স্বাস্থ্য ডেস্ক:
গৃহযুদ্ধে জর্জরিত ইয়েমেনে কলেরার ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব ঘটেছে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। আফ্রিকার আরও কয়েকটি দেশে কলেরা ছড়িয়ে পড়েছে। পানিবাহিত এই রোগের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে গড়ে প্রায় এক লাখ লোক মারা যায়।
কলেরার প্রাদুর্ভাব কমাতে এবার একসঙ্গে নামার প্রত্যয় ব্যক্ত করছে বিশ্ব। গত মঙ্গলবার এ লক্ষ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) একটি পথনকশা (রোডম্যাপ) ঘোষণা করে। গতকাল বুধবার আলোচনায় ফ্রান্সে জড়ো হয় বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও দাতা সংস্থাগুলো। লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে কলেরায় মৃত্যুর হার ৯০ শতাংশ কমিয়ে আনা।
পর্যবেক্ষকদের মন্তব্য হচ্ছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলগুলোতে কলেরার প্রাদুর্ভাব বেশি লক্ষ্য করা যায়। সেখানে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, নিরাপদ পানি সরবরাহে বাধার কারণে কলেরা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৫ সালের মার্চ থেকে চলা এই গৃহযুদ্ধে ইয়েমেনের স্বাস্থ্য, পানি ও পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনে প্রায় আট লাখ লোক কলেরায় আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছে দুই হাজার মানুষ। এর মধ্যে শিশু রয়েছে অনেক। মৃত ব্যক্তির সংখ্যা আরও বাড়বে বলে হুঁশিয়ার করেছে বিভিন্ন সংস্থা।
ভিব্রিও কলেরা নামের ব্যাকটেরিয়ার পানি ও খাদ্যে প্রবেশের কারণে কলেরা ছড়ায়। নোংরা ও আবদ্ধ জায়গায় দ্রুত ছড়ায় এই রোগ। যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে ভারতে বছরে ৬ লাখ ৭৫ হাজারের বেশি লোক কলেরায় আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে মারা যায় ২০ হাজারের বেশি লোক। ইথিওপিয়ায় বছরে ২ লাখ ৭৫ হাজারের বেশি লোক আক্রান্ত হয়। মারা যায় প্রায় সাড়ে ১০ হাজার। নাইজেরিয়ায় বছরে ২ লাখ ২০ হাজারের বেশি কলেরা আক্রান্ত রোগীর মধ্যে আড়াই হাজারের বেশি মারা যায়।
বাংলাদেশে পালিয়ে আসা পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রয়েছে। তাদের মাঝেও কলেরার প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে শরণার্থীর শিবিরগুলোতে প্রায় ৯ লাখ কলেরার টিকা পাঠানো হয়েছে।
কলেরা চিকিৎসা খুব বেশি ব্যয়সাধ্য নয়। প্রয়োজন উদ্যোগ এবং সচেতনতা। ডব্লিউএইচওর কলেরাবিষয়ক প্রধান ডা. ডমিনিক লেগরস বলেন, ‘প্রতিবছর কলেরার প্রাদুর্ভাব দেখতে চাই না আমরা। প্রতিরোধের উপায় আছে আমাদের। এখনই তা ব্যবহার করা উচিত। যদি আমরা নিরাপদ পানি ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে কলেরা ছড়িয়ে পড়া রোধ সম্ভব।’
সূত্র: বিবিসি
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ