২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১১:৫৯

রোহিঙ্গা হত্যাকান্ডে রাশিয়ার সমথর্ন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

রাশিয়া রোহিঙ্গা সঙ্কটকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয় দাবি করে বাইরের হস্তক্ষেপের বিপক্ষে অবস্থান জানিয়েছে। শুক্রবার এক বিবৃতিতে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভ তার সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন। খবর: তাস’র।

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের উদ্যোগ শুধু ধর্মীয় উত্তেজনা বাড়িয়ে দিতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘এটা মনে রাখা দরকার, একটি সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার ইচ্ছা কেবল আন্তঃধর্মীয় বিরোধ বাড়িয়ে দিতে পারে।’ গত ২৫ আগস্ট অন্তত ৩০টি পুলিশ চৌকি ও একটি সেনা ক্যাম্পে রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি বা আরসা’র যোদ্ধারা প্রবেশের চেষ্টা করে। এরপর থেকে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী রাখাইনে ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ অভিযানের নামে নির্বিচারে রোহিঙ্গাদের হত্যা, ধর্ষণ ও ঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে। ইতোমধ্যে তিন হাজারের অধিক রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে। আর নির্যাতনের মুখে ৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের ওপর ‘জাতিগত গণহত্যা’ চালানো হচ্ছে উল্লেখ করে রাখাইনের সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশ, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও ব্যক্তিত্ব রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এই নৃশংসতার নিন্দা জানিয়েছে। তারা অবিলম্বে রাখাইনের সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও প্রস্তাব করেছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মিয়ানমারকে অবিলম্বে সেনা অভিযান স্থগিত ও রোহিঙ্গাদের প্রতি সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। বুধবার তার ওই আহ্বানের পর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে অতিরিক্ত সহিংসতার খবরে উদ্বেগ জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাস হয়। নিরাপত্তা পরিষদে যে কোনো প্রস্তাব আটকে দেওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন পাঁচটি স্থায়ী সদস্যের মধ্যে চীন ও রাশিয়া মিয়ানমারের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত। শুরু থেকেই মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো নির্যাতনের অভিযোগ নাকচ করে আসছে। উল্টো দাবি করছে, রোহিঙ্গারাই এসবের জন্য দায়ী।

চীনের পর রাশিয়া মিয়ানমারের কণ্ঠে কণ্ঠ মেলাল। এর মধ্য দিয়ে রাশিয়া রোহিঙ্গা নিধনে দেশটির নেত্রী অং সান সু চি’র ক্ষমতাসীন সরকারকেই আশকারা দিল। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘মিয়ানমারের সঙ্কট সমাধানে মস্কো ধর্মীয় নেতাদের আলোচনার উদ্যোগ এগিয়ে নেওয়ার পক্ষে। এক্ষেত্রে মিয়ানমারের বহু জাতিগোষ্ঠীর মুসলিম কমিউনিটিকে প্রতিনিধিত্বকারী শীর্ষস্থানীয় সংগঠনগুলোর যৌথ বিবৃতিকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি, যারা ওই এলাকায় (রাখাইন) সশস্ত্র কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছি এবং ওই ধর্মের অনুসারীদের প্রতি উগ্রপন্থীদের উস্কানিতে ঝাপিয়ে না পড়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’ মারিয়া জাখারোভ জানান, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বাধীন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে মিয়ানমারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে মস্কো। এজন্য মিয়ানমারের সমাজকল্যাণমন্ত্রীর নেতৃত্বে কমিটি গঠনের কথাও উল্লেখ করেন।

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের নিজেদের বাড়িতে ফিরে যেতে কর্তৃপক্ষ সহায়তা করছে। প্রাপ্ত তথ্য মতে, প্রায় দুই হাজার মানুষ নিজেদের ঘরে ফিরেছে। অভিবাসন সঙ্কটের ভুক্তভোগীদের ক্ষেত্রেও একই পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে আমরা আশা করছি। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিমানে করে রাখাইনে খাবার, ওষুধ ও অন্যান্য ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয়দের সহায়তায় ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো মেরামত করা হচ্ছে।’ স্থানীয় ও বিদেশি সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের জন্য ওই এলাকার উত্তরাঞ্চলে সফরের আয়োজন করা হয়েছে।

দৈনিকদেশজনতা/ আই সি

প্রকাশ :সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৭ ১০:২৫ পূর্বাহ্ণ