২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৬:৪৬

হাত-পায়ের তালুতে ঘাম প্রতিরোধে ঘরোয়া সমাধান

স্বাস্থ্য ডেস্ক:

শুধু গরমকাল নয়, কনকনে শীতেও অাপনার হাতের তালু ঘামে ভিজে একাকার হয়ে যায়! সমস্যা কেবল হাত মেলানোতেই সীমাবদ্ধ থাকে না; কম্পিউটারে টাইপ করতে গেলে, কলম দিয়ে কিছু লিখতে গেলে অথবা প্রয়োজনীয় কোনো কাগজ আপনি ধরেছেন মানেই সেটা আপনার হাতের ঘামে ভিজে খারাপ অবস্থা তৈরি হয়।

আবার পায়ের তালুও অতিরিক্ত ঘেমে যায়। যতক্ষণ জুতা পায়ে আছে, ঠিক আছে; কিন্তু আপনি জুতা পায়ে থেকে খুললেই আশেপাশের মানুষজন কমতে শুরু করে অথবা তাদের নাকটা আড়াল করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

আজকের আয়োজনে থাকছে কী করে ঘরোয়াভাবে হাত-পায়ের তালুর এই অতিরিক্ত ঘাম প্রতিরোধ করা যায়-

অ্যাপেল সিডার ভিনেগার :

অত্যধিক হাত ও পায়ের তালু ঘামা থেকে মুক্তি পাওয়ার অন্যতম কার্যকর ঘরোয়া সমাধান দেয় অ্যাপেল সিডার ভিনেগার। এর প্রাকৃতিক অ্যাস্ট্রিঞ্জেন্ট উপাদান ত্বকের লোমকূপ টানটান করে অতিরিক্ত ঘাম নির্গত হওয়া বন্ধ করতে সাহায্য করে এবং শরীরের পিএইচ ভারসাম্য ঠিক রাখে।

রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আপনার হাত ও পা হালকা গরম পানি দিয়ে প্রথমে ধুয়ে নিন। এরপর তুলার সঙ্গে অপরিশোধিত অ্যাপেল সিডার ভিনেগার নিয়ে হাত ও পায়ের তালুতে লাগিয়ে সারারাত রাখুন এবং সকালে গোসলের পর সামান্য বেবি পাউডার লাগিয়ে নিন। তবে মনে রাখবেন, যদি আপনি সংবেদনশীল ত্বকের (সেনসিটিভ স্কিন) অধিকারী হন, সেক্ষেত্রে ভিনেগারের সাথে সমপরিমাণ পানি মিশিয়ে ব্যবহার করবেন।

আবার অ্যাপেল সিডার ভিনেগারের সাথে সমপরিমাণ গোলাপজল মিশিয়ে দিনে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করলেও উপকার পাবেন।

খালি পেটে কয়েক ফোঁটা মধুর সাথে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার গেলেও ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

পানি :

শরীর ঠাণ্ডা করতে এবং ঘাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পানি একটি চমৎকার উপাদান। বিশেষ করে যাদের শরীরের তাপমাত্রা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়, তাদের জন্য। হাত-পায়ের তালু ঘামা কমিয়ে আনতে সারাদিনে পর্যাপ্ত পানি পান করুন। এতে করে শরীর ঠাণ্ডা থাকবে এবং ঘাম প্রতিরোধ করবে। কমপক্ষে ২ থেকে ৩ লিটার পানি পান করুন শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে। সারাদিনে বিরতি দিয়ে বারবার পানি দিয়ে হাত ধোয়ার চেষ্টা করুন।

গোলাপজল :

হাত-পায়ের তালু ঘামা প্রতিরোধে গোলাপজলের তুলনা হয় না। দোকানে গোলাপজল কিনতে পাওয়া যায় অথবা আপনি ঘরে নিজেও এই গোলাপজল বানিয়ে নিতে পারেন। কিছু তাজা গোলাপের পাপড়ি এক কাপ পানিতে ১৫ মিনিটের মতো ফুটিয়ে নিন। এবার ছাঁকনিতে পানিটুকু ছেঁকে নিয়ে একটি এয়ার টাইট বোতলে সংরক্ষণ করে তুলার সাহায্যে এই পানি হাত-পায়ের তালুতে ব্যবহার করুন, উপকার পাবেন।

গ্রিন টি :

গ্রিন টি ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করে। এটি অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা কমিয়ে আনে প্রাকৃতিকভাবে লোমকূপ বন্ধ করার মাধ্যমে। প্রতিদিন দুই থেকে তিন কাপ গ্রিন টি পান করুন। আবার গ্রিন টির মধ্যে কিছু বরফ রেখে, সেই পানিতে কিছুটা তুলা ভিজিয়ে হাত ও পায়ের তালুতে ম্যাসাজ করলেও অতিরিক্ত ঘামভাব কমে।

বেকিং সোডা :

ত্বকের ক্ষারীয় প্রকৃতির জন্য হাত-পায়ের তালু ঘামা প্রতিরোধের অন্যতম সেরা ঘরোয়া উপাদান হচ্ছে বেকিং সোডা। গরম পানিতে তিন টেবিল চামচ বেকিং সোডা দিন এবং এই পানিতে আধা ঘণ্টার মতো হাত ডুবিয়ে রাখুন। পানির নিচে জমে থাকা বেকিং সোডার সাথে হাত ঘষুন এবং আধা ঘণ্টা হয়ে গেলে একটি শুকনা কাপড় দিয়ে হাত মুছে ফেলুন। পায়ের ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি অবলম্বন করুন।

ভুট্টার আটা :

প্রতিদিন ভুট্টার আটা হাত ও পায়ের তালুতে লাগালে, এটি অতিরিক্ত ময়েশ্চারাইজার শুষে নিয়ে হাত-পায়ের তালু শুষ্ক রাখে। এই ভুট্টার আটা ব্যবহারের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বলেই হাত-পায়ের তালু ঘামা সমস্যার ঘরোয়া উপাদান হিসেবে এটি অন্যতম।

এটি তৈরির নিয়ম-

-চার চা চামচ ভুট্টার মিহি আটা নিন।

-হাত ও পায়ের তালুতে এই মিহি আটা ঘষুন।

-সকালে ও রাতে একবার করে এই পদ্ধতি অনুসরণ করুন।

লেবুর রস :

আরেকটি কার্যকরী ঘরোয়া উপাদান হচ্ছে লেবুর রস। লেবুর রস ব্যবহার করার আরও একটি উপকারিতা হচ্ছে এর দারুণ সুগন্ধ প্রাকৃতিক ডিওডরেন্টের কাজ করে। কয়েক ফোঁটা লেবুর রস হাত-পায়ের তালুতে লাগিয়ে নিন। যদি আপনার ত্বক সেনসিটিভ হয়, সেক্ষেত্রে লেবুর রসের সাথে সামান্য পানি মিশিয়ে নিতে পারেন।

লেবুর রসের সাথে সামান্য লবণ মিশিয়ে হাত-পায়ের তালুতে ঘষতে থাকুন যতক্ষণ না এটি শুকিয়ে যায়, দেখবেন ঘাম সমস্যা অনেকটাই কমে আসবে।

টমেটোর রস :

টমেটোতে উচ্চ মাত্রায় সোডিয়াম রয়েছে, যা হাত ও পায়ের তালু শুষ্ক রাখতে সাহায্য করে। টমেটোর রস শরীরের তাপমাত্রা সঠিক রেখে অতিরিক্ত ঘাম প্রতিরোধ করে। তিন থেকে চারটি পাকা টমেটো নিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে স্লাইস করে কেটে নিতে হবে। ব্লেন্ডারে জুস বানিয়ে নিন এবং কয়েক সপ্তাহ প্রতিদিন এই জুস পান করুন।

সতর্কতা: একটানা দীর্ঘ দিন টমেটোর জুস পান করলে অনেক সময় কিডনিতে পাথর হওয়া সহ আরও নানা ধরণের শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। তাই কয়েক সপ্তাহ এই জুস পান করার পর আপনার হাত-পায়ের তালু ঘামার উপর কেমন প্রভাব ফেলছে সেটা পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নিন, পরবর্তীতে আরও টমেটো জুস পান করার প্রয়োজন আছে কিনা।

আলু :

আলু অতিরিক্ত ঘাম শোষণ করতে দারুণ কার্যকরী একটি উপাদান। একটি আলুর স্লাইস নিন এবং আপনার হাত ও পায়ের তালুতে ঘষুন। কিছু সময়ের জন্য রেখে দিন এবং পরে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। শুধু হাত-পায়ের তালুই নয়, আপনার শরীরের আরও অন্যান্য অংশ যেখানে অতিরিক্ত ঘাম হয়, সেসব অংশেও আলু ব্যবহার করতে পারেন।

আঙ্গুর :

তরতাজা আঙ্গুরের জুস অথবা পাকা আঙ্গুর হাত-পায়ের তালু ঘামা রোধের আরেকটি কার্যকরী ঘরোয়া সমাধান। আঙ্গুরে উচ্চ মাত্রায় জলীয় উপাদান রয়েছে, এই উপাদান শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। যাদের হাত-পায়ের তালু ঘামার সমস্যা রয়েছে, তাদের নিয়মিত পাকা আঙ্গুর অথবা আঙ্গুরের জুস খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

টিপস :

-যাদের হাত ঘামার সমস্যা রয়েছে, তারা সব সময় সাথে একটা রুমাল রাখুন, ঘামভাব হলেই হাত মুছে ফেলুন।

-চেষ্টা করতে হবে সব সময় ঢিলেঢালা ও নরম ধরনের পোশাক পড়তে, সুতির পোশাক সবচেয়ে বেশী উপযোগী।

-ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ঘন ঘন হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে।

-হাত ও পায়ে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৭ ৭:২৭ অপরাহ্ণ