২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১০:৪৬

রোহিঙ্গারা দিন দিন মেলে ধরছে তাদের হিংস্র রূপ !

 উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি :

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ৬ লাখ ৪ হাজার নতুন রোহিঙ্গা। পুরাতনসহ এখন উখিয়া-টেকনাফে ১০ থেকে ১২ লাখ। রোহিঙ্গাদের চাপে স্থানীয়রা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। সংখ্যালঘু বনে গেছে উখিয়া-টেকনাফের স্থানীয় মানুষ গুলো। আবার রোহিঙ্গাদের হিংস্রতার শিকারও হচ্ছে স্থানীয়রা। আশ্রিত এসব রোহিঙ্গাদের খাদ্য-বাসস্থান, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা জোরদারে নিরলস কাজ করছে বাংলাদেশ সরকার। অব্যাহত ত্রাণ বিতরণে রোহিঙ্গা পরিবারগুলোতে ত্রাণের পাহাড় হয়ে গেছে। ফলে রোহিঙ্গারা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পাওয়া ত্রাণ খোলা বাজারে পানির দরে বিক্রি করে দিচ্ছে। এদিকে আশ্রিত রোহিঙ্গারা তাদের হিংস্র রূপগুলো দিন দিন মেলে ধরছে। খুন, ডাকাতি, ইয়াবা ও মানবপাচার, হামলা এবং বনভূমি দখলসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের হাতে হামলার শিকার হয়েছেন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনও। শনিবার রামুতে এক যুবককে খুন, উখিয়ায় ৪ বাংলাদেশিকে প্রহার, স্থানীয় বাড়ি থেকে গরু চুরি ও ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের ডাকাতি কালে স্বশস্ত্র রোহিঙ্গা আটকসহ গত এক মাসে অসংখ্য অপরাধমূলক কর্মকান্ড ঘটিয়েছে মানবিক আশ্রয়ের আওতায় থাকা রোহিঙ্গারা। তাদের অপকর্মে স্থানীয়রা একপ্রকার অসহায় হয়ে পড়েছে। রাজাপালং ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, সরকার এবং দলীয় সিদ্ধান্তে রোহিঙ্গাদের মানবিক আশ্রয় দিলেও স্থানীয়দের অমানবিকতার পরিচয় দিচ্ছে তারা। রোহিঙ্গাদের হাত ধরে দেশে প্রতিনিয়ত মরণ নেশা ইয়াবা আসছে। এদিকে রোহিঙ্গা আসার পর থেকে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে চুরি, ডাকাতি, খুন সহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড। ফলে রোহিঙ্গাদের কারণে নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে স্থানীয়দের জীবন। রোঙ্গিহারা বিষফোঁড়ায় পরিণত হচ্ছে দিন দিন। তাই অতি দ্রুত রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো না হলে নিজেদের অস্থিত্ব রক্ষা করা কঠিন হবে বলে তিনি জানান। তথ্যমতে শুক্রবার রামুর খুনিয়াপালং হেডম্যান পাড়ায় আবদুল জব্বার (২৫) নামে স্থানীয় এক যুবককে গলাকেটে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে রোহিঙ্গা যুবক হাফেজ জিয়াবুল মোস্তফা। পুলিশ এ ঘটনায় ঘাতক মোস্তফা ও তার ফুফু ভেলুয়ারা বেগমকে আটক করেছে। নিহত জব্বার রামুর খুনিয়াপালংয়ের কালুয়ারখালীর হেডম্যান বশির আহম্মদের ছেলে। খুনিয়াপালং ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মাবুদ জানান, শুক্রবার সামাজিক বনায়নের বাগান পাহারারত আবদুল জব্বারকে রোহিঙ্গা হাফেজ জিয়াবুল মোস্তফা গলাকেটে ও কুপিয়ে তাকে আহত করে। মুমূর্ষু অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ঘাতক জিয়াবুল মোস্তফা ও তার ফুফু ভেলোয়া বেগমকে আটক করেছে পুলিশ। এদিকে, উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের হামলায় ৪ বাংলাদেশি গুরুতর আহত ও ডাকাতির চেষ্টার ঘটনায় ১০ রোহিঙ্গা আটক হয়েছে। এসময় গুলিসহ ২টি দেশীয় এলজি উদ্ধার করা হয়। আটককৃতরা হলো, কুতুপালং ক্যাম্প তেলীপাড়া এলাকার মোহাম্মদ কাছিমের ছেলে মোহাম্মদ রফিক (৩২), সুলতান আহমদের ছেলে মোহাম্মদ ইসমাইল (২৭), নুর মোহাম্মদ মোঃ ইউনুছ, বালুখালী থেকে নুরুল বশর (৩০) ও ইলিয়াসের (২৮) নাম পাওয়া গেছে। বাকিদের নাম পাওয়া যায়নি। টেকনাফের হৃীলা রঙ্গিখালী একটি বাড়িতে চুরি করতে ঢুকে ৬টি মোবাইল নিয়ে পালানোর সময় রোহিঙ্গা যুবক জাবেদকে পরিবারের লোকজন হাতে নাতে ধরে ফেলে। পরে তাকে আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে তুলে দেয়া হয়। সূত্র আরো জানায়, গত ১৭ সেপ্টম্বর রোহিঙ্গাদের হামলায় উখিয়ার পালংখালি এলাকার মুরগির খামার ব্যবসায়ি জমির উদ্দিন আহত হয়। গত ১৬ সেপ্টম্বর উখিয়ার কুতুপালং এলাকায় রোহিঙ্গাদের হামলায় রোহিঙ্গা খুনের ঘটনা ঘটে। যেই সংবাদটি বিদেশি গণমাধ্যমেও স্থান পায়। ৭ অক্টোবর কুতুপালংয়ের রোহিঙ্গা বস্তি লাগোয়া খাল থেকে এক অজ্ঞাত ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ৮ অক্টেবর কুতুপালংয়ে ত্রাণের টোকেন বিতরণ করতে গিয়ে মুক্তি নামের এনজিও কর্মী রোহিঙ্গাদের কবল থেকে বাঁচতে গাছে উঠে পড়ে। ১৯ অক্টোবর মহিষ বিক্রিকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গা মোহাম্মদ হোছনের ছেলে ধলাইয়া ও কালাইয়ার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় স্থানীয় আবু সিদ্দিকের। এক পর্যায়ে রোহিঙ্গা দুই সহোদর ক্ষুদ্ধ হয়ে আবু ছিদ্দিককে মারধর ও ছুরিকাঘাত করে। ২১ অক্টোবর আহত সিদ্দিকের চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মৃত্যু হয়। ২২ অক্টেবর রোহিঙ্গা নারী দিল বাহার ও সৈয়দ আহমদ ক্যাম্পে অবৈধভাবে মুদির দোকান স্থাপনে বাঁধা দিলে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কবির আহমদের উপর হামলা চালায়। এঘটনায় এসআই কবির আহত হয়। এছাড়াও রোহিঙ্গারা প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথায় ইয়াবা নিয়ে ধরা পড়ছে। ২৮ অক্টোবর গভীর রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে বর্তমানে কুতুপালং ক্যাম্পে অবস্থানরত রোহিঙ্গা নারী কে আটক করেছে র্যাব-৭। ৯ হাজার ৮শ ইয়াবা সহ আটক ফাতেমা খাতুন আকিয়াব জেলার মংডু উপজেলার পানিরছড়া গ্রামের মো: রুহুল আমিনের স্ত্রী। এ সময় উদ্ধারকৃত ইয়াবার ট্যাবলেটের আনুমানিক মূল্য ৩৯ লক্ষ ২০ হাজার বলে জানিয়েছেন মেজর মো: রুহুল আমিন। ২৮ অক্টোবর দিবাগত রাতে রাজাপালং ইউনিয়নের হাজিম্যা রাস্তার মাথা গুরা মিয়ার গরু চুরির সময় হাতে নাতে আটক হয় রোহিঙ্গা যুবক মোহাম্মদ ইউনুছ (২০)। তার ভাষ্যমতে, ১৭ অক্টোবর হাঙ্গর ঘোনা গ্রামের মৃত লুলু বড়ুয়া বাড়ি থেকে আনুমানিক ৫০ হাজার মূল্যের গরু চুরির ঘটনাও তারা করেছে। গরু চুরির সাথে লম্বাঘোনা এলাকার দরবেশ পুত্র মো: বেলাল, জালাল আহমদ প্রকাশ কানা জালা আহমদের পুত্র মো: মাছন প্র: গুলি খাইয়া মাছন, কুতুপালং এলাকার প্রদীপ বড়ুয়ার পুত্র রুবেল বড়ুয়া, কালাচাঁন জড়িত বলে সে জানায়। কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চাইলাউ মারমা জানান, শুক্রবার বালুখালী ক্যাম্পে একটি মসজিদের পাশে আশ্রয় নেয়া ৪ এনজিও কর্মীকে কুপিয়েছে রোহিঙ্গারা। এ ঘটনায় ২টি অস্ত্র সহ দুই জনকে আটক করা হয়। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে নিজেদের সুযোগ-সুবিধা বিসর্জন দিচ্ছে স্থানীয়রা। এরপরও রোহিঙ্গাদের অপকর্মের শিকার হওয়া বড়ই নির্মম। রোহিঙ্গারা যাতে কোনো অপরাধ কর্মকান্ড ঘটাতে না পারে সে ব্যাপারে কঠোর নজরদারিতে রেখেছে পুলিশ ও সাদা পোশাকে অন্যান্য বাহিনীর লোকজন। উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো: আবুল খায়ের বলেন, ক্যাম্পে হামলার ঘটনায় অস্ত্র সহ আটক ২জনের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনের মামলা রুজু করা হয়েছে। এ ঘটনায় আহতরা চিকিৎসাধীন রয়েছে। নিখোঁজ ৫ জন এনজিও কর্মীও পালিয়ে বেঁচে যান বলেও তিনি জানান।

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :অক্টোবর ২৯, ২০১৭ ৬:৫৯ অপরাহ্ণ