দৈনিক দেশজনতা ডেস্ক:
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্সে সমন্বয় ও সমতা আনায় বিপাকে পড়েছে রাজধানীর অনেক বাড়িওয়ালা। নব্বই সালের বাড়িভাড়ার হিসেবে এতোদিন দিয়ে আসা হোল্ডিং ট্যাক্স এখন বর্তমান ভাড়ায় সমন্বয় হচ্ছে বলে ক্ষেত্রবিশেষে ট্যাক্স বেড়েছে তিন থেকে দশ গুণ। উপায় খুঁজতে সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক অফিসগুলোতে ধরণা দিচ্ছেন বাড়িওয়ালারা। তারা অভিযোগ করছেন, হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর হার অস্বাভাবিক।
সিটি করপোরেশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘ ২৭ বছর হোল্ডিং ট্যাক্সে বাড়ানো এবং সমতায় আনা সম্ভব হয়নি। এ দীর্ঘ সময় হোল্ডিং সংখ্যাও জরিপ করা হয়নি। কাজেই এখন এটি করার উদ্যোগ নেয়া খুবই যৌক্তিক। তাছাড়া সিটি করপোরেশনকে যেসব বাড়ির মালিক হোল্ডিং ট্যাক্স দিচ্ছেন, তারাও নানা ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।
২০০৩ ও ২০০৮ সালে দুই দফায় কিছু পরিমাণে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানো হয়। তবে এ বর্ধিত হোল্ডিং শুধু ২০০৩ ও ২০০৮ সালের পর যেসব বাড়ি নিবন্ধিত হয়েছে, সেসব বাড়ির মালিকরাই দিচ্ছেন। একই শহরে থেকে কেউ হোল্ডিং ট্যাক্স বেশি দিচ্ছেন আবার কেউ কম দিচ্ছেন। অর্থাৎ বাড়ির মালিকরা একেকজন একেক রকম হোল্ডিং ট্যাক্স দিচ্ছেন। এটা বৈষম্য। এ অবস্থা চলতে পারে না। এই বৈষম্যের কথা বলছেন বাড়ির মালিকরাও। যেসব বাড়ির মালিক বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন, তারা নিয়মিতই সিটি করপোরেশনে যোগাযোগ করছেন। অনেক সময় রাজস্ব বিভাগের লোকজনের সঙ্গে বাক-বিতন্ডায়ও লিপ্ত হচ্ছেন তারা। এ বৈষম্য কমাতেই হোল্ডিং ট্যাক্স সমন্বয় করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা আরো বলেন, বাড়ির মালিক নিজে বসবাস করলে, লোন থাকলে ছাড় পাওয়া যায়। এছাড়া আপিল এবং আবার রিভিউ করলে মোটা অংকের টাকা কমে যায়। আর যাদের এসব বিষয় নেই তাদের ট্যাক্সটা খানিকটা বেশি হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বৈষম্যের কোনো সুযোগ নেই।
রাজস্ব বিভাগ সূত্র জানায়, মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন (ট্যাক্সেশন) রুলস ১৯৮৬-এর পঞ্চবার্ষিকী সাধারণ মূল্যায়ন নীতি অনুসারে প্রতি পাঁচ বছর পরপর মূল্যায়নের মাধ্যমে হোল্ডিং ট্যাক্স সমন্বয় করার কথা। কিন্তু ১৯৮৯-৯০ সালের পর তা করা হয়নি। এতে রাজধানীতে এই দীর্ঘ সময় হোল্ডিং ট্যাক্স সমন্বয় না করায় করদাতাদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। সমন্বয়ের মাধ্যমে পুরনো হারে নির্ধারণ করা বাড়ির মালিকদের কর বাড়িয়ে নতুনদের সমান করার ফলে রাজধানীর অনেক বাড়ির মালিকের কর বাড়বে। সিটি করপোরেশনের আয়ও সে হারে বাড়বে।
বাড়িওয়ালারা বলছেন, হঠাৎ করে একসঙ্গে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোয় বিপাকে পড়েছেন তারা। এতে বাড়িভাড়ার ওপর প্রভাব পড়বে বলে তারা মনে করেন। দক্ষিণ সিটির আরামবাগের বাসিন্দা আব্দুর রহমানের সঙ্গে আলাপ করলে তিনি বলেন, ‘সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে এ ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে। এতে ঘরভাড়া বাড়ানোসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব পড়বে, সৃষ্টি হবে বিশৃঙ্খলা। আগে আমার বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স ধরা হয়েছিল ১৮ হাজার টাকা। কিন্তু এখন সেই ট্যাক্স হয়ে গেছে ৬০ হাজার টাকা। একবারে এত টাকা বাড়িয়ে আমাদের ওপর জুলুম করা হয়েছে, বিষয়টি মেয়রের দেখা উচিত।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শান্তিনগরের এক বাসিন্দা বলেন, ‘আগে আমাদের হোল্ডিং ট্যাক্স ছিল ১০ হাজার টাকা। এবার ধার্য করা হয়েছে ৯৮ হাজার টাকা। চাল-ডাল থেকে সবকিছুর দামই বাড়তি হয়ে গেছে। তার ওপর এভাবে ট্যাক্স বাড়ানোর কারণে এখন আমাদেরও ভাড়াটিয়াদের ভাড়া বাড়িয়ে দিতে হবে, এ ছাড়া উপায় নেই।’
জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা রবীন্দ্র বড়ুয়া বলেন, ‘আসলে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানো হয়নি। হোল্ডিং ট্যাক্স যা আছে তা বর্তমান বাড়িভাড়ার সঙ্গে নতুন করে সমতা করা হচ্ছে। ১৯৯০ সালের পরে এখন পর্যন্ত হোল্ডিং ট্যাক্স অ্যাসেসমেন্ট করা হয়নি। অনেকের হোল্ডিং ট্যাক্স দীর্ঘদিন সমতা করা হয়নি, এখন সেটা করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আইন আছে। তার পরও কোনো ব্যত্যয় হয়ে থাকলে আপিল বোর্ড আছে। সেখানে পুনর্বিবেচনার সুযোগ আছে। সুতরাং এ নিয়ে আতঙ্কিত ও বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ