স্বাস্থ্য ডেস্ক:
কসমেটিকস বা প্রসাধনী পণ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিকের ব্যবহার বন্ধের দাবি দীর্ঘদিনের। লিপস্টিক, মাশকারা, ফেয়ারনেস ক্রিম থেকে শুরু করে সাবান, শ্যাম্পু মায় টুথপেস্টেও যদি স্বাস্থ্যহানিকর সব রাসায়নিক মেশানো থাকে তাহলে আমরা যাব কোথায়? এমনকি তথাকথিত হারবাল ও অর্গানিক প্রসাধনীও ক্ষতিকর রাসায়নিক থেকে পুরোপুরি মুক্ত নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিত এমন প্রসাধনী ব্যবহারে নানা জটিল অসুখ-বিসুখ থেকে শুরু করে মরণব্যাধি ক্যানসারও হতে পারে।
প্যারা-ফেনিলেনেডিয়ামাইন, মারকারি ও লিড :
হেয়ার ডাই, হেয়ার কালার, লিপস্টিক ও মাশকারায় ব্যবহার করা হয় এসব রাসায়নিক। সাধারণ দোকান থেকেই কিনুন কিংবা কোনো অভিজাত সেলুন থেকে, চুলের রং কেনার আগে দেখে নিন মোড়কের গায়ে প্যারা-ফেনিলেনেডিয়ামাইন (পিপিডি) উপাদান ব্যবহারের কথা লেখা আছে কি না, থাকলে সেটা না কেনারই পরামর্শ দেবেন চিকিৎসকেরা। আজকাল এমনকি বাজারের নানা মেহেদিতেও ব্যবহার করা হচ্ছে এ রাসায়নিক। ‘পিপিডির মতো মারাত্মক ক্ষতিকর রাসায়ানিক চুলের রঙে ব্যবহার করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন এসব পণ্য ব্যবহারে মস্তিষ্কের ক্ষতি হতে পারে।’
প্যারাবেনস : ময়েশ্চারাইজার, স্কিন স্ক্রাব ও ডিওডেরান্ট :
প্রসাধনী শিল্পের বেশির ভাগ পণ্যেই স্থায়িত্বের জন্য বা ‘প্রিজারভেটিভ’ হিসেবে প্যারাবেনস নামের একটি স্বাস্থ্যহানিকর রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। নানা ধরনের ময়েশ্চারাইজার, স্কিন স্ক্রাব ও ডিওডেরান্টে প্যারাবেনসের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি।
ক্ষতিকর এই রাসায়নিকটি স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। এছাড়া রিপ্রোডাকটিভ টক্সিসিটি, ইমিউনো টক্সিসিটি ও নিউরো টক্সিসিটির ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিতে পারে প্যারাবেনস। ডিওডেরান্ট ও ময়েশ্চারাইজারসহ নানা প্রসাধনীতে থাকা প্যারাবেনস আমাদের ত্বকের লোমকূপগুলো দিয়ে শরীরের ভেতরে প্রবেশ করে।
সহজেই রক্ত প্রবাহের সঙ্গে মিশে যায় এই প্যারাবেনস। একদিকে লোমকূপ দিয়ে ঘামের সঙ্গে শরীরের দূষিত বর্জ্য বের হওয়া বন্ধ করে স্বাস্থ্য হুমকি তৈরি করে এবং অন্যদিকে রক্তে মিশে গিয়ে নিজেই মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে এই প্যারাবেনস।
হাইড্রোকুইনোন: ফেয়ারনেস ক্রিম ও স্কিন ব্লিচিং পণ্য :
হাইড্রোকুইনোন একধরনের সুগন্ধি জৈব উপাদান। এটা এক প্রকার ফেনোল বা কার্বলিক অ্যাসিডের মতো শক্তিশালী রাসায়নিক। সাধারণভাবে রং ফরসা করার ক্রিম হিসেবে পরিচিত ফেয়ারনেস ক্রিম এবং ত্বকের নানা প্রসাধনীতে এ রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। ‘হাইড্রোকুইনোন মারাত্মক অ্যালার্জি তৈরি করতে পারে এবং দীর্ঘদিন নিয়মিত ব্যবহার করলে এটা ত্বকে এক ধরনের নীলচে-ধূসর রঙের প্রলেপ ফেলে দিতে পারে, যা কখনোই চিকিৎসায়েও সারে না।
অনেকের ক্ষেত্রে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যাসহ, বুকে ব্যথা এবং মুখ ও জিহ্বা ফুলে ওঠার সমস্যাও তৈরি হতে পারে হাইড্রোকুইনোনসমৃদ্ধ প্রসাধনীর নিয়মিত ব্যবহারের কারণে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই রাসায়নিকের প্রভাবে মেলানিন কমে গিয়ে ত্বকে অতি-বেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব বাড়িয়ে দিতে পারে। এমনকি এ থেকে ত্বকের ক্যানসারের আশঙ্কাও আছে।
সোডিয়াম লরেথ সালফেট: শ্যাম্পু, সাবান, টুথপেস্ট :
শ্যাম্পু এবং বাবল-বাথ প্রোডাক্টস বা গোসলের নানা ধরনের পণ্যে বিপুলভাবে ব্যবহার করা হয় এই সোডিয়াম লরেথ সালফেট নামের রাসায়নিকটি। সাবান-শ্যাম্পুতে ফেনা তৈরিকারী পরিষ্কারক উপাদান হিসেবে এটা ব্যবহার করা হয়। মেঝে পরিষ্কারক হিসেবে আমরা যেসব পণ্য ব্যবহার করি, সেগুলোর মতো এমনকি টুথপেস্ট ও মাউথওয়াশেও থাকে মারাত্মক রাসায়নিক সোডিয়াম লরেথ সালফেট।
লিপস্টিকের দিকে নজর রাখুন। কেননা অনেক লিপস্টিকেই লেড ব্যবহার করা হচ্ছে, যা আসলে এক ধরনের নিউরোটক্সিন এবং অল্প মাত্রাতেও এটা ক্ষতিকর হতে পারে। লিপস্টিকে এই উপাদানের ব্যবহার থেকে ভাষা ও আচরণগত সমস্যা তৈরি হতে পারে। এছাড়া মাশকারাতে থাকা পিজারভেটিভের কারণে কিডনির অসুখ হতে পারে।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ