২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৪:৫১

বিএনপি’র সঙ্গে ইসি’র সংলাপ

নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ১৫ অক্টোবর। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপির ১৬ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। অন্যদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা নেতৃত্ব দেন নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত রোড ম্যাপের অংশ হিসেবেই এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সংলাপ অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচন কমিশনের খুব বেশি কিছু করার নেই। বর্তমান সরকারের যে অগণতান্ত্রিক আচরণ, সেখানে খুব বেশী আশাবাদী হওয়ার কারণ আছে বলে মনে করি না। তারপরও সংলাপের পর আমরা কিছুটা আশাবাদী তো বটেই। সংলাপে বিএনপির পক্ষ থেকে ২০ দফা প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হয়। তন্মধ্যে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার গঠন, সব দল ও প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করা লেভেল প্লেইং ফিল্ড), প্রশাসনের ভারসাম্য আনয়ন, ইভিএম বা ডিভিএম-এ ভোট গ্রহণ না করা, সংসদীয় আসনের সীমানা ২০০৮ এর পূর্বের অবস্থায় পুননির্ধারণ, জনপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন, নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা সংশোধন, আচরণ বিধিমালা সংশোধন, ৫৭ ধারা বাতিল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
বিএনপি মহাসচিব বলেছেন ‘ইসি বলেছে তাদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। তবে এ কথা তারা স্বীকার করেছেন যে, দেশে বর্তমানে সেই অবস্থা নেই যে, পুরোপুরি দায়িত্ব পালন করতে পারেন। এটাও বলেছেন, যে গণতন্ত্রের যে আসল রূপ সেই রূপ বাংলাদেশে নেই।
অপরদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার তার প্রারাম্ভিক বক্তৃতায় বিএনপি এবং এর প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রশংসা করে অনেক কথা বলেছেন। তিনি জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তনকারী হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, তার হাত দিয়েই দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা লাভ করে। এছাড়া সিইসি বিএনপিকে সফল রাষ্ট্র পরিচালনার সুদীর্ঘ অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রশংসা করেন। তিনি বিএনপির রাষ্ট্রপরিচালনার প্রশংসা করে বলেন, বিএনপি সরকার দেশে বহুবিধ উন্নয়ন করেছে। এসময় তিনি প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলকরণ, পৃথক প্রাথমিক গণশিক্ষা বিভাগ প্রতিষ্ঠা, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, আইন কমিশন , দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠা, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় গঠনসহ বিএনপি সরকারের আমলে গৃহীত অনেক উন্নয়ন-মূলক কর্মকান্ডের কথা তুলে ধরেন।
নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে বিএনপি যে কিছুটা হলেও আশাবাদী হয়েছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর সেটাই স্বাভাবিক। কেননা, নির্বাচন পরিচালনা করবে যে কমিশন তাদের মনোভাব যদি সংলাপের সময়ের মতো ইতিবাচক হয়, তাহলে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা যেতেই পারে। তবে সবারই বর্তমান সাংবিধানিক বিধানের আওতায় নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতার পরিধি বিবেচনা রাখতে হবে। বিএনপি যে সব প্রস্তাবনা সংলাপে উপস্থাপন করেছে, সেগুলোর কোনো কোনোটির ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের কিছুই করার নেই। যেমন সহায়ক সরকার গঠন। বাকিগুলোও বাস্তবায়ন করতে হলে সরকারের সহযোগিতা খুবই প্রয়োজন। ফলে সরকার এসব বিষয়ে কতটুকু সহযোগিতা করবে তার ওপরই সংলাপের সফলতা নির্ভর করছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকগণ মনে করেন, বিএনপিকে আস্থায় নিতে নির্বাচন কমিশন এ পন্থা অবলম্বন করেছে, আর রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও বিএনপির প্রশংসা সে চেষ্টারই অংশ বিশেষ। কেননা, এটা এখন স্পষ্ট যে, দেশে বিদেশে কেউই আর ৫ জানুয়ারীর মতো কোনো নির্বাচন চায় না। একটি অর্থবহ নির্বাচন করতে হলে দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। আর তা করতে হলে নির্বাচন কমিশনের ইতিবাচক মনোভাব প্রদর্শন অত্যন্ত জরুরি। সংলাপ বৈঠকে নির্বাচন কমিশন সেটাই করেছে।
সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে সে নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য ও সব দলের অংশগ্রহণমূলক করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশন ও ক্ষমতাসীন সরকারের। আমাদের ক্ষমতা সীমিত-এ কথা বলে নির্বাচন কমিশনের সরকারের তল্পিবাহকের ভূমিকায় থাকা চলবে না। সরকার যাতে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ সৃষ্টিতে সম্মত হয়, নির্বাচন কমিশনকে সে পদক্ষেপ নিতে হবে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় একদল ক্ষমতায় আসবে আরেক দল বিদায় নেবে। কারোরই রাষ্ট্রক্ষমতার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত পাবার সুযোগ নেই। আর ক্ষমতার সে পালাবদল একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে হওয়াই বাঞ্ছনীয়। তাতে গণতন্ত্রের পথ চলা অন্তত হোচট খাবে না।
আমরা আশা করব, নির্বাচন কমিশন অংশীজনদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সংলাপের সারমম, অর্থাৎ দেশের রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্টজনদের পরামর্শগুলো সরকারের কাছে তুলে ধরবে এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ তৈরিতে ভূমিকা রাখবে।

প্রকাশ :অক্টোবর ১৬, ২০১৭ ২:২১ অপরাহ্ণ