গবেষণায় চুরির অভিযোগে টিভি উপস্থাপিকা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ এবং সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সামিয়া রহমানসহ ৫ শিক্ষকের বিরুদ্ধে ২টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বুধবার রাতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের এক সভায় এ কমিটি গঠন করা হয়।এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) এবং দুটি তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ বলেন, ‘আমরা শিগগিরই তদন্ত কাজ শুরু করব। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।’ উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। তাদের দেয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী আমরা এ বিষয়ে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করব।’
একাধিক সিন্ডিকেট সদস্য জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সামিয়া রহমান ও অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানের যৌথ গবেষণা প্রবন্ধে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ এসেছে। সামিয়া রহমান একটি বেসরকারি টেলিভিশনে হেড অব কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স হিসেবে পূর্ণকালীন চাকরি করছেন। সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক ছাত্র মারজানও একটি বেসরকারি টেলিভিশনে কাজ করেছেন।
সিন্ডিকেট সূত্র জানায়, বিদেশি একটি জার্নালের পক্ষ থেকে তাদের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির ওই অভিযোগ আসে। শিকাগো জার্নালের পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে ওই অভিযোগ পাঠানো হয়। জার্নালটির অভিযোগে বলা হয়- পৃথিবী বিখ্যাত দার্শনিক মিশেল ফুকোর লেখা ‘দ্যা সাবজেক্ট অ্যান্ড পাওয়ার’ শীর্ষক আর্টিকেলটি ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো প্রেস (১৯৮২) প্রকাশ করে। সেই প্রবন্ধের পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা নকল করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই দুই শিক্ষকের গবেষণা প্রবন্ধে।
এ বিষয়ে সামিয়া রহমান বলেন, ওই লেখাটিতে অনুমতি ছাড়াই মারজান আমার নাম ব্যবহার করেছে। এ বিষয়ে আমি লিখিতভাবে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের তৎকালীন ডিন অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকেও অবহিত করেছি। যার কপিও আমার কাছে রয়েছে। আর আমি যদি প্রধান লেখক হয়ে থাকি তাহলে তো আমার মেইল থেকেই লেখাটি যাওয়ার কথা। কিন্তু এক্ষেত্রে সেটিও হয়নি। অনুমতি ছাড়া নাম ব্যবহারের কারণ আমি মারজানের কাছে জানতে চেয়েছি। সে প্রত্যুত্তরে নিজের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছে। এই লেখার সঙ্গে আমার কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই।
এ ব্যাপারে সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজান বলেন, সামিয়া রহমান আমার শিক্ষক ছিলেন। তিনি ছিলেন ওই লেখার প্রধান লেখক ও যোগাযোগকারী। আমি ছিলাম দ্বিতীয় লেখক। এই আর্টিকেলে বড় অংশের কাজ তিনিই করেছেন- সেই প্রমাণ আমার কাছে আছে।
সিন্ডিকেট সূত্র আরও জানায়, গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ এসেছে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষক রুহুল আমিন ও নুসরাত জাহান এবং বদরুজ্জামান ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে। সিনিয়র একজন শিক্ষক উপাচার্যকে চিঠি দিয়ে রুহুল আমিন ও নুসরাত জাহানের প্রকাশিত প্রবন্ধগুলোর মধ্যে মিল খুঁজে পাওয়ার অভিযোগ করেন। সেখানে তাদের একই লেখা কয়েকটি প্রবন্ধে প্রকাশ করা হয়েছে। পরে বদরুজ্জামানের বিরুদ্ধে পিএইচডি থিসিসে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ করেন চৌর্যবৃত্তির অভিযোগে অভিযুক্ত শিক্ষক নুসরাত জাহান। এই দুটি পৃথক অভিযোগের তদন্ত একটি কমিটি করবে।
সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরিন আহমাদকে প্রধান করে এই দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
সিন্ডিকেট সূত্র জানায়, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সামিয়া রহমান ও ক্রিমিনোলজি বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানের যৌথ গবেষণা প্রবন্ধে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়।
কমিটিতে রয়েছেন- উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ (কমিটি প্রধান), সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. খন্দকার বজলুল হক ও অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম এবং তথ্য, বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস এম জাবেদ আহমদ।
দ্বিতীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষক রুহুল আমিন ও নুসরাত জাহান এবং বদরুজ্জামান ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির দুটি অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য। উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদকে প্রধান করে গঠিত এই কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান, তথ্য, বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস এম জাবেদ আহমদ, সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা এবং ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ