২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১২:২৪

মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্যও খ্রিস্টান ধর্মের ক্লাস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

রাষ্ট্রের অর্থায়নে পরিচালিত ক্যাথলিক স্কুলগুলোয় মুসলিমদের অবশ্যই ধর্মীয় ক্লাসে অংশ নিতে হবে৷ হ্যাঁ, মামলার শুনানি না শুনেই এমন রায় জার্মানির সাংবিধানিক আদালতের৷ এতে কি প্রমাণ হয় যে, জার্মানিতে চার্চ ও রাষ্ট্র আলাদা নয়?

জার্মানির উত্তর রাইন-ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যে বসবাসকারী এক মুসলিম দম্পতি মার্চ মাসে আদালতে একটি আবেদন করেছিল৷ বলেছিল, রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে পরিচালিত ক্যাথলিক স্কুলগুলোয় ধর্মীয় ক্লাসে অংশ নেয়া থেকে যেন মুসলিম ছেলে-মেয়েদের অব্যাহতি দেয়া হয়৷ জার্মানির সাংবিধানিক আদালত সেই মামলাটাকেই প্রত্যাখ্যান করে৷ আদালতের কথায়, মুসলিম সেই দম্পতি এমন কোনো শক্তিশালী যুক্তি উপস্থাপন করতে পারেননি যাতে করে আদালত মামলাটি বিবেচনায় নেয়৷

দেশটির গণমাধ্যম ডয়চে ভেলের খবরে বলা হয়েছে, স্কুলটির পরিচালক অবশ্য ওই অভিভাবককে আগেই জানিয়েছিলেন যে, তাদের সন্তান ধর্মের ক্লাস ও স্কুলের চার্চ সার্ভিসে অংশ না নিলে স্কুলে যোগ দিতে পারবে না৷ তবে শুধু সেই দম্পতির সন্তান নয়, ক্যাথলিক নয় এমন সবার ক্ষেত্রেই এই নিয়ম৷

ধর্মীয় নিরপেক্ষতা?

নর্থ রাইন-ওয়েস্টফেলিয়ার বা এনআরডাব্লিউ হলো জার্মানির একমাত্র রাজ্য, যেখানে জনসাধারণের অর্থায়নে ধর্মীয় স্কুল পরিচালিত হয়৷

আদালত নিশ্চিত করে যে, এনআরডাব্লিউ-এর একটি প্রশাসনিক আদালত তাদের রায়ে জানিয়েছে, ক্যাথলিক এবং প্রটেস্টান্ট– খ্রিস্টানদের এই দুই অংশই তাদের মতো করে ‘পাবলিক ফান্ডেড’ স্কুল পরিচালনা করতে পারে৷ এই স্কুলগুলো নাকি তাদের নিজস্ব ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী যেমন খুশি ছাত্রদের পড়ার সুযোগ করে দিতে পারে৷ এমনকি জায়গা খালি থাকলে ক্যাথলিক নয় এমন ছাত্রদেরও পড়ার সুযোগ দিতে পারে৷ অন্যদিকে, সংবিধানের ৭ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ‘শিশুরা ধর্মীয় নির্দেশনা পাবে কিনা সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার রয়েছে বাবা-মা অথবা অভিভাবকদের হাতে৷’ এ বিষয়ে বার্লিন সোশ্যাল সায়েন্স সেন্টারের গবেষক ও হিল্ডেসহাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক আইন বিষয়ের অধ্যাপক মিশায়েল ভ্রাসে মনে করেন, আদালতের এই রায়ে জটিলতা আছে৷ তিনি বলেন, ‘এটি এমন একটি বিষয়, যেখানে বিতর্কের যথেষ্ট সুযোগ আছে৷’

ইতিহাসের সমস্যা…

জার্মানির লিগ্যাল ইন্সটিটিউট অফ ইভানগেলিকাল চার্চের পরিচালক ও গ্যোটিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চার্চ আইন বিভাগের অধ্যাপক হান্স হাইনিগ মনে করেন, আদালতের এই সিদ্ধান্তের পেছনে যথেষ্ট যুক্তি আছে৷

তিনি বলেন, ‘আদালতের যুক্তি বেশ দৃঢ় ছিল৷ যতদিন পর্যন্ত ধর্মীয় স্কুল আছে, ততদিন পর্যন্ত স্কুলগুলোকে ধর্মীয় প্রোফাইলে রক্ষার অনুমতি দেওয়া উচিত এবং ধর্মীয় নির্দেশনা এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷’

জার্মানিতে ফেডারেল সরকারের বদলে রাজ্য সরকারের হাতে স্কুলের নির্দেশনা দেয়াসহ সব ধরনের ক্ষমতা আছে৷ নাৎসি আমলের সেই কেন্দ্রীভূত হস্তক্ষেপ থেকে স্কুলগুলোকে দূরে রাখতেই এই ব্যবস্থা৷ যদিও অধ্যাপক হাইনিগ মনে করেন, জনগণের অর্থায়নে পরিচালিত ধর্মীয় স্কুলগুলোতে বিদ্যালয়গুলির এই নিয়ম এখন অচল৷

রাজনৈতিক সদিচ্ছা

অধ্যাপক হাইনিগের মতে, রাজনৈতিক কাপুরুষতা ধর্মীয় শিক্ষা সম্পর্কিত সমস্যাগুলোকে আরও জটিল করছে৷ জার্মানিতে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটরা এনআরডাব্লিউ-এর মতো বেশ কিছু রাজ্য শাসন করে৷ ‘অবশ্য তারা রাজ্যের ক্যাথলিক চার্চগুলোর সাথে কখনোই কোনো বিতর্কে জড়ায়নি, নাক গলায়নি স্কুলের কোনো বিষয়ে৷’

অদ্ভুত কারণে বাভেরিয়া রাজ্যে কিন্তু রয়েছে সম্পূর্ণ আলাদা নিয়ম৷ এখানকার বিশাল জনগোষ্ঠী ক্যাথলিক এবং রক্ষণশীল খ্রিস্টান সোশ্যাল ইউনিয়ন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, কিন্তু একই সাথে এ এলাকায় অনেক ধর্মনিরপেক্ষ স্কুল রয়েছে৷ স্কুলগুলোতে ধর্ম এবং সরকার ব্যবস্থাকে আলাদা রাখতে কর্মকর্তারা নানা কঠোর অবস্থান বজায় রেখেছেন৷ উত্তর রাইন-ওয়েস্টফেলিয়া যেটা পারেনি৷

উল্লেখ্য, জার্মানির ১৬টির মধ্যে ৮টি রাজ্যে ধর্মীয় কারণে নারী শিক্ষকদের মাথায় স্কার্ফ পরা নিষিদ্ধ৷

দৈনিক দেশজনতা ডেস্ক:

প্রকাশ :নভেম্বর ৮, ২০১৭ ১২:৪৭ অপরাহ্ণ