২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ভোর ৫:৩০

তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতি হোসেনি দালানে

নিজস্ব প্রতিবেদক:

১০ মহররম মুসলিম বিশ্বে ত্যাগ ও শোকের দিন। হিজরি সাল অনুসারে ১০ মহররমকে আশুরা বলা হয়। ঘটনাবহুল এই দিনে বর্তমান ইরাকের অন্তর্গত কারবালা প্রান্তরে মুয়াবিয়ার হাতে শহীদ হন বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর দৌহিত্র ইমাম হোসেন (রা.)। তাঁর মৃত্যুর দিনটিকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন মুসলমানরা। সারাবিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশের মুসলমানরাও যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করে। বিশেষ করে ইমাম হোসেনের মৃত্যুর প্রতীকী শোক পালন করতে প্রতিবছরতাজিয়া মিছিল বের করে ইমামবাড়াগুলো।

রাজধানীতে আশুরা উপলক্ষে সবচেয়ে বড় আয়োজন করা হয় পুরান ঢাকায় হোসেনি দালানে। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও সেখান থেকে বের করা হবে তাজিয়া মিছিল। রবিবার সকালে বিশাল একটি তাজিয়া মিছিল বের করা হবে। হাজারো মানুষ এই শোক মিছিলে ‘হায় হোসেন-হায় হোসেন’ মাতম তুলে অংশ নেবে। কারবালার সেই মর্মান্তিক শোকের স্মৃতি নিয়ে তাজিয়া মিছিলের জন্য এখন প্রস্তুত হোসেনি দালান।

তবে কারবালার রক্তাক্ত স্মৃতির স্মরণে অন্যান্যবার নিজের দেহে ছুরি দিয়ে আঘাত করে রক্ত ঝরিয়ে মাতম করা হয়। কিন্তু গতবারের ন্যায় এবারও পুলিশের অনুরোধ ও হোসেনি ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন যৌথ উদ্যোগে নিরাপত্তার স্বার্থে ছুরি দিয়ে মাতম করা হবে না বলে জানা গেছে।

তাজিয়া মিছিলের মূল দায়িত্বে থাকে হোসেনি ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন। তাজিয়া মিছিল প্রসঙ্গে অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক এম এম ফিরোজ হোসাইন বলেন, ‘আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। তাজিয়া নিয়ে বের হওয়ার বিষয়টি সময়ের ব্যাপার মাত্র। আশা রাখি আমাদের যে আশুরার শোক মিছিল সেটা আমরা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পালন করতে পারব।’

তাজিয়া মিছিল সাজানো হবে পুরো কারবালার শোকের নানা প্রতিকৃতি নিয়ে। মিছিলে যারা অংশ নিবেন তাদের হাতে দেখা যাবে জরি লাগানো লাল আর সবুজ নিশান, মাথায় শোকের কালো কাপড়। মিছিলের শুরুতেই দুটি কালো গম্বুজ বহন করা হয় বিবি ফাতেমার স্মরণে। কারবালার স্মরণে কালো চাঁদোয়ার নিচে কয়েকজন বহন করেন ইমাম হোসেনের (রা.) প্রতীকী কফিন।  মিছিলের সামনে থাকে ইমাম হাসান ও ইমাম হোসেনের দুটি প্রতীকী ঘোড়া। একটিকে রঙ নিয়ে রক্তের রূপ দেওয়া হয়। ইমাম হোসেন যখন কারবালায় যান, তখন এক রকম থাকে, আবার যুদ্ধের শেষে রক্তে ভিজে ঘোড়া ফিরে আসে। এই অবস্থা তুলে ধরা হয় এর মধ্য দিয়ে। এছাড়া মিছিলের অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন নিশান নিয়ে আসেন। যে যার মতো এই নিশান বহন করেন।

ইমামবাড়া ছাড়াও পুরান ঢাকার ফরাশগঞ্জের বিবিকা রওজা, ফার্মগেট, পুরানা পল্টন, মগবাজার, মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প ও মিরপুর ১১ নম্বরে বিহারি ক্যাম্প থেকে তাজিয়া মিছিল বের করবে শিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন।

ফিরোজ হোসাইন  বলেন, ‘১০ মহররম সকাল ১০টায় হোসেনি দালান ইমামবাড়ি থেকে তাজিয়া মিছিল শুরু হবে। মিছিলটি ইমামবাড়ি হয়ে লালবাগ, নীলক্ষেত এবং ধানমণ্ডি ২ নম্বর সড়ক হয়ে বিজিবি গেটের বিপরীত প্রান্তে গিয়ে শেষ হবে।’

অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এবার শিয়া মুসলিমদের তাজিয়া মিছিলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার এবং তাজিয়া মিছিলে সকল প্রকার ধাতব বস্তু বহন, জিঞ্জির, দা-ছুরি-তলোয়ার, ঢোল-লাঠিখেলা এবং আগুন খেলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।

হোসেনি ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের পরিচালক জানান, সুষ্ঠুভাবে তাজিয়া মিছিল সম্পন্নের জন্য দুটি আর্চওয়ে, নয়টি মেটাল ডিটেক্টর, চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া, নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক ও পর্যাপ্ত লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে ফিরোজ হোসাইন  বলেন, ‘নিরাপত্তার ব্যাপার নিয়ে সরকার পক্ষ থেকে জিরো টলারেন্স রাখা হয়েছে। তিন ধাপে নিরাপত্তা রাখা হয়েছে। দেহ তল্লাশিসহ নিরাপত্তার খাতিরে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা প্রশাসন দপ্তর থেকে নেওয়া হয়েছে। ইন এডিশান আমাদের নিজস্ব ইন্টারনাল সিকিউরিটি আগের চেয়ে আরও উন্নত করা হয়েছে। দুটি আর্চওয়ে, নয়টি মেটাল ডিটেক্টর, চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া এবং আমাদের নিজস্ব প্রায় দুই’শ সেচ্ছাসেবক সিকিউরিটি সিস্টেমের জন্য কাজ করছে।’

নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া  বলেন, ‘তাজিয়া মিছিলসহ মহররমের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নিরাপত্তার জন্য রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। হোসেনি দালান, বিবিকা রওজাসহ রাজধানীর বিভিন্ন ইমামবাড়ায় পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। এবার যারা মিছিলে অংশ নেবেন, তারা মিছিলের শুরুর স্থানে এসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তল্লাশির পর অংশ নেবেন। পথের মাঝখান থেকে কেউ মিছিলে যোগ দিতে পারবেন না।’

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর আশুরায় তাজিয়া মিছিলে প্রস্তুতির সময় হোসেনি দালানের সামনে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এতে একজন নিহত ও শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। এ কারণে, গত বছরের ন্যায় এবারও কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী দিয়ে পুরো হোসেনি দালান ঘিরে রেখেছে পুলিশ ও র‌্যাব। হোসেনি দালানের প্রবেশ মুখে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে। পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক দল সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার কাজ করে যাচ্ছে

প্রকাশ :সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৭ ৭:৫৬ অপরাহ্ণ