজিংয়ের কাজ দ্রুত করা দরকার।’
রো রো ফেরি শাহ জালালের মাস্টার মো. হাসমত আলি বলেন, ‘পাটুরিয়া ও দৌলতদিয়া নৌরুটে দৌলতদিয়া প্রান্তে ৫ নম্বর ঘাটে কিছুটা পানি থাকলেও পাটুরিয়া প্রান্তে ৩, ৪, ৫ এই তিন ঘাটেই পানি অনেক কম। নাব্যতা কমে গেছে। ড্রেজিং চলছে, তবে লোড নিলে চ্যানেলের মধ্যে ডুবোচরে ফেরি ধাক্কা খায়। আরও ড্রেজিং দরকার। ফেরি চলার চ্যানেলটা আরও প্রশস্ত করতে হবে।’ নাব্যতা সংকটের কারণে ফেরি চলাচল ও পল্টুনে ফেরি ভেড়াতে অধিক সময় লাগার কারণে ফেরির ট্রিপ সংখ্যা কমে গেছে বলে জানালেন বিআইডব্লিটিসির দৌলতদিয়া ঘাটের সহ-মহাব্যাবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. শফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে বর্তমানে বিআইডব্লিউটিসির ১৬টি ফেরি আছে। পাটুরিয়ার বেসিংয়ে তিনটি ড্রেজার কাজ করছে। সেখানে বেসিংয়ের পাশেই চ্যানেলটা সরু। যার কারণে একসাথে ২টি ফেরি আপ-ডাউন করতে পারে না। নাব্যতা সংকটের কারণে এ রুটে ট্রিপ সংখ্যা একটু হ্রাস পেয়েছে।’ ফেরি লঞ্চসহ সব ধরনের যানবাহন নিবিঘ্নে চলাচল করতে দৌলতদিয়া পাটুরিয়া দুই ঘাটই আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ড্রেজিং করা হবে বলে জানালেন বিআইডব্লিউটিএ’র আরিচা ঘাটের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. তৌফিকুল আলম। তিনি বলেন, ‘দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া দুই ঘাটই পর্যায়ক্রমে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ড্রেজিং করা হবে। পাটুরিয়া প্রান্তে তিনটি ও দৌলতদিয়া প্রান্তে তিনটি ড্রেজার কাজ করছে। এর মধ্যে পাটুরিয়া প্রান্তে দুটি বেসরকারি ড্রেজার কোম্পানি একটি বিআইডব্লিউটিএ’র এবং দৌলতদিয়া প্রান্তে তিনটিই বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজার কাজ করছে।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি