নিজস্ব প্রতিবেদক:
খুলনা মহানগরীর পূর্ব দিকে ভৈরব নদী পার হলেই দিঘলিয়া উপজেলা। এ উপজেলার ছোট্ট একটি গ্রাম লাখোহাটি। লাখোহাটি গ্রামের অধিকাংশ মানুষই একসময় খুবই দরিদ্র ছিল। অভাব আর অনটনে দিন কাটতো তাদের। এখন অভাব শব্দটি ভুলে গেছে লাখোহাটি গ্রামের মানুষ। সাদা মাছের পোনা বদলে দিয়েছে তাদের জীবনযাত্রা।
লাখোহাটি গ্রামের লোকজন এখন লাখোপতি। বছরে এই গ্রামে একশ কোটি টাকারও বেশি সাদা মাছের পোনা উৎপাদন হচ্ছে। প্রতিদিন দুই থেকে আড়াইশ হাজার মণ মাছের পোনা ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রির জন্য পাঠানো হচ্ছে। ফলে ভরা মৌসুমে মাছের পোনা পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে মাছচাষিরা।
এসব গ্রামের খাল-বিল, ডোবা, ঘের ও পুকুর যেখানেই পানি সেখানেই এখন মাছ আর মাছ। চলছে রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প, পুঁটির পোনার পরিচর্যা। আবার সঙ্গে সঙ্গে তৈরি হচ্ছে নতুন প্রজাতিও। পোনা পরিচর্যাকে কেন্দ্র করে পরিবহন শ্রমিক, খাবার ব্যবসায়ী, চাষির সংখ্যা প্রতিবছরই বাড়ছে। ব্যাংক ঋণ ও মৎস্য অধিদপ্তরের পরামর্শ ছাড়াই গ্রামের ক্ষুদে ব্যবসায়ীরা এ সাফল্য অর্জন করেছেন।
মঙ্গলবার সকালে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খুলনা মহানগরী ভৈরব নদের পূর্বে পাশে দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর ইউনিয়নের লাখোহাটি গ্রাম।
১৯৬৫ সালে এ গ্রামের বাসিন্দা হরিপদ বিশ্বাস প্রথম সাদা মাছের পোনা পরিচর্যার ব্যবসা শুরু করেন। এর কয়েক বছর পর তিনি দেশ ত্যাগ করেন, পাড়ি জমান ভারতে। কিন্তু তার দেখানো পথেই স্থানীয়রা ঝুঁকে পড়ে সাদা মাছের পোনা পরিচর্যায়।
এখান থেকে বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বাগেরহাট, নড়াইল, ফরিদপুর, মংলা, রামপালসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পোনা সরবরাহ করা হয়। জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ ব্যবসার মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। এসময় প্রতিদিন দুই থেকে আড়াইশ হজার মণ মাছের পোনা ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রির জন্য পাঠানো হয়।
পোনা মাছ ব্যবসায়ী মো. মাহাবুব আলম লিটন বলেন, যশোর, ফুলতলা, শিরোমনি, খুলনা, হ্যাচারি থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে কাতলা, গ্রাসকার্প, চাইনিসপুঁটি, ম্রিগেলসহ বিভিন্ন রকমের মাছের ডিম এ বছর প্রথমে প্রতি কেজি ৮/১০ হাজার টাকা ও শেষের দিকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত কেনেন তিনি।
মাছের ডিম কেনার পর তার মাছের খামারে ছেড়ে দেন। এ বছর ১০ একর জমিতে পোনা মাছের চাষ করেন তিনি। মোটামুটি লাভের আশা করছেন এ মাছচাষি। তিনি বলেন, গত বছর লাখোহাটি গ্রামের প্রায় সব মৎস্য খামার বন্যায় ভেসে যায়। যে কারণে লোকসানের ঘাটতি রয়েছে। আর্থিকভাবে আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।
পোনা মাছ ব্যবসায়ী লিটু সরদার জানান, তার ৫টি মৎস্য খামারে পোনা মাছের চাষ করেন। সরকারি উদ্যোগে ব্যাংকে ঋণের ব্যবস্থা নিলে ব্যবসা আরও প্রসার হবে। তবে মৎস্য অধিপ্তরের উদ্যোগে ব্যবসায়ীদের কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় না বলে তিনি জানান। বারাকপুর ইউপি সদস্য কামরুল ইসলাম বলেন, এই গ্রামের ৮৫ ভাগ মানুষ পোনা মাছ ব্যবসায়ী। এই গ্রামে বড় ও মাঝারি কয়েক শতাধিক পোনা মাছের ব্যবসায়ী রয়েছে। সরকারি ও মৎস্য অধিপ্তরের সাহায্য পেলে লাখোহাটি গ্রামের মৎস্য খামারিরা আরো লাভবান হতো বলে তিনি জানান।
দিঘলিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুজামান বলেন, গত বছর লাখোহাটি গ্রামে বন্যায় ভেসে যাওয়া মৎস্য খামারের তালিকা করা হয়েছে। তবে কোনো অনুদান আদৌ আসবে কিনা জানি না। আর পোনা চাষিদের পূর্বের ১৪৬ জনের একটা তালিকা আছে। আমাদের ঋণ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ