২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৩:০৯

নতুন জটিলতায় ডোনাল্ড ট্রাম্প।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

এফবিআই’র সাবেক প্রধান জেমস কমিকে বরখাস্ত করার পর পরই রাশিয়ান কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে রাষ্ট্রের ক্লাসিফাইড তথ্য ফাঁস করার পর যে ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে আছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, সেই আগুনে নতুন করে ঘি ঢেলে দেওয়ার মতো রিপোর্ট প্রকাশ করেছে নিউইয়র্ক টাইমস। এফবিআই ডিরেক্টর জেমস কমিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা প্রধান জেমস কমির ব্যাপারে তদন্ত স্থগিত করতে বলেছিলেন বলে লিখিত নোট পাওয়া গেছে কমির সাবেক ডায়েরিতে।

এফবিআই’র সঙ্গে সংযুক্তদের দৈনন্দিন ডায়েরি এবং অফিসিয়াল মেমো’র তথ্য উপাত্তকে রাষ্ট্রীয় নথি হিসেবে গণনা করা হয়। সেখানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের পর ট্রাম্প তাকে অনুগত ভূমিকায় দেখতে চেয়েছিলেন এবং জেনারেল ফ্লিন, যাকে কিনা রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথোপকথনের সূত্র ধরে বরখাস্ত করা হয়েছিল, তার বিষয়ে এফবিআই তদন্ত স্থগিত করতে বলেছিলেন বলে ওই মেমোতে উল্লেখ করেছেন জেমস কমি।

এ তথ্য ফাঁস হওয়ার পর এটা নিয়ে প্রকাশিত নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন ধরেই আবারো নতুন জটিলতায় পড়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনকি ট্রাম্প ঘনিষ্ঠ ফক্স নিউজ এখন আলোচনা শুরু করেছে যে, ট্রাম্পের অভিসংশন বা ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া শুরু করতে এ একটা অভিযোগকেই সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিতে পারে ডেমোক্রাট দল। সেটাই শুরু হয়েছে এখন। এতদিন ধরে যেটি ছিল শুধু গুঞ্জন এবং সামাজিক মাধ্যমে ট্রাম্প বিরোধীদের ক্ষোভ প্রকাশের কথা, এখন সেটি পৌঁছে গেছে আইনপ্রণেতাদের মুখে। টেক্সাস থেকে নির্বাচিত ডেমোক্রাট দলীয় কংগ্রেসম্যান কেথ এলিসন বলছেন, ডিসিতে বসে ট্রাম্প হোটেল পরিচালনা আর তার সন্তান যারা ট্রাম্পের ব্যবসা দেখছে, তারাই আবার প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছে, সেটাই অনৈতিক অর্থ লেনদেনের একটা বড় প্রমাণ হিসেবে দাঁড় করানোর যথেষ্ট সুযোগ আছে। এখন রাশিয়া ইস্যু তো বাড়তি রশদ, যে তার ইমপিচমেন্টের সময় হয়ে গেছে।

কথা বলছেন সিনেটররাও। নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে ট্রাম্পের নির্বাচনী টিমের সঙ্গে রাশিয়ান সরকারের কোনো যোগাযোগ ছিল কিনা সেটা তদন্তে আলাদা বিচার প্রতিষ্ঠান বা স্পেশাল প্রসিকিউশন গঠনের দাবি আবারো জোরালো করছে ডেমোক্রাট দল। ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নির্বাচিত ডেমোক্রাট দলীয় সিনেটর অ্যাডার্ম স্কিফ নিউইয়র্ক টাইমসের সংবাদ এবং সেখানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, তদন্ত স্থগিত করার জন্য কমির মেমো’কে গণনায় নিয়ে অবিলম্বে আলাদা প্রসিকিউশন গঠনের কথা বলে বলছেন যথেষ্ট হয়েছে, এখন কাজ করার সময়। আগের নানান ঘটনা প্রবাহ থেকে স্পিফ বলেছেন, ‘ট্রাম্প তো নিজেই সাক্ষাৎকারে বলছেন, কমি নাকি তার কাছে এফবিআই প্রধান পদে থাকার অনুরোধ করেছিলেন, জবাবে ট্রাম্প কি বলেছিলেন বা কিছু চেয়েছিলেন কিনা সেটা বলেননি। তাই কমির রেখে যাওয়া ওই মেমোকে আমলে নেওয়া উচিৎ-না হলে রাষ্ট্রের আরো বড় ক্ষতি অপেক্ষা করছে সামনে।

আর রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত সার্গে কিসলিয়াক এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গে ল্যাবরবের সঙ্গে বৈঠকে আসলেই ডোনাল্ড ট্রাম্প কি কি বিষয় নিয়ে আলাপ করেছেন তার ট্রান্সক্রিপ্ট বা লিখিত তথ্য কংগ্রেসে জমা দেবার দাবি জানিয়েছেন সিনেটর চাক শুমার। সিনেটে নিজের বক্তব্য দেবার সময় শুমার বলেন, ‘এটা এখন আর হেয়ালির বিষয় নয়। যেই প্রেসিন্টে ক্লাসিফাইড তথ্যের সুরক্ষা দিতে পারেন না তার হাতে দেশ পরিচালনার নেতৃত্ব রাখায় আর ভরসা রাখতে পারছেন না দেশের বেশিরভাগ মানুষ। যেই বিশ্বাসযোগ্যতার সংকট তৈরি হয়েছে সেখান থেকে মুক্তির জন্য, ট্রাম্পের সঙ্গে রাশিয়ান কূটনীতিকদের বৈঠকের লিখিত বাক্য বা ট্রান্সক্রিপ্ট প্রকাশের দাবি এখন সময়ের দাবি বলেই জানান চাক শুমার।

এসব আলোচনায়, দল নিরপেক্ষ একজন সিনেটর যিনি কিনা সিনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটির সদস্য ও স্বতন্ত্র সিনেটর আঙ্গাস কিং বলেছেন, ‘যদি এমন হয়ে থাকে যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আসলেই কমিকে তার কাজ থামাতে বলেছিলেন অথবা বিচার ও তদন্ত পথে বাধা সৃষ্টির কোনো চেষ্টা করেছেন, সেটা প্রমাণিত হলেই তার অভিসংশনের জন্য পর্যাপ্ত উপকরণ তৈরি হয়ে যাবে। এটা অবস্ট্রাকশন অব জাস্টিস বা বিচার প্রক্রিয়ায় বাধা দেবার শামিল, যা অভিসংশনের বড় হাতিয়ার।’

একজন প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব নেওয়ার দুই মাসের মধ্যেই তার অভিসংশনের পক্ষে এ ধরনের কথা যুক্তি বা প্রশ্ন উদ্রেক হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করে সিনেটর কিং বলেছেন, মেনে নিতে হচ্ছে- এটাই এখনকার বাস্তবতা।

দেশের অভ্যন্তরে এমন অনেকগুলো বিষয় নিয়ে বলা চলে দায়িত্ব নেওয়ার পর সবচেয়ে বড় চাপের মধ্যে পড়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয় প্রধান আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এফবিআইয়ের প্রধান কে হচ্ছেন, যাকে নিয়োগ দেওয়া হবে তিনি কি স্বাধীন কাজ করতে পারবেন কিনা, সেসব নিয়েই হচ্ছে আলোচনা। এফবিআইয়ের সাবেক প্রধান জেমস কমির বরখান্ত হওয়ার পর এখনো এই নিয়ে আলোচনা আর আগ্রহের শেষ নেই। কে হচ্ছেন পরবর্তী এফবিআই প্রধান সেটা নিয়েও চলছে আলোচনা। সিএনএন বলছে, শনিবার অন্তত ৮ জনকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়েছিল হোয়াইট হাউসে। এর মধ্যে টেক্সাসের রিপাবলিকান দলীয় একজন সিনেটর আছেন। আছেন এফবিআইয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান এন্ড্রু ম্যাকাবে। আর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, যাদের ডাকা হয়েছিল তারা খুব মেধাবী, শিগগিরই নিয়োগ সম্পন্ন করা হবে।

শনিবার এ পদে সম্ভাব্য ৮ জনের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, খুব শিগগিরই একজনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। কিন্তু ডেমোক্রাট দলের নেতা চাক শুমার বলেছেন, ট্রাম্পের রাশিয়া সংক্রান্ত তদন্ত পরিচালনার জন্য আলাদা বিচারিক বিভাগ প্রতিষ্ঠার আগে কাউকে নিয়োগ দেওয়া ঠিক হবে না।

দেশ জনতা/এন এইচ

প্রকাশ :মে ১৭, ২০১৭ ১১:৩১ পূর্বাহ্ণ