আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
কর্মক্ষেত্রে বা পড়াশুনার জায়গায় অর্ধেক ব্রিটিশ নারীই যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন, এমনকি এক পঞ্চমাংশ পুরুষও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। বিবিসির এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
যৌন হয়রানির শিকার প্রায় ৬৩ শতাংশ নারী বিবিসিকে জানিয়েছেন, ঘটনার পর তারা এ বিষয়ে কোনো রিপোর্ট করেননি বা কাউকে জানাননি। অন্যদিকে যৌন হয়রানির শিকার ৭৯ শতাংশ পুরুষ জানিয়েছেন এ বিষয়টি তারা নিজেদের মধ্যেই চেপে রেখেছিলেন।
বিবিসি রেডিও ৫ লাইভ-এর জন্য যে সংস্থাটি জরিপ চালায় তারা দুই হাজারেরও বেশি মানুষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছে।
হলিউডের অন্যতম প্রযোজক হার্ভে ওয়েনস্টেইনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠার পরই এই জরিপ চালানো হয়।
সম্প্রতি হলিউডের বেশ কয়েকজন নায়িকা বলেছেন অস্কারজয়ী প্রযোজক ওয়েনস্টেইনের কাছে কী ধরনের যৌন হয়রানির শিকার হন। এরপর সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘মি টু’ হ্যাশ ট্যাগে অনেক নারী-পুরুষ জানিয়েছেন কীভাবে তারা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন।
দুই হাজার ৩১ জন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির ওপর এই জরিপ চালানো হয়। ওই জরিপে প্রায় ৫৩ শতাংশ নারী ও ২০ শতাংশ পুরুষ জানিয়েছেন তারা কর্মক্ষেত্রে বা শিক্ষাক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের অপ্রীতিকর মন্তব্য শুনেছেন আর বিভিন্নভাবে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। জরিপে আরও দেখা গেছে, এক-চতুর্থাংশ মানুষ অপ্রিয় বা অশ্লীল কৌতুক শুনেছেন। এছাড়া, প্রতি সাত জনে অন্তত একজন অযাচিত বা অশ্লীল স্পর্শের শিকার হয়েছেন। আর প্রতি ১০ জনে একজন নারী যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।
কর্মস্থলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা বসদের কাছ থেকে পুরুষদের তুলনায় নারীরাই বেশি হয়রানির শিকার হন এবং জরিপে জানা গেছে প্রায় ৩০ শতাংশ নারী ছিলেন বসদের টার্গেট।
অন্যদিকে, পুরুষরাও এমন হয়রানির শিকার হয়েছেন, তবে তাদের সংখ্যা নারীদের তুলনায় কম- প্রায় ১২ শতাংশ।
জরিপে উঠে এসেছে প্রতি ১০ জনে একজন নারী যৌন হয়রানির কারণে শিক্ষাক্ষেত্র বা কর্মক্ষেত্র ত্যাগ করেছেন।
ক্যামব্রিজের সারাহ কিলিকয়নে বিবিসিকে জানান, শিক্ষাক্ষেত্রে দুজন মানুষ তাকে যৌন হেনস্তা করেছিলেন। কিশোরী বয়সে স্কুল শিক্ষক এবং কলেজে ওঠার পর সেখানকার একজন অধ্যাপক সারাহকে যৌন হয়রানির মধ্যে ফেলেন।
বিবিসিকে সারাহ বলেন, ‘আমি জানি আমাদের আশেপাশেই অনেক মানুষ আছে যারা যৌন শিকারী, খুব কম মানুষই আছে যারা তাদের নিষ্ক্রিয় করতে পারে।’
‘নোংরা ও অস্বস্তিকর’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানিয়েছেন কর্মক্ষেত্রে নারী বসের দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিলেন তিনি।
তিনি জানান, ‘আমার ওই নারী বস সবসময় আমার পোশাক, আমার দেহসহ সবকিছু নিয়ে প্রশংসা করতো। আমার বুকের লোম নিয়ে কথা বলতো এবং আমি নারীদের মধ্যে কী বেশি পছন্দ করি তা জানতে চাইতো।’
‘আমার অন্য নারী সহকর্মীরা এটা শুনে হাসতো। কিন্তু এসব কথা শুনে নোংরা বোধ করতাম অস্বস্তিকর লাগতো।’
‘ভয়ে অচল হয়ে পড়া’
লেবার এমপি জেস ফিলিপস ও ম্যারি ক্রেইগ নিজেদের শৈশবের অভিজ্ঞতা সবার সঙ্গে শেয়ার করেছেন।
যৌন হয়রানির শিকার ব্যক্তিরা যেন নিজেদের অভিজ্ঞতা আড়ালে না রাখে সেটাকে উৎসাহিত করতেই ফিলিপস শৈশবের যৌন হয়রানির অভিজ্ঞতা জানান লন্ডনের এক পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দেবার সময়। এমনকি কর্মক্ষেত্রেও বাজে অভিজ্ঞতার কথা জানান তিনি।
ফিলিপস জানান, এক অনুষ্ঠানে তার বস যখন তাকে যৌন হেনস্তা করছিল তখন তিনি ‘ভয়ে অচল হয়ে পড়েছিলেন’।
ক্রেইগ জানান, সাত বছর বয়সে তাকে যৌন হেনস্তার মুখে পড়তে হয়েছিল। স্কুলের খেলার মাঠে ১২ জন ছেলে তাকে চুমু দেয়ার খেলার মধ্যে আটকে ফেলেছিল।
বিবিসির এই জরিপ ছাড়াও গত বছর প্রকাশিত টিইউসির জরিপেও উঠে আসে যে ব্রিটেনে অর্ধেকেরও বেশি নারী যৌন হয়রানির শিকার হয়, যার বেশিরভাগই খবরে আসে না।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ