মিয়ানমার সরকারের নির্যাতনের শিকার হয়ে সহায় সম্পদ হারিয়ে জীবন নিয়ে পালিয়ে আসা কয়েক লাখ নিরস্ত্র-অসহায় রোহিঙ্গা শরণার্থী এখন বাংলাদেশে। কক্সবাজার জেলার উখিয়া-টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তারা অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। এসব অনাহারী ও অসহায় মানুষের জন্য ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে অকুস্থলে যেতে চেয়েছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। গত ১২ সে সেপ্টেম্বর দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা সন্ধ্যায় কক্সবাজার পৌঁছেন। পরদিন ২২টি ট্রাক ভর্তি চাল, ডাল, পলিথিনসহ নানা ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে তারা উখিয়া রওয়ানা দিতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। গণমাধ্যমের খবর ও বিএনপি নেতাদের অভিযোগ থেকে জানা যায়, শরনার্থী ক্যাম্পে রওয়ানা দেয়ার মুহূর্তে কক্সবাজার জেলা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে ত্রাণবাহী ট্রাকগুলোর পথ রোধ করে দাঁড়ায় পুলিশ। কারণ জানতে চাইলে তারা জানায়, উপরের নির্দেশেই ট্রাক আটকানো হয়েছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন বলেছে, বিএনপির পক্ষ থেকে তাদেরকে আগে কিছুই জানানো হয়নি। তাই নেতৃবৃন্দকে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে শরনার্থী শিবিরে যেতে দেয়া হয়নি।
ঘটনাটি এতোটাই ন্যাক্কারজনক যে, এর নিন্দা করার ভাষা খুঁজে পাওয়া কঠিন। নিরন্ন নিঃসম্বল আর্ত মানুষের সাহার্য্যার্থে এগিয়ে যেতে যে সরকার বাধা সৃষ্টি করে সে সরকারের মানসিকতা নিয়ে কথা না তোলাই ভালো। প্রধানমন্ত্রী শরণার্থী শিবির পরিদর্শনকালে রোহিঙ্গাদের দুঃখ দেখে অশ্রু বিসর্জন দিয়েছেন। তার এই অশ্রু বিসর্জন আন্তরিক এটা আমরা বিশ্বাস করতে চাই। কিন্তু যখন দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দলটিকে আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে যেতে বাধা দেয়া হয়। তখন অনেক কিছুকেই মেকি মনে হয়।
সরকারের কর্তাব্যক্তিরা প্রতিনিয়ত রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে রাজনীতি না করার অন্যদেরকে, বিশেষ করে বিএনপি নেতাদেরকে নসিহত করে যাচ্ছেন। অথচ এ ইস্যুতে সবচেয়ে জঘন্য রাজনীতি তারাই করছে। বিএনপিকে ত্রাণ কাজে সম্পৃক্ত হতে বাধা দেয়া সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত পদক্ষেপ সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। এর মাধ্যমে সরকার আবারও প্রমাণ করলো তারা গণতন্ত্র, মানবতার কথা শুধু মুখেই বলে, অন্তরে লালন করে না। যদি তাদের নূন্যতম মানবিক মূল্যবোধ থাকতো তাহলে অসহায় মানুষদের সাহায্যার্থে এগিয়ে যেতে কাউকে বাধা দিতে পারতো না।
আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। সে সাথে রোহিঙ্গাদের নিয়ে সরকার যেন নোংরা রাজনৈতিক খেলায় মেতে না উঠে সে আহ্বান জানাই।