রংপুর প্রতিনিধি:
কুকুর নিধনে এখন পর্যন্ত রংপুর সিটি কর্পোরেশনের দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম দেখা যায়নি। এতে করে নগরীতে প্রতিনিয়ত বেওয়ারিশ কুকুরের আক্রমণে আহত হচ্ছেন পথচারীসহ নগরবাসী। তাই আহত ব্যক্তি ও অভিভাবকরা কুকুর নিধনে সিটি কর্পোরেশনের অভিযান চালু করার দাবি জানিয়েছেন।
রংপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল মোড়, পিটিসি মোড়, পর্যটন মোড়, আইডিয়াল মোড়, মেডিকেল মোড়, সিও বাজার মোড়, ধাপ পুলিশ ফাঁড়ি মোড়, ধাপ লালকুঠির মোড়, সার্কিট হাউজ মোড়, হাজির হাট চৌরাস্তার মোড়, বুড়িহাট মোড়, শিরিন পার্ক মোড়, বাংলাদেশ ব্যাংকের মোড়, কাচারি বাজার মোড়, সিটি বাজার মোড়, সুপার মার্কেট মোড়, বেতপট্টি, পায়রা চত্বর, জাহাজ কোম্পানি মোড়, ফায়ার সার্ভিস মোড়, শালবন মন্ত্রীপাড়া, বেগম রোকেয়া সরকারি কলেজ মোড়, আরসিসি মোড়, বোতলার মোড়, কামাল কাছনা বাজার, পূর্ব কামাল কাছনা বাজার, সিগারেট কোম্পানি মোড়, শাপলা চত্বর, চামড়া পট্টিসহ নগরীর বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দলবদ্ধভাবে কুকুরের অবস্থান লক্ষ করা গেছে। অবস্থানরত ওইসব কুকুর রাতে ও সকালে পথচারীদের পথরোধ করে আক্রমণ করছে। পরিসংখ্যানে শিশু ও বৃদ্ধ ব্যক্তির সংখ্যা বেশি বলে জানা গেছে।
রংপুর সিভিল সার্জন অফিসের ইপিআই স্টোর সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ মাসে নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে কুকুরের কামড়ে আহত হয়েছে ৬৬০ জন। আহত ওইসব ব্যক্তি র্যাবিক্স ভিসি ভ্যাকসিন (জলাতঙ্ক) রোগের টিকা গ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধের সংখ্যা বেশি। সিভিল সার্জন অফিসের ইপিআই স্টোরে চিকিৎসা নিতে আসা সদর উপজেলার চন্দনপাট ইউনিয়নের সাহাবাজপুর এলাকার দীপ্তি রানি বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে আমার মেয়ে খুশি মনি (৫) বাড়ির উঠানে খেলতেছিল। হঠাৎ করে কুকুর খুশির ঘাড়ের ওপর কামড় দিয়ে চলে যায়। পরে খুশিকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করি। তিনি জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভ্যাকসিন না থাকায় সদর হাসপাতালে ভ্যাকসিন নিতে এসেছি।
এদিকে সদর হাসপাতালে (জলাতঙ্ক) রোগের ভ্যাকসিন নিতে আসা নগরীর ডিমলা মাহিগঞ্জ এলাকার চাল ব্যবসায়ী নওশেদ আলী (৪০) জানান, রাতে ব্যবসার কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে ডিমলা মাহিগঞ্জের ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কাছে পৌঁছামাত্র রাস্তায় থাকা বেশ কয়েকটি কুকুর আক্রমণ করে তাকে কামড় দেয়। নগরীর ধর্মদাস পাড়ার মালতি বেগম বলেন, আমার ছেলে বাবলু মিয়া (৭) স্কুল থেকে বাড়ি আসার পথে রাস্তায় কুকুর আক্রমণ করে আহত করে। স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভ্যাকসিন না পাওয়ায় রংপুর সদর হাসপাতালে এসেছি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্রতি বছর সিটি কর্পোরেশন ও ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে কুকুর নিধন করা হতো। কিন্তু এ বছর এখন পর্যন্ত কুকুর নিধন করতে দেখা যায়নি।
রংপুর সিভিল সার্জন অফিসের পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারী কর্মকর্তা সুলতানা বেগম জানান, গত ৬ মাসে সদর হাসপাতালের ইপিআই স্টোর থেকে কুকুর কামড়ানো ৫৬০ জন রোগী (জলাতঙ্ক) ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন। রংপুর সিটি কর্পোরেশনের স্যানেটারি ইন্সপেক্টর আব্দুল কাইয়ুম জানান, গত ৬ মাসে নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে কুকুরের কামড়ে আহত ৫৩১ জনকে র্যাবিক্স ভিসি ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। ভ্যাকসিন যাতে সবাই পায় সে জন্য মাঠকর্মীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
রংপুর সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের প্রধান মিজানুর রহমান মিজু জানান, কুকুর নিধন করা হচ্ছে না এটা সঠিক নয়। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে কুকুর নিধনের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে নিধন কর্মসূচি আপাতত বন্ধ রয়েছে। তিনি জানান, নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে কুকুর নিধনের জন্য অভিযোগ দিয়েছে নগরবাসী। রংপুরের সিভিল সার্জন ডা. আবু মো. জাকিরুল ইসলাম জানান, কুকুরের কামড়ে আহতরা যাতে সঠিকভাবে চিকিৎসা নিতে পারে সে জন্য সরকারিভাবে ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া আহতদের পরবর্তী নিয়ম বলে দেয়া হচ্ছে।
রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু বলেন, নগরীতে বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে কুকুর নিধন করা হচ্ছে না।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি