স্বাস্থ্য ডেস্ক:
পেটে গ্যাস হওয়া হজম প্রক্রিয়ারই একটি অংশ। এটা ছাড়া ঠিকমতো হজম প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় না। গ্যাস্ট্রিক সমস্যা তখনই হয় যখন এই গ্যাস অতিরিক্ত হারে তৈরি হতে থাকে এবং সময়মতো বের হতে পারে না। কারোও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থাকলে তার যেকোনো খাবার থেকেই গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। সারাদিন কাজের চাপে অথবা ঠিকমত খাবার না খাওয়ার কারণেও গ্যাসের সমস্যা হতে পারে।
এর লক্ষণগুলো:
পেটে জ্বালা-পোড়া করা, বদহজম, বমি বমি ভাব, বমি করা, পেটে ক্ষুধা, ক্ষুধা হ্রাস পাওয়া, খাওয়ার পর উপরের পেট বেশি ভরে গিয়েছে অনুভূতি হওয়া ইত্যাদি। এই সমস্যাটা সাধারণত হয়ে থাকে সঠিক সময়ে খাওয়া দাওয়া না করার কারণে। আমার অনেকেই সকালের নাস্তা খাইনা বা খেলেও দেরি করে খাই। কোনো খাবার সময়মতো খাওয়া হয়না, বাইরের ভাজা-পোড়া বেশি খাওয়া, জাঙ্কফুড খাওয়া, পরিমাণ মতো পানি না খাওয়া ইত্যাদি কারণে গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা দেখা দেয়। তাই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে জেনে রাখুন কিছু ঘরোয়া উপায়।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করে এমন কিছু খাবার :
দারুচিনি : এক গ্লাস গরম দুধের মধ্যে এক চামচ দারুচিনির গুঁড়া ভালো করে গুলিয়ে পান করা যেতে পারে। সঙ্গে মধুও মেশানো যেতে পারে। অথবা এক গ্লাস গরম পানিতে এক চামচ দারচিনির গুঁড়া ভালো করে মিশিয়ে ২-৩ মিনিট পরে পান করা যেতে পারে।
আদা : আদাতে আছে এমন কিছু উপাদান যা গ্যাস্ট্রিক সমস্যায় জ্বালাপোড়া হলে তা রোধ করতে সাহায্য করে। আদা খেলে বমি সমস্যা, বদ হজম, গ্যাস হওয়া কমে যায়।
আদা কুচি করে পানি দিয়ে ফুটিয়ে নিন। ১০ মিনিট ডেকে রাখুন, এরপর সামান্য মধু মিশিয়ে চায়ের মতো বানিয়ে নিন। এই পানীয়টি দিনে ২/৩ বার পান করুন উপকারিতা পেতে।
আদার রসের সাথে মধু মিশিয়েও খেতে পারেন। দুপুরে ও রাতে খাওয়ার আগে এটি খেয়ে নিন।
আপনি চাইলে আস্ত আদা ধুয়ে কেটে চিবিয়েও খেতে পারেন।
ঘোল : ঘোল পান করলে গ্যাস্ট্রিক কমে যায়। সকালে ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস ঘোল পান করা যেতে পারে। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
দই : দই ডায়েট করার জন্য উত্তম খাবার, বিশেষ করে যখন কারো গ্যাস্ট্রিক হয়ে থাকে দই খেলে অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়। দই আমাদের পাকস্থলীকে ‘ এইচ পাইলোরি ব্যাকটেরিয়া’ থেকে রক্ষা করে যা গ্যাস্ট্রিক হওয়ার অনতম কারণ। তাছাড়া দই আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
প্রতিদিন ২/৩ চামচ দই খেয়ে নিন। আপনি চাইলে কলা, দই ও মধু একসাথে পেস্ট করে খেতে পারেন দ্রুত গ্যাস্ট্রিক সমস্যা রোধ করার জন্য।
আলুর রস: গ্যাস্ট্রিক সমস্যা রোধ করার অন্যতম ভালো উপায় হল আলুর রস। আলুর অ্যালকালাইন উপাদান গ্যাস্ট্রিক সমস্যার লক্ষণগুলো রোধ করে থাকে। একটি বা দুটো আলু নিয়ে গ্রেট করে নিন। গ্রেট করা আলু থেকে রস বের করে নিন। এরপর আলুর রসের সাথে গরম পানি মিশিয়ে নিন। এই পানীয় দিনে ৩ বার পান করুন। প্রতি বেলায় খাবার ৩০ মিনিট আগে খেয়ে নিন আলুর রস। তবে অন্তত ২ সপ্তাহ পান করুন এই পানীয়।
বাদাম : প্রতিদিন কয়েকটি বাদাম খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হবে না।
বেকিং সোডা ও লেবু : একটি গ্লাসে অল্প পরিমাণ তাজা লেবুর রসের মধ্যে কিছু পরিমাণ বেকিং সোডা ঢেলে দিতে হবে। মিশ্রণটি মিশে গেলে তার উপর পানি এবং আর একটু বেকিং সোডা মিশিয়ে ভালোভাবে গুলিয়ে নিতে হবে। আস্তে আস্তে মিশ্রণটি পান করতে হবে। তাছাড়া খালি পেটে এক গ্লাস পানির মধ্যে সামান্য পরিমাণ বেকিং সোডা মিশিয়ে পান করলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হয়ে যায়।
রসুন : রসুনের স্যুপ খেলে গ্যাস্ট্রিক কমে যায় এবং হজম প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। কিছু পরিমাণ রসুন পিষে পানিতে মিশিয়ে কয়েক মিনিট ধরে ফোটাতে হবে। এর সঙ্গে গোলমরিচ এবং জিরা মিশিয়ে কিছুক্ষণ রেখে ঠাণ্ডা করতে হবে। ঠাণ্ডা হলে মিশ্রণটি পান করতে হবে। এভাবে দিনে দুই থেকে তিন বার ব্যবহার করতে থাকলে গ্যাস্ট্রিক কমে আসবে।
মৌরি : মৌরি চিবিয়ে খাওয়া যেতে পারে। অথবা গরম পানির মধ্যে কিছু পরিমাণ মৌরি মিশিয়ে পাঁচ মিনিট ধরে ঠাণ্ডা করে পাঁচ মিনিট পরে পান করতে হবে। এতে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
পানি : প্রতিদিন আট গ্লাস পানি পানে অনেক সমস্যা থেকেই মুক্তি পাওয়া যাবে। শরীরের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে দ্রুত খাবার হজমে সাহায্য করে পানি। এতে কমে যায় অ্যাসিডিটি।
বেকিং সোডা : বেকিং সোডা পেটের অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে তাৎক্ষণিক রেহাই পেতে সাহায্য করে। এক গ্লাস পানিতে ১/৪ চা চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে পান করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
হলুদের পাতা ; হলুদের পাতা কুচি করে কেটে প্রতিদিন দুধের সঙ্গে মিশিয়ে পান করতে হবে। এতে করে পেটে ব্যথা এবং গ্যাসের সমস্যার সমাধান হবে। দুই কাপ পানি পেয়ারা পাতা দিয়ে ফুটিয়ে নিন। পানি ১ কাপ পরিমাণে হলে ছেঁকে পান করুন। এতেও বেশ ভালো উপকার হবে।
আনারস : আনারস খেলে অ্যাসিডিটি কমে যায়।
তথ্য সুত্র: এইচবি
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ