নিজস্ব প্রতিবেদক:
খাদ্য অধিদপ্তর খোলা বাজারে (ওএমএস) চাল বিক্রি শুরু করলেও আতপ চাল দেখে ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। চাল না কিনেই ফিরে যাচ্ছেন তারা। এই অবস্থা দেখে ডিলাররাও আগ্রহ হারিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দিনে ঢাকায় ১০৯ জন ডিলার চাল-আটা সংগ্রহ করলেও সোমবার এই সংখ্যা ৯৪ জনে নেমে আসে।
সারাদেশে ৬২৭টি ট্রাকে করে এমএসের চাল বিক্রি শুরু হয় রোববার। ঢাকা মহানগরীতে ১২০টি ট্রাকে তা বিক্রি হচ্ছে বলে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. বদরুল হাসান।
ঢাকায় চালের সঙ্গে আটাও বিক্রি হচ্ছে। তবে চালের দাম দ্বিগুণ করে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সোমবার ও মঙ্গলবার কয়েকটি ট্রাকের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চালের ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। যারা আসছেন তারাও আতপ চাল দেখে ফিরে যাচ্ছেন। তবে আটা বিক্রি হচ্ছে।
একজন ক্রেতা বলেন, আগে সিদ্ধ চাল যে দামে বিক্রি হত, এখন তার চেয়ে দ্বিগুণ দামে আতপ চাল কিনতে কেউই আগ্রহী হবে না।
বাজারে চালের দাম প্রতি কেজি সর্বনিম্ন ৫৫ টাকায় পৌঁছায় শহরগুলোর সীমিত আয়ের মানুষদের জন্য খোলাবাজারে চাল বিক্রির এই উদ্যোগ সরকারের।
সোমবার দুপুরে আগারগাঁও বিএনপি বস্তি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ওএমএসের ট্রাকে অলস সময় কাটাচ্ছেন বিক্রেতা। বস্তির বাসিন্দা, রিকশা চালক ও নিম্ন আয়ের মানুষ ট্রাকের কাছে এসে চাল দেখে আবার চলে যাচ্ছেন।
‘ট্রাক সেলের’ কর্মী সাদ্দাম সাজী বলেন, “এবার গুদাম থেকে আতপ চাল দেয়ায় লোকজন কিনতে চাচ্ছে না। তারা বলছে, এই চাল ভাত খাওয়ার জন্য নয়, পিঠা তৈরির জন্য।”
দুপুর ২টা পর্যন্ত বিএনপি বস্তি এলাকায় ২০ বস্তা চালের মধ্যে বিক্রি হয়েছিল মাত্র তিন বস্তা। অথচ আটা বিক্রি হয় ৫ বস্তা।
আটা কিনতে ক্রেতাদের আগ্রহ দেখে ‘চাল কিনলে আটা দেয়া হবে’ এমন শর্ত দিতে দেখা যায় প্রায় একই পরিস্থিতি দেখা যায় শ্যামলী সিনেমা হলের সামনে ও ফার্মগেইট গ্রিন সুপার মার্কেটর সামনে বসা ওএমএসের ট্রাক সেলে। মঙ্গলবার সকাল থেকে ট্রাক নিয়ে বসে থাকলেও ক্রেতাদের তেমন সাড়া ছিল না।
শ্যামলীতে একজন ক্রেতা বলেন, “সরকার কেন যে আতপ চাল দিতে গেল, তা বোধগম্য নয়। ঢাকায় কোথাও আতপ চাল সিদ্ধ করে ভাত খেতে শুনিনি। “আগে সিদ্ধ চাল যেখানে ১৫ টাকা দিয়েছে সেখানে হঠাৎ করে দেয়া হলে আতপ চাল, দামও করা হল দ্বিগুণ। এনিয়ে ক্রেতাদের আসলে তেমন উপকার হবে না। বেচা-বিক্রিই তার প্রমাণ।”
সংগ্রহে কেবল আতপ বন্যায় ফসলহানির কারণে দেশের বাজার থেকে এবার পরিকল্পনা অনুযায়ী চাল সংগ্রহ করতে পারেনি খাদ্য অধিদপ্তর। চালের বাজারে অস্থিরতার সঙ্কেত পেয়ে সরকার সম্প্রতি বিদেশ থেকে চাল আমদানির উদ্যোগ নেয়। ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড থেকে কেবল আতপ চালই আমদানি করা সম্ভব হয়েছে।
ঢাকা জেলার এরিয়া রেশনিং কর্মকর্তা তৌফিক ই এলাহী বলেন, মজুদ পরিস্থিতিতে আতপ চালই বেশি।
“মিল মালিকদের কাছ থেকে যেই দুই লাখ টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহ করা গেছে, তা চলে যাচ্ছে সেনাবাহিনী, পুলিশ, আনসার, বিজিবিসহ অন্যান্য সরকারি রেশনিংয়ে। তারা আতপ চাল নিতে চাচ্ছে না। তাই খোলা বাজারে আতপ চাল বিক্রি করতে হচ্ছে।”
এই আতপ চাল রান্না করলে সিদ্ধ চালের মতোই হবে বলে জানান তৌফিক।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ