নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) প্রবীণ নেতা কমরেড জসিম উদ্দিন মণ্ডল আর নেই। সোমবার ভোর ছয়টার দিকে রাজধানীর পান্থপথের হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। কমরেড জসিম উদ্দিন মণ্ডল ব্যক্তিজীবনে এক ছেলে ও পাঁচ মেয়ের বাবা। ছেলে বছর দেড়েক আগে মারা গেছেন। পাঁচ মেয়ের মধ্যে তিনজনের স্বামীই মৃত। ছোট মেয়ে আলো মণ্ডল কুষ্টিয়ায় বিয়ের বছর দেড়েক পর ১৯৮৬ সালে স্বামী মারা গেলে বাবার বাড়িতেই বসবাস করতেন। চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি জসিম মণ্ডলের স্ত্রী জাহানারা খাতুন মারা যান। জসিম উদ্দিন মণ্ডলের মেয়ে আসমা আলো খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন তারা বাবা। হঠাৎ করে বেশি অসুস্থ হলে গত ২৮ সেপ্টেম্বর তাকে রাজধানীর হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর রোববার তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানেই সোমবার সকালে বাবার মৃত্যু হয়। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সংগঠক জসিম উদ্দিন মণ্ডলের মৃত্যুতে সিপিবিসহ কমিউনিস্ট ও বামপন্থী রাজনৈতিক মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
তার মৃত্যুতে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম গভীর শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন। সিপিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কমরেড জসিম উদ্দিন মণ্ডলের মরদেহ আজ বারডেমের হিমঘরে রাখা হবে। আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টায় তার মরদেহ রাজধানীর পুরানা পল্টনের সিপিবির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নেওয়া হবে। পরে সেখান থেকে বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সবার শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে।
কমরেড জসিম উদ্দিন মণ্ডল ১৯২২ সালে নদিয়া জেলা (বর্তমান কুষ্টিয়া) দৌলতপুর থানাধীন খালিদাসপুর গ্রামে নানার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। রাজনীতির হাতেখড়ি কলকাতায়। ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন, তেভাগা আন্দোলনে তার সক্রিয় ভূমিকা ছিল। ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানসহ স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এরশাদের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও জসিম উদ্দিন মণ্ডলের সক্রিয় ভূমিকা ছিল। ১৯৪০ সালে তিনি কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। রাজনৈতিক কারণে তিনি প্রায় ২৩ বছর জেল খেটেছেন। জসিম উদ্দিন মণ্ডলের বাবা মরহুম হাউস উদ্দিন মণ্ডল রেলওয়েতে চাকরি করতেন। সে সুবাদে বাংলাদেশ-ভারতসহ বিভিন্ন এলাকায় তার শৈশব-কৈশোর কেটেছে। বাবার চাকরির সুবাদে জসিম মণ্ডলের ঈশ্বরদীর একটি বিদ্যালয়ে স্কুলজীবন শুরু হয়। পরে তার বাবা বদলি হয়ে শিয়ালদহে চলে যান। শিয়ালদহে গিয়ে তার আর পড়ালেখা হয়নি। সেখানকার নারিকেলডাঙ্গা রেল কলোনিতে বসবাসের সময় মিছিল-মিটিং দেখতে দেখতেই এই বিপ্লবী রাজনৈতিক দীক্ষা গ্রহণ করেন।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি