বর্তমানে উচ্চ রক্তচাপ একটি সাধারণ রোগ। সাধারণ বয়স ৫০ পার হওয়ার পর থেকে মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন। সঠিক জীবনযাপনে এ রোগ থেকে মুক্তি মেলে। ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি জীবনযাপনের পরিবর্তনই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তবে দীর্ঘদিন ধরে ওষুধ খেলে শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। গুণগত মানের জীবনযাপন আর কিছু নিয়ম কানুন মেনে চললেই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এ জন্য আমাদের দৈনন্দিন খাবার-দাবারের দিকে নজর দেওয়াও প্রয়োজন।
সাধারণত স্থূলতা, বংশগত, অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান করা, অতিরিক্ত লবণ জাতীয় খাবার খাওয়া, ব্যায়াম না করা, মানসিক চাপ, জন্ম নিয়ন্ত্রণ ওষুধ খাওয়া, কিডনি সমস্যা প্রভৃতির কারণে উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়। রক্তচাপ সাধারণত শীতকালে বেড়ে যায় আর গ্রীষ্মকালে রক্তচাপ কমে যায়। কারণ প্রকৃতির তাপমাত্রা কমে গেলে রক্তনালী সংকুচিত হয়। এতে শরীরে রক্ত সঞ্চালন করার সময় রক্তচাপ বেড়ে যায়। যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন অথবা এর আশঙ্কায় ভুগছেন তারা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কঠোর পরিশ্রম করার করা ভাবেন।
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, রক্তচাপ মাত্রা ১২০/৮০ থাকলে স্বাভাবিক বিবেচনা করা হয়। এর মাত্রা বেড়ে ১৪০/৮০ পর্যন্ত হলে উচ্চ রক্তচাপ এবং এর বেশি হলে অনাকাঙ্ক্ষিত ধরা হয়। তবে মনে রাখা উচিত রক্তচাপের এই মাত্রা কারো কারো ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ নির্দেশক নাও হতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ যেভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায়- অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে রক্তচাপ বেড়ে গেলে স্বাস্থ্যের মারাত্মক হানি ঘটতে পারে। তাই সবসময় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে।
১. পরিমিত লবণ খাওয়া: ডায়েটিশিয়ান, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য সচেতনরা সব সময় এটা বলে থাকেন যে অতিরিক্ত লবণ খেলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, এক ফোঁটা লবণ খেলেন তো এক ফোঁটা রক্তচাপ বাড়ালেন। তবে এটা ব্যক্তিভেদে ভিন্নও হতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ রোগীর ডায়েট
উচ্চ রক্তচাপে ভুগলে খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের দিকে নজর দিতে হবে। খাবারে লবণের পরিমাণ কমানোর পাশাপাশি প্রতিদিন আমাদের খাদ্যতালিকায় কী থাকছে সেদিকেও নজর দিতে হবে। স্বাস্থ্যকর খাবার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
নিম্নে কিছু খাবারের তালিকা তুলে ধরা হল যেগুলো খেতেও যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত। যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
কলা : কলাতে সোডিয়ামের মাত্রা কম থাকে। এছাড়া এতে উচ্চমাত্রায় পটাসিয়াম রয়েছে যা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। খাদ্যতালিকায় কলার সঙ্গে কেক, মধু, মিল্কশেক অথবা পাউরুটি রাখতে পারেন।
শাক : সবুজ শাক-সবজিতে ক্যালোরি কম থাকে। এতে উচ্চমাত্রায় আঁশ থাকে এবং পটাসিয়াম, ফলিড, ম্যাগনেসিয়ামের মতো পুষ্টি উপাদান রয়েছে। যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। শাক রান্না করেও আবার সালাদ অথবা স্যান্ডউইচ তৈরি করেও খেতে পারেন।
ওটমিল : এটি সম্পূর্ণ শস্য দানাযুক্ত খাবার যাতে আছে ফাইবার, প্রোটিন এবং নানা রকম পুষ্টি উপকরণ। ওটমিল শরীরে রক্তচাপের মাত্রা ঠিক রাখে। এতে সোডিয়ামের মাত্রা কম থাকে। উচ্চ এবং নিম্ন রক্তচাপ রোগীর ডায়েটে ওটমিল গুরুত্বপূর্ণ।
অ্যাভাকোডা: এতে থাকা অলিক এসিড উচ্চ রক্তচাপ কমায় এবং শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখে। অ্যাভাকোডায় পটাশিয়াম ও ফলিড উপাদান রয়েছে যা হার্ট সুস্থ রাখে। এটি ভিটামিন এ, কে, বি ও ই রয়েছে। এছাড়াও এতে প্রচুর আঁশ থাকে।
তরমুজ: এতে থাকা অ্যামিনো এসিড উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। তরমুজে থাকা আঁশ,লাইকোপেন, ভিটামিন এ এবং পটাসিয়াম হার্ট সুস্থ রাখে।
বীট-পালং: নাইট্রেট সমৃদ্ধ এই সবজি শরীরে রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখে এবং রক্ত প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। ২০১২ সালে এক গবেষণায় দেখা গেছে, এক গ্লাস বীট জুস দশমিক পাঁচ ফোঁটা রক্ত উৎপাদন করে।
কমলা লেবু: ভিটামিন সমৃদ্ধ ফল। এটি উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। আঁশযুক্ত এই ফলে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে।
গাজর : গাজরে পটাসিয়াম এবং বিটা ক্যারোটিন রয়েছে যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে কার্যকরী। গাজরের জুস রক্তচাপের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। এমনকি গাজর কিডনি এবং হার্টের কার্যক্রম ঠিক রাখার নিয়ামক।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি