স্পোর্টস ডেস্ক:
অ্যাওয়ে সিরিজ খেলার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিই সবচেয়ে কঠিন। এবারের আগেও দু’বার টেস্ট খেলতে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। দু’বারই ফিরতে হয়েছিল বিস্মরণযোগ্য অভিজ্ঞতা নিয়ে।
২০০২ ও ২০০৮ সালের দুই সিরিজ মিলিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলা চার টেস্টের প্রতিটিতেই ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে টাইগাররা। তবে সেই বাংলাদেশ আর ২০১৭ সালের এই বাংলাদেশের মধ্যে যোজন যোজন তফাৎ।
আজ থেকে শুরু হল বাংলাদেশের ‘আসল’ পরীক্ষা। সিরিজের প্রথম টেস্টটি আজ বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায় শুরু হবে।
ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম শুরুতেই বললেন, বিদেশের মাটিতে ভালো করার পরবর্তী চ্যালেঞ্জ দক্ষিণ আফ্রিকার সিরিজ। এ কথা আগেও বেশ কয়েকবার বলেছেন। এ সিরিজে দল আরও বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতি। ব্যাটিং ও বোলিং দুই বিভাগেই বিশ্বসেরা এমন অলরাউন্ডারের বিকল্প নেই। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশ যে কটি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে একটি ছাড়া সবকটিতেই ছিলেন সাকিব। কিন্তু এবার অভিজ্ঞ এই বিশ্ব তারকা না থাকায় দলের শক্তি কমেছে। এর মধ্যে রয়েছে ইনজুরির বাড়তি চাপ। প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার সময় তামিম ইকবালের পায়ের মাংসপেশিতে টান ধরে। আজ তামিমের ম্যাচে ফেরার সুখবর রয়েছে। কিন্তু সৌম্য সরকারকে নিয়ে শঙ্কা রয়েই গেছে। দলের বাকি সবাই ফিট। বড় চ্যালেঞ্জের সিরিজ আজ থেকে শুরু হলেও প্রধান কোচ হাথুরুসিংহের মতে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ভালো খেলার সময় এখনই। কেননা দক্ষিণ আফ্রিকা দলে নেই বেশ কজন ভালোমানের পেসার। ফিল্যান্ডার, ডেল স্টেইন, ক্রিস মরিস ও পারনেল খেলছেন না। সবাই ইনজুরিতে।
এ ছাড়া প্রোটিয়া দলে নতুন কোচ ওটিস গিবসন যোগ দিয়েছেন। দল ভালোভাবে বোঝার আগেই বাংলাদেশের বিপক্ষে বড় পরীক্ষায় নামছে। এ সুযোগের সদ্ব্যবহারের জন্য শিষ্যদের তাগিদ দিয়েছেন হাথুরুসিংহে। সাফল্যের আশায় রয়েছেন।
অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকা দলের ইনজুরির সমস্যা থাকলেও বর্তমান দল নিয়ে আশাবাদী অধিনায়ক ডু প্লেসিসও। নতুন তরুণদের প্রতি আস্থা রাখছেন প্লেসিস। তবে বাংলাদেশকে সমীহ করেই মাঠে নামছেন তারা। টানা সাফল্যে যে বাংলাদেশ বদলে গেছে তা অজানা নয় প্লেসিসের। তাই তো বলেছেন, সিরিজে যে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। বাংলাদেশেরও সুযোগ দেখছেন প্লেসিস। বাংলাদেশ ভালো করতে পারে যদি পেসাররা জ্বলে ওঠেন। দেশের মাটিতে পেসাররা আলো ছড়ালেও বিদেশে পারফন্স আশাজাগানিয়া নয়! এটা জানেন অধিনায়ক মুশফিকও। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটে পেসাররা ভালো করলে ম্যাচের চিত্রনাট্য পাল্টে যেতে পারে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্টে জয় না পাওয়া অতৃপ্তি ঘোচাতে পারে বাংলাদেশ। তবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে নতুন ইতিহাস গড়া অসম্ভব মনে করছেন না মুশফিক। তার মতে, দলের সবাই একযোগে সেরাটা খেললে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানো সম্ভব।
এ পর্যন্ত দলটির বিপক্ষে ১০টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ ২০১৫ সালে ঘরের মাঠে দুই টেস্ট ম্যাচ সিরিজ ড্র করে টাইগাররা। বাকি ৮টিতেই হেরেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ২০০২ ও ২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দুটি করে ৪টি টেস্ট ম্যাচেই হারে ইনিংস ব্যবধানে। খালেদ মাসুদ পাইলটের নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথম টেস্ট সিরিজ খেলেছিল বাংলাদেশ। দুই ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট হয়েছিল সেনওয়াস পার্কে। ওই ম্যাচের দুই ইনিংস মিলিয়ে ৩২২ রান তোলে খালেদ মাসুদরা। হার্শেল গিবস, গ্যারি কারস্টেন ও জ্যাক ক্যালিস সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন। তবে দিন বদলেছে। আগের বাংলাদেশ আর নেই। টানা সাফল্য পেয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। খালেদ মাসুদদের দুঃস্মৃতি ভুলে সেনওয়াস পার্কে নতুন কিছুই উপহার দেবেন মুশফিকবাহিনী, এমনটাই প্রত্যাশা সবার।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ