শরীয়তপুর প্রতিনিধি:
শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ওয়াপদা ঘাটে পদ্মানদীতে ৫০ জন যাত্রী ও স্টাফ নিয়ে ডুবে যাওয়া ৩টির লঞ্চের কোনটিই উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। বুধবার দুপুরে ২টি লাশ ভেসে উঠলে স্থানীয় জনতা সেগুলো উদ্ধার করে। স্থানীয়দের হিসেবে এখনো প্রায় ১৮ জন নিখোঁজ রয়েছেন। এদিকে নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধানে ঘাটে প্রতিনিয়ত ভিড় করছেন স্বজনরা। মঙ্গলবার বিকেলে বিআইডব্লিউটিএ উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় সনাক্ত করা মৌচাক-২ নামের লঞ্চটি উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়। বুধবার সকাল ১১ টায় ডুবুরী দল ও ফায়ার সার্ভিসসহ নৌ পুলিশ ছোট ছোট নৌযানে নিখোঁজ লঞ্চের অনুসন্ধানে কাজ করে। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো লঞ্চ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
লঞ্চ দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘রোববার রাত আনুমানিক সাড়ে ৩টায় মৌচাক-২ লঞ্চটি পাড়ে ভিড়ার পর বাচ্চা নিয়ে আমার স্ত্রী শাশুড়িসহ আমরা লঞ্চের কেবিনে ঘুমিয়ে পড়ি। ভোর ৫টায় উঠে আমি আমার স্ত্রীকে রেডি হতে বলে বাথরুমে যাই। এ ফাঁকে বিকট শব্দ হয়ে লঞ্চটি ডুবে যায়। আমাকে স্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে গেলে পরে আমি সাঁতরিয়ে তীরে উঠি। আমার স্ত্রীর লাশ পেলেও ছোট শিশু ও শাশুড়ির লাশ পাইনি।’
চাঁদপুর নৌ-পুলিশের এসপি সুব্রত কুমার হালদার জানান, এ পর্যন্ত তারা ২টি লাশ উদ্ধার করেছেন। এরমধ্যে একজন মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী পারভিন ও অপরজনের পরিচয় এখনো জানা যায়নি। বিআইডব্লিউটিএ’র সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের পরিচালক মো. শাহজাহান জানান, নদীতে স্রোত বেশি থাকার কারণে ডুবুরীরা নদীর তলদেশে যেতে পারছে না। স্বাভাবিক ভাবে ১.৫ কি.মি. স্রোতে ডুবুরীরা কাজ করতে পারেন। এখানে স্রোতের গতিবেগ ৭ দশমিকের উপরে। স্রোত কমলেই কেবল কাজ করা সম্ভব। তিনি আরো জানান, বুধবার সকাল থেকে সাইড স্ক্যানের মাধ্যমে অনুসন্ধান কাজ শুরু হয়েছে। লঞ্চগুলো সনাক্ত করতে পারলে প্রত্যয় উদ্ধার কাজ করবে।
জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হোসাইন খান বলছেন, ‘জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে নদীতে তীব্র স্রোত ও নদী ভাঙ্গনের কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। উদ্ধার অভিযান অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যে দুটি লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। আশাকরি শিগগিরই একটা সফলতা আসবে।’ স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার রাতে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী লঞ্চ মৌচাক-২ ও নারায়ণগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা এমভি নড়িয়া-২ ও মহানগর নামের আরো একটি লঞ্চ সোমবার রাত অনুমান ৪ টায় যাত্রী নামিয়ে ওয়াপদা ঘাটে নোঙ্গর করে রাখে। ভোর ৫টায় ৫০ জন যাত্রী ও স্টাফ নিয়ে তীব্র স্রোতের কারণে পাড় ধসে ৩টি লঞ্চ ডুবে যায়।
এ সময় কিছু যাত্রী সাতরে তীরে উঠতে পারলেও পারভিন বেগম ও তার ৫ মাসের শিশুপুত্র, পারভিনের মা ফখরুন্নেছা বেগম, রাসেল, স্বপন, তালুকদার, নড়িয়া -২ এর কেরানী সজল তালুকদার, সুকানি ছোরহাব হোসেন, গ্রিজার সাদেক আলী, লস্কর জয় বাড়ৈ, দোকানী রবিন ও মহানগরী লঞ্চের সুকানি সফিক, চালক শাহ আলম, গ্রিজার সালাহ উদ্দিন, লিটন শেখ, রিপন দাস, মানিক মাদবরসহ কমপক্ষে ২০ জন নিখোঁজ হন।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি