স্বাস্থ্য ডেস্ক:
পুরুষদের তুলনায় নারী সার্জনের হাতে রোগীর মৃত্যুহার কম- একটি গবেষণায় এই তথ্য জানা গেছে। গবেষকরা বলেন, নারী চিকিৎসকদের মনে করা হয় বেশি দক্ষ, গাইডলাইন ফলো করায় ভালো এবং সহকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় উন্নত। গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন যে, নারী সার্জনদের দ্বারা পরিচালিত অস্ত্রোপচারে রোগীর মৃত্যুহার ১২ শতাংশ কম।
এই গবেষণায়, মহিলা সার্জন কর্তৃক ২৫টি অস্ত্রোপচারের প্রক্রিয়া চলাকালীন রোগীর ফলাফল বিশ্লেষণ এবং একই অস্ত্রোপচারের ফলাফল পুরুষ চিকিৎসকের ক্ষেত্রেও বিশ্লেষণ করা হয়। কানাডার অন্টারিওর একটি হাসপাতালে ২০০৭ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে মোট ১,০৪,৬৩০ জন রোগী এবং ৩,৩১৪ জন সার্জনের ওপর এই গবেষণা সম্পন্ন করা হয়।
ফলাফলে দেখা যায়, পুরুষদের তুলনায় নারী সার্জনদের হাতে রোগীর মৃত্যুহার কম ছিল। যদিও অস্ত্রোপচারে নারী-পুরুষ সার্জনদের মানের এই পার্থক্য খুবই কম। পুরুষ সার্জনদের ২৩০টি অস্ত্রোপচারের মধ্যে নারীদের তুলনায় মাত্র ১টি অতিরিক্ত মৃত্যু ছিল। শুধু তাই নয়, পুরুষ চিকিৎসককর্তৃক যেসব রোগীরা চিকিৎসাগ্রহণ করেছিলেন, তাদের ভবিষ্যতে জটিলতা বা আবারো হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে এমনও দেখা যায়নি।
টরন্টো ইউনিভার্সিটির নতুন এই গবেষণাপত্রের লেখকরা ধারণা করছেন যে, নারী সার্জনদের যত্ন রোগীকেন্দ্রীক বেশি ছিল, গাইডলাইনেও সচেতনা বেশি ছিল এবং সহকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় তারা সব সময় দারুণ। গবেষণায় আরো প্রমাণ মিলেছে যে, নারীরা পুরুষদের তুলনায় কম ঝুঁকি নিয়ে থাকে এবং যদি কোনো ভুল হয় সহকর্মীদের কাছ থেকে সাহায্য চাইতে বেশি আগ্রহী থাকে।
রয়াল কলেজ অব সার্জনস এর প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ক্লেয়ার মার্কস এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ডেরেক অ্যালডারসন বলেন, এই গবেষণা রোগীদের এবং স্টাফদের নারী ডাক্তারদের বিরুদ্ধে একপেশে মনোভাব পরিবর্তনে সহায়ক হবে। তারা গবেষণাপত্রের সম্পাদকীয়তে লিখেছেন: ‘এই গবেষণা পুরুষ সহকর্মীদের তুলনায় দীর্ঘদিন ধরে নারীদের দক্ষতা, নিরাপদ ও অভিজ্ঞতা নিয়ে ভুল একপেশে ধারণা মোকাবেলায় সাহায্য করবে।’ তবে তারা এটাও উল্লেখ করেন যে, ‘রোগীদেরকে তাদের চিকিৎসক নারী না পুরুষ তা নিয়ে ভীত হবার প্রয়োজন নেই।’
২০১৫ সালের একটি গবেষণায় দেখানো হয় যে, পুরুষের তুলনায় নারী চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ আড়াই গুণ কম ছিল। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন যে, নারী চিকিৎসকরা কঠোর পরিশ্রম করে কারণ তারা নিজেদের প্রমাণ করার জন্য মন থেকে তাড়া অনুভব করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নারীরা সার্জন হতে কম আগ্রহী থাকে কারণ তারা কম আত্মবিশ্বাসী হয় যে তারা সফল হবে। একজন সার্জন হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করার জন্য অন্তত ১০ বছর সময় লাগে এবং আরো ৬ বছরের বেশি সময় লাগে কনসালটেন্ট হওয়ার যোগ্যতা অর্জনে। ২০১৩ সালে ইউনিভার্সিটি অব এক্সেটারের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, নারীরা বিশ্বাসী ছিলেন যে, অস্ত্রোপচারের ক্যারিয়ার আসলে পুরুষের জন্য।