২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ২:২৬

ঢাকা সিটির ৬৫০ কিমি সড়ক বেহাল

নিজস্ব প্রতিবেদক:

গত মার্চ থেকে শুরু হয়ে আগস্ট পর্যন্ত আগাম ও অতিবৃষ্টি এবং সে থেকে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের অধিকাংশ সড়কই বেহাল হয়ে পড়ে। ইট-সুরকি উঠে রাস্তাগুলো কঙ্কালসার রূপ নেয়। ছোট-বড় খানাখন্দ ও গর্ত তৈরি হয়। বিশেষ করে জলাবদ্ধতার কারণে ওইসব ভাঙাচোরা সড়ক রীতিমতো মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়। ঢাকা দুই সিটি করপোরেশন (উত্তর ও দক্ষিণ) কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে, এই দুই সিটি করপোরেশনের আওতাধীন সড়ক দুই হাজার ২৮৯ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৬৫০ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা বেহাল। কর্তৃপক্ষের হিসাবে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এক হাজার ৫০ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ, অর্থাৎ ৩০০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের এক হাজার ৩৫০ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে সাড়ে ৩০০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া বর্ষা মৌসুমের আগেও কিছু ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ছিল। যেগুলো সংস্কার করা হয়নি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন প্রধান সড়কের সঙ্গে লাগোয়া শাখা সড়কগুলোর এক কিলোমিটার পর্যন্ত চলাচল উপযোগী রয়েছে। এরপর থেকেই শুরু হয়েছে খানাখন্দ। এরমধ্যে বাড্ডা এলাকায় বেশির ভাগ শাখা সড়কগুলোই ভাঙাচোরা। খানাখন্দে ভরা খিলক্ষেত এলাকার খিলক্ষেত রেলগেট-ডুমনী সড়কটি এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর থেকে কচুক্ষেত সড়কটির প্রথম অংশের অবস্থা খুবই খারাপ। তেজগাঁও এলাকার মহাখালী-নাবিস্কো-তিব্বত পর্যন্ত সড়কে অসংখ্য খানাখন্দ। উত্তরার জসীমউদ্দীন চত্বর থেকে বিমানবন্দর আসার পথে প্রধান সড়ক কার্পেটিং করা থাকলেও মাঝেমধ্যেই দেবে গিয়ে রাস্তায় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গাবতলী আমিনবাজার থেকে সদরঘাট বাবুবাজার পর্যন্ত বেঁড়িবাধ সড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। দক্ষিণ ঢাকার ফুলবাড়িয়া মাজার থেকে সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেট, সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেট চত্বর থেকে চানখাঁরপুল পর্যন্ত রাস্তার অবস্থাও খুবই খারাপ।

নিয়মানুযায়ী, বর্ষা শুরুর আগেই ভাঙাচোরা সড়ক সংস্কার করার কথা। এমনকি বর্ষা শেষের পর পরই নতুন ভাঙাচোরা সড়ক সংস্কারকাজে হাত দেওয়ার কথা বলেছিল সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু দুটো কাজের কোনোটিই হয়নি। উল্টো এ সময় সিটি করপোরেশন, ওয়াসা, ডেসাসহ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো পাল্লা দিয়ে রাস্তাঘাট খোঁড়াখুঁড়ি করে। পরে কংক্রিট বা নুড়ি-বিটুমিনের ঢালাই না দিয়ে কোনোমতে ইট-বালু দিয়ে সেগুলো মেরামতের কাজ করে। এতে সামান্য বৃষ্টিতেই ওইসব সড়ক দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। সামান্য বৃষ্টি হলেই এসব সড়কে তীব্র জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে নাগরিক চলাচলে ভোগান্তির অন্ত থাকে না। এবারও বর্ষা মৌসুম শেষে এখনো সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ ভাঙাচোরা সড়ক মেরামত বা সংস্কারে হাত দেয়নি। বৃষ্টির পানি জমে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো সাময়িকভাবে ইট, বালু ও সুরকি দিয়ে সংস্কার করছে। সাময়িক সংস্কার করা এসব সড়ক উঁচু-নিচু হওয়ায় পরিবহন চলাচলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তা ছাড়া সংস্কার করা এসব খানাখন্দ বেশিদিন টিকছেও না। ফলে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের এসব সড়ক কিছুদিন পরপর সংস্কার করতে হচ্ছে।

করপোরেশন সূত্র মতে, প্রতি বছর রাস্তার সংস্কারকাজের বাজেটের একটি বড় অংশ ব্যয় করে দুই সিটি করপোরেশন। চলতি বছর ডিএসসিসির বাজেটের সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে সড়ক ও ট্রাফিক অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন খাতে। বাজেটে এ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ১৩০ কোটি ৫১ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে ছিল ৭০১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। একইভাবে চলতি বাজেটে ডিএনসিসি সড়ক মেরামত ও উন্নয়ন ব্যয় ধরেছে এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা। অন্যদিকে, গত অর্থবছরে দুই সিটির সড়কের সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রায় এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা খরচ করেছে। অথচ এত টাকা ব্যয় করেও সড়কগুলো অল্প সময়েই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সড়কগুলো ১০-১৫ টন ওজনের গাড়ি চলাচলের জন্য তৈরি করা হয়। কিন্তু সেখানে চলে ৪০-৫০ টন ওজনের গাড়ি। এতে সড়কগুলো ওজন সহ্য করতে না পেরে নষ্ট হয়ে যায়। একইভাবে বৃষ্টির পানি জমে থাকা পানিতেও সড়ক নষ্ট হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আরো জানান, যখন যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকে তখন সে দলের প্রভাবশালী ঠিকাদাররা সিটি করপোরেশনের সড়ক ও ট্রাফিক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের কাজগুলো হাতিয়ে নেন। দরপত্র আহ্বানের পর থেকেই বরাদ্দ টাকার ভাগাভাগি শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত বরাদ্দ অর্থের মাত্র ২০-৩০ শতাংশ ব্যয় হয় সড়কের কাজে। সড়কের এমন বেহাল দশার বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, এবার সারা দেশসহ রাজধানী ঢাকায় অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। অতিবর্ষণজনিত কারণে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার অনেক রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সব রাস্তাঘাট শিগগির সংস্কার করা হবে। তবে সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ বলছে, বর্ষা শেষ হলেও বৃষ্টি হচ্ছেই। বৃষ্টি শেষ না হলে কী পরিমাণ সড়ক নষ্ট হয়েছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান বের করা যাবে না। এরপর অর্থ বরাদ্দ। সবমিলে পুরো প্রক্রিয়া শেষে আগামী বছরের জানুয়ারির আগে এসব সড়ক সংস্কারের কাজে হাত দেওয়া সম্ভব নয়।

দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ

প্রকাশ :সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৭ ৩:৩১ অপরাহ্ণ