১৯শে জানুয়ারি, ২০২৫ ইং | ৫ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | দুপুর ১২:৩২

মিয়ানমার সেনা কর্মকর্তাদের ওপর আসছে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
মিয়ানমারের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ওয়াশিংটন, ইয়াঙ্গুন ও ইউরোপভিত্তিক বেশ কিছু কূটনীতিক ও সরকারি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ কথা জানিয়েছে।

বার্তা সংস্থাটি বলছে, এ বিষয়ে এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। ওয়াশিংটন ও ব্রাসেলস এ জন্য আরও কিছু দিন সময় নিতে পারে। রাখাইনে সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সহায়তা বাড়ানোরও আলোচনা চলছে।

প্রসঙ্গত, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চলমান সহিংসতার কারণে এ পর্যন্ত সাড়ে ৫ লাখের মতো রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। এখনও প্রতিদিন অন্তত দুই হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে। জাতিসংঘ মনে করছে, আবারো বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢল নামতে পারে।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ, ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, কানাডা ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনসহ বিশ্বের সোচ্চার মানুষ এই সহিংসতা বন্ধের বার বার দাবি জানালেও তাতে কর্ণপাত করেনি মিয়ানমার সেনাবাহিনী। তাই এ ধরনের সিদ্ধান্তের কথা ভাবছে পশ্চিমা বিশ্ব।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এক মাস আগেও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি আলোচনায় ছিল না। এতেই প্রমাণিত হয়, মিয়ানমারে ঘরবাড়ি ছেড়ে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে যাওয়া পশ্চিমা নীতিনির্ধারকদের কতোটা চাপে ফেলেছে।

তারা বলছেন, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে সেনা সদস্যরা নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মানুষ মারছে, ঘটছে ধর্ষণের ঘটনা। এই হত্যাযজ্ঞ ঠেকাতে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির সমালোচনা চললেও অনেক পশ্চিমা কূটনীতিক দেশটিতে তার নেতৃত্বের বিকল্প দেখছেন না।

পাঁচ দশকের বেশি সময় সেনা শাসনে থাকা মিয়ানমারে গত বছরের নির্বাচনে জয়ী হয়ে সু চির দল এনএলডি সরকার গঠন করলেও এখনও স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষাসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয় দেশটির সেনাবাহিনীর হাতে।

ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা আগামী ১৬ অক্টোবর মিয়ানমার নিয়ে আলোচনায় বসবেন। তবে এই বৈঠকেই নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ আসবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
নেদারল্যান্ডসের উন্নয়ন সহযোগিতা বিষয়ক মন্ত্রী উলা তুয়ারেস রয়টার্সকে বলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওপর আরও চাপ প্রয়োগের জন্য কোপেনহেগেন সংকটটি আলোচ্য সূচিতে আনার চেষ্টা চলছে।
মিয়ানমার নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের আলোচনা সম্পর্কে অবগত যুক্তরাষ্ট্রের দুইজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ মিন অং হ্লাইংসহ বেশ কয়েকজন জেনারেল এবং রোহিঙ্গা গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ থাকা রাখাইনের বৌদ্ধ নেতাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে।

নিষেধাজ্ঞা আরোপ হলে তাদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সম্পদ জব্দ, যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষিদ্ধ এবং এদের সঙ্গে আমেরিকানদের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

বিষয়টি নিয়ে ইউরোপ, জাপান ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনার কারণে ওয়াশিংটন এ বিষয়ে সাবধানতার সঙ্গে এগোচ্ছে বলে জানান ওই কর্মকর্তারা।

ইয়াঙ্গুনে নিয়োজিত এক জ্যেষ্ঠ ইউরোপিয়ান কূটনীতিক বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো এই সংকট মোকাবেলা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছে। তারা এ বিষয়ে একমত যে, সমস্যার মূলে সেনাবাহিনী এবং বিশেষত কমান্ডার ইন চিফ, যেকোনো শাস্তিমূলক পদক্ষেপে যাকে টার্গেট করা দরকার।

ইয়াঙ্গুনভিত্তিক কূটনীতিকরা বলছেন, আলোচনার দ্বার খোলা রাখার জন্য প্রথম পর্যায়ে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ প্রতীকী হতে পারে।

উদাহরণ দিয়ে তারা বলেন, গত বছর ব্রাসেলস, বার্লিন ও ভিয়েনা সফর করা সেনাপ্রধানের পরবর্তীতে ইউরোপ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হতে পারে।

১৮ মাস আগে সু চি ক্ষমতায় আসার পর মিয়ানমারের সঙ্গে পশ্চিমাদের সম্পর্কে উষ্ণতা দেখা দিলেও চীনের তুলনায় এখনও তা তেমন জোরালো নয় বলে স্বীকার করেন কূটনীতিকরা।

প্রসঙ্গত, মিয়ানমারে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের তেমন বিনিয়োগ নেই, সামরিক সংশ্লিষ্টতাও কম।

এ ছাড়া কোনো পদক্ষেপ নিলে তা সু চি ও সেনাবাহিনীর সম্পর্কে সমস্যা তৈরি করবে কি না তা নিয়েও তাদের দুশ্চিন্তা রয়েছে।

মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ নিয়ে ব্রাসেলসভিত্তিক এক ইইউ কূটনীতিক বলেন, অবস্থার উন্নতি না হলে মিয়ানমারের উন্নয়নে কোনো বিনিয়োগ করবে না ইউরোপীয় কমিশন। তিনি বলেন, ‘অস্ত্র বাণিজ্যে নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। আমরা নিয়মিত আলোচনা করি, আমাদের কি মিয়ানমারে সংস্কারের পুরস্কার দেওয়া উচিত এবং ধীরে ধীরে ওই নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা উচিত, নাকি উল্টোটা করা উচিত।’

উল্লেখ্য, সেনাবাহিনী প্রত্যক্ষভাবে দেশ শাসন থেকে সরে আসার পর ২০১২ সালে মিয়ানমারের ওপর থেকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে ইইউ। তবে নব্বইয়ের দশক থেকে চলে আসা অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা এখনও রয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের ওপর থেকে বেশিরভাগ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা রেখেছে।

ওয়াশিংটনে নিয়োজিত যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা বলেন, নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা না থাকলেও নভেম্বরের প্রথমার্ধে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এশিয়া সফর পর্যন্ত মিয়ানমার নিয়ে একটি কর্মপরিকল্পনায় পৌঁছানোর আশা করছে ওয়াশিংটন।

তিনি বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে একটি কড়া বার্তা দিতে চাইছে প্রশাসন। কিন্তু খুব দ্রুত কোনো পদক্ষেপ দেশটির ওপর চীনের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব আরও বাড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ করে দেয় কি না তা নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে।

তবে আবারও মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বৃহৎ পরিসরে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে প্রশাসনে তেমন সমর্থন নেই।

রয়টার্সের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে অভ্যন্তরীণ ভাবনা জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করেনি হোয়াইট হাউজ।

দৈনিক দেশজনতা / এম জে

প্রকাশ :অক্টোবর ৯, ২০১৭ ১২:৩০ অপরাহ্ণ