আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
মিয়ানমারের মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনীর নির্যাতন বন্ধ হয়নি। এখনো প্রতিদিনই জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে রোহিঙ্গাদের গ্রাম ও বাড়িঘর। শত শত রোহিঙ্গা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হচ্ছেন। এদের মধ্যেও আছে সেনা-পুলিশের গুলি ও অন্য কায়দায় নির্যাতনে আহত অনেকেই। এখন যারা আসছেন তারা জানিয়েছেন, তাদেরকে বলা হচ্ছে, অবৈধ বাঙালি অভিবাসী হিসেবে নিজেদের স্বীকার করে নিলেই কেবল মিয়ানমারে থাকতে পারবে। বাংলাদেশে আসার পথে অনেক রোহিঙ্গা মুসলমান সেদেশের বন ও পাহাড়ে আটকা পড়েছেন। আসার সময় পথে পথে তাদেরকে খাবার ও পানি ছাড়া আটকে রাখা হচ্ছে বলেও জানান তারা।
পালিয়ে আসাদের অভিযোগ, প্রতিদিনই রোহিঙ্গা গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকালেও টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের নাফ নদীর অপর তীরে মংডুর শিলখালি গ্রামের একাধিক স্থানে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। যার ফলে টানা এক মাসের বেশি সময় ধরে চলা রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধ হয়নি।
বুধবার রাত ও আজ সকালে আসা রোহিঙ্গাদের দুটি বড় দলকে টেকনাফ–কক্সবাজার সড়ক দিয়ে উখিয়ার বালুখালীর দিকে যেতে দেখা গেছে। বুধবার রাতে হোয়াইক্যাং পুলিশ চেকপোস্টের সামনে একদল রোহিঙ্গাকে দেখা গেছে, যারা বুচিডংয়ের গুদামপাড়া থেকে এসেছেন। পথে পথে মগ ও সেনা- পুলিশের বাধা দেওয়ার কথা জানান তারা।
তাদের একজন মোহাম্মদ আলী বলেন, কয়েক জায়গায় মগ ও সেনা-পুলিশ আমাদের আটক রেখেছিল, তাদের ভয়ে দিনে পাহাড়ে–জঙ্গলে লুকিয়ে থাকতাম, আমরা ১৬৬ জন মানুষ শাহপরীর দ্বীপ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করি।
এই দলের একজন রোহিঙ্গা মহিলা আসমা জানান, আটক করে তারা আমাদেরকে বলেছিল, অবৈধ বাঙালি অভিভাসী হিসেবে নিজেদের মেনে নিলে আমরা সেখানে থাকতে পারবো, আমরা বলেছিলাম আমাদের বাড়িঘরে ফিরতে দিলেই আমরা থেকে যাবো। তারা বলেছে, সরকার যেখানে থাকতে দেয় সেখানে যেতে হবে।
এখন আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যেও অনেকে আছেন গুলিবিদ্ধ কিংবা অন্যভাবে আহত। তাদের একজন পায়ে গুলিবিদ্ধ সোনা আলী বলছিলেন, বাংলাদেশে আসার সময় তিন-চারদিন আগে মগরা আমাদেরকে ভয় দেখানোর জন্য গুলি করেছিলো, সীমান্ত অতিক্রমের পর শাহপরীর দ্বীপে আমাকে চিকিৎসা দেয়া হয়।
সদ্য সীমান্ত অতিক্রম করে আসা রোহিঙ্গাদেরকে স্থানীয় জনগণ ও সরকারি-বেসরকারি সংস্থার পক্ষ থেকে খাদ্য ও পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের উদ্যোগে তাদেরকে সীমান্ত পয়েন্ট থেকে উখিয়ার বালুখালীতে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।
এসব রোহিঙ্গা যাতে নির্ধারিত ক্যাম্প এলাকার বাইরে যেতে না পারে সেজন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। টেকনাফ-কক্সবাজার সড়কের একটি চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশের পরিদর্শক রোমেল বড়ুয়া জানান, গতকাল বুধবার বিকাল থেকে প্রায় পাঁচশ’ রোহিঙ্গাকে ক্যাম্পের দিকে যেতে দেখেছি, তারা সদ্য সীমান্ত অতিক্রম করে এসেছে, তারা যাতে সবাই ক্যাম্পের দিকে যেতে পারে সেদিকে আমরা বিশেষ দৃষ্টি রাখছি।
গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের নিরাপত্তাবাহিনীর কয়েকটি চেকপোস্টের বিদ্রোহীদের হামলার প্রেক্ষিতে চলমান শুদ্ধি অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। এর পর থেকে প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। যা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বসবাস করা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেক।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ