নিজস্ব প্রতিবেদক:
বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই যমুনা ও ধলেশ্বরী নদীর দুই পাড় ভাঙন শুরু হয়। পানি নেমে যাওয়ার সময়ও এর ব্যতিক্রম হয় না। চলতি বছরেও ভাঙন দিয়েই শুরু হয় যমুনা ও ধলেশ্বরীর বানের পানি প্রবাহ। কিছুদিন চলতে না চলতে উজান থেকে পাহারি ঢল নেমে আসা পানি আর অতিবৃষ্টির ফলে যমুনা ও ধলেশ্বরীর পানি বিপদসীমার দেড়শ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। উপচেপড়া পানিতে নদীকূলবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়ে টাঙ্গাইলের নয়টি উপজেলাতেই বানের পানি ঢুকে পড়ে। তবে পাঁচটি উপজেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়ে লাখ লাখ মানুষ। এসব এলাকায় লোকসানের পরিমাণও বেশি। বিশেষ করে জেলার রোপা আমনের অপূরণীয় ক্ষতি হয়।
বন্যায় ক্ষতি তুলতে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেও বারবার হোঁচট খাচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক। দুই দফায় জমিতে চারা লাগানোর পরও বানের পানিতে তলিয়ে দুবারই নষ্ট হয়েছে রোপা আমনের চারা। নিজের পরিবারের আগাম খাদ্য সংকট ভেবে কৃষক দিশেহারা হয়ে পড়েছে। ফলে আবারো ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে কৃষক। তৃতীয় দফায় জমিতে চারা রোপন করছে কৃষক। যদিও তিনবার রোপন করা খরচের ক্ষতি তুলতে পারবে না তবু জমি অনাবাদি রাখতে চায় না তারা।
রোপা আমন, বোনা আমন ও কালিজিরা ধানের ক্ষতি কাটিয়ে তুলতে বাড়ির উঠান ও উঁচু জায়গায় তৈরি করে রেখেছেন বীজতলা। জমি থেকে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে তৃতীয়বারের মতো কৃষক ধানের চারা রোপন করছেন। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ব্রীধান ৪৯, বিআর১১ ও বিনাশাইল আগাম জাতের রোপা আমন, বোনা আমন ও সুগন্ধী ধানের। স্থানীয় কৃষি বিভাগও চিন্তিত হয়ে পড়ে ধানের লক্ষমাত্রা অর্জন নিয়ে। পরে কৃষি বিভাগ কৃষকদের পরামর্শ দেন বাড়ির উঠান ও উঁচু স্থানে বীজতলা তৈরির।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার দাইন্যা ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. ওসমান গনী জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হয় নিজেদের বাড়ির উঠান ও উঁচু স্থানে ব্রীধান ৪৬, বিআর ২২ ও কালিজিরার লেট জাতের ধানের বীজতলা তৈরির। এজাতের ধান দেরিতে রোপন করলেও অল্প সময়েই ফসল ঘরে তোলা যায়। অনেকেই নিজেদের বাড়ির উঠান ও উঁচু স্থানে তৈরি করে ফেলেন বীজতলা।
এদিকে ধানের চারা সংকট থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের অনেকে নতুন করে জমিতে ধান রোপন করতে পারছেন না। অধিকাংশ কৃষক সরকারি সহযোগিতা পাননি বলেও অভিযোগ করেন। সম্প্রতি জেলার একমাত্র কালিহাতী উপজেলার বিভিন্ন বাজারে ধানেরর চারা পাওয়া যাচ্ছে। যেসব চারার প্রতি আটির মূল্য ছিল দুই থেকে তিন টাকা। বর্তমাতে সেই আটি কিনতে হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। ফলে কেউ কেউ এতো দামের চারা কিনে জমিতে ধান রোপন করছে না।
জেলার দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইলে দেখা গেল জমি থেকে পানি নেমে যাওয়ায় জমি পুনরায় প্রস্তুত করতে কৃষক ব্যস্ত। কয়েকদিন পানি থাকায় আবর্জনায় ভরে গেছে জমি। আগের চারার লেশ মাত্রও নেই। এসময় জমিতে কাজ করা অবস্থায় থাকা দুলাল মিয়া বলেন, জমিতে চারা লাগানোর চেয়ে জমি পরিষ্কার করে উপযুক্ত করতেই বেশি খরচ পড়ছে।
বগুড়া থেকে আসা শ্রমিক ধানের চারা রোপন করছেন। তিনি বললেন এখনকার চারা বিস্তার হবে কি না সন্দেহ। তবুও জমি যেন অনাবাদি না থাকে সেজন্য তাদের মাধ্যমে জমির মালিক আব্দুর রাজ্জাক চারা রোপন করাচ্ছেন।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ