লাইফ স্টাইল ডেস্ক:
বিশেষ করে মেয়েদের দৈনন্দিন জীবন কসমেটিক্স ছাড়া যেন প্রায় অচল। না চাইলেও কিছু না কিছু কসমেটিক্স আমাদের ব্যবহার করতে হয়। তবে কখনো কখনো এই কসমেটিক্স থেকে হয়ে যায় অ্যালার্জি। প্রসাধনীর ছোঁয়ায় আমেজ যতটুকু তার চেয়েও বেশি হচ্ছে চমকের ছোঁয়া। কিন্তু এ প্রসাধনী ব্যবহারেও আছে নানা সমস্যা। বাজারে বিভিন্ন ধরনের যে প্রসাধন সামগ্রী পাওয়া যায় তা থেকে সৃষ্টি হতে পারে ত্বকের প্রদাহ, হতে পারে অ্যালার্জি। আসুন এর করণ ও প্রতিকার জেনে নিই।
প্রসাধনীজনিত প্রদাহ মূলত তিন ধরনের।
১. প্রাথমিক উত্তেজনাপ্রসূত,
২. সালোক সংবেদনজনিত,
৩. অ্যালার্জিজনিত।
কসমেটিক্স থেকে অ্যালার্জি কেন হয় :
প্রথমেই আসা যাক নেইল পলিশের কথায়। নেইল পলিশে থাকে সালফেনোমাইড এবং ফরমালডিহাইড রেজিন, যা ব্যবহারে গলায় এমনকি চোখের পাতায়ও প্রদাহের সৃষ্টি হতে পারে। আবার অনেকেরই অভ্যাস আছে নেইল পলিশ বারবার তুলে নতুন নেইল পলিশ লাগানোর। এ তোলার কাজে যা ব্যবহার করা হয় তাতে থাকে অ্যাসিটোন। উপর্যুপরি অ্যাসিটোন দ্রবণ ব্যবহারে নখের ক্ষতি হতে পারে।
চুল পাকলে অনেকে কলপ ব্যবহার করে থাকেন। চুলের কলপে থাকে প্যারাফিনাইল ডাইঅ্যামাইন। এজন্য কলপ ব্যবহারের পরপরই মাথায়, গোঁফ বা দাড়িতে অ্যালার্জির সৃষ্টি হতে পারে। এ ধরনের কলপ ব্যবহারে ত্বকে অ্যালার্জির সৃষ্টি হবে কি-না, তা কানের লতির পেছনে ২৪ ঘণ্টা লাগিয়ে রেখে পরখ করতে পারেন। উন্নত দেশের মেয়েরা মাথার চুলের রং সাদা করতে পছন্দ করে। চুলের রং সাদা করার কাজে ব্যবহূত কেমিক্যাল যেমন—পারসাইড ও অ্যামোনিয়া ব্যবহার করা হয়, তা অনেক ক্ষেত্রে উত্তেজনাজনিত প্রদাহ বা অ্যালার্জির সৃষ্টি করে থাকে।
চুল কুঁচকানো বা সোজা করা এখন বেশ জনপ্রিয়। ফ্যাশনের জন্য যেসব জিনিস ব্যবহার করা হয় তা থেকে সাধারণত কোনো প্রদাহ বা অ্যালার্জির সৃষ্টি হয় না বটে, কিন্তু এর ফলে চুল ভঙ্গুর হয়ে পড়তে পারে। চুলের জন্য বিভিন্ন স্প্রে আমরা ব্যবহার করে থাকি। এ স্প্রেতে থাকে ল্যানোলিন, যা অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে।
বাজারে আবার বিভিন্ন হেয়ার লোশন বা টনিকও পাওয়া যায়। এসব সিনকোনার টিংচার থেকে অ্যালার্জি সৃষ্টি হতে পারে। আবার সুগন্ধি পদার্থ ব্যবহারের অভ্যাস আমাদের অনেকেরই। হেয়ার লোশনের সঙ্গে এই সুগন্ধি পদার্থের ব্যবহারে আপনার ত্বকে অ্যালার্জি সৃষ্টি হতে পারে। কারণ সুগন্ধি লোশনে থাকে রিসর্সিন, কুইনাইন সালফেট ইত্যাদি। লিপস্টিকে যে রঞ্জক পদার্থ থাকে তার থেকে কিন্তু অনেকের ঠোঁটে অ্যালার্জির সৃষ্টি হয়ে থাকে। কারণ এতে ডাই এবং টেট্রা ব্রোমোফ্রোরোসিন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কাজেই যারা ঠোঁটের সমস্যায় ভোগেন তারা লক্ষ করবেন যে, লিপস্টিক ব্যবহার করার পর তা বাড়ে কি না? রূপসজ্জার জন্য অনেকেই মাশকারা, আইশ্যাডো বা আইলাইনার ব্যবহার করে থাকেন। মনে রাখবেন এর থেকেও অ্যালার্জির সৃষ্টি হতে পারে।
কোন কসমেটিক্স থেকে অ্যালার্জি হয় :
সবার ত্বক এক রকম হয় না। অ্যালার্জি আসলে ত্বকের ধরনের উপর নির্ভর করে হতে পারে। কারো কারো ঠোঁটে লিপস্টিক দিলে হয়, আবার কারো লোশন, শ্যাম্পু, সাবান থেকেও অ্যালার্জি দেখা দেয়। খুব বেশি ফেসিয়াল করালেও অ্যালার্জি হতে পারে। কাজল, চুলের রং থেকেও অনেকের অ্যালার্জি হয়।
কীভাবে বুঝবেন অ্যালার্জি হয়েছে :
ত্বকে লালচে ভাব দেখা যায়।
ত্বকে নানান রকমের গোটা ওঠে।
ত্বক খসখসে হয়ে যায়।
অনেক সময় ত্বকে কালো কালো ছোপ দাগ পড়ে।
মাথায় হলে চুলের গোড়া ভীষণ চুলকায় ও কপালের চারপাশ ফুলে ওঠে।
এর থেকে প্রতিকার পেতে হলে কী করবেন :
কসমেটিক্স কেনার আগে ভালো করে তার মেয়াদের তারিখ দেখে নিন।
সব সময় ভালো কোম্পানির পণ্য কেনার চেষ্টা করুন।
কাজলে অ্যালার্জি হলে, কাজল দেওয়ার সময় খেয়াল রাখুন তা যেন চোখের মণির থেকে বেশ দূরে দেওয়া হয়। তাহলে আর এই সমস্যা নাও হতে পারে।
যাদের ত্বক সেনসিটিভ তারা হালকা রং এবং হালকা সুগন্ধিযুক্ত পণ্য ব্যবহার করুন।
খুব বেশিক্ষণ মেকআপ করে থাকবেন না।
যে কসমেটিক্সে সমস্যা হচ্ছে বলে মনে করবেন, তার ব্যবহার সাথে সাথে বন্ধ করে দিন।
অনেক দিন ধরে ঘরে রাখা কোনো কসমেটিক্স ব্যবহার না করাই ভালো।
ত্বক সব সময় পরিষ্কার রাখবেন।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি