আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
লাল-হলুদে ছেয়ে গেছে বার্সেলোনা। তিল ধারণের ঠাঁই নেই। আকাশ থেকে দেখলে মনে হচ্ছে, লাল-হলুদের জমিনে জেগে উঠেছে প্রাণ। জনসমুদ্র থেকে লাখ লাখ কণ্ঠে ভেসে আসছে, স্বাধীনতা! স্বাধীনতা!!
আসলে কী হচ্ছে বার্সেলোনায়? বার্সেলোনা মানে ফুটবল। এ কি কোনো ফুটবল-উন্মাদনা? না। এটি স্বাধীনতাকামীদের উন্মাদনা। কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার দাবিতে লাখো মানুষ জড়ো হয়েছে স্পেনের স্বায়ত্তশাসিত ও ঐতিহ্যবাহী এই শহরে।
১১ সেপ্টেম্বর কাতালানদের জাতীয় দিবস। এ উপলক্ষে স্থানীয় সময় অনুযায়ী সোমবার বার্সেলোনায় জড়ো হতে থাকে লাখ লাখ মানুষ। মিছিল, স্লোগানে গমগম চারদিক। প্রকম্পিত বার্সেলোনার আকাশ। কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা চায় তারা।
স্বাধীনতার দাবিতে কাতালোনিয়ায় গণভোটের আর মাত্র তিন সপ্তাহ বাকি। সেই দাবির পক্ষে গণজাগরণ সৃষ্টি করতে জাতীয় দিবসকে বেছে নিয়েছে বার্সেলোনার স্বাধীনতাকামী সরকার।
স্পেনের কাতালোনিয়া অঞ্চলের চারটি স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশের একটি বার্সেলোনা। ধন-দৌলত ও ঐতিহ্যে স্পেনের, উপরন্তু ইউরোপের এক সমৃদ্ধ জনপদ এটি। বার্সেলোনা স্পেনের প্রদেশ হলেও বার্সেলোনাসহ কাতালোনিয়া অঞ্চলের কাতালান ভাষাভাষিরা নিজস্ব জাতীয় দিবস পালন করে থাকে। এবার স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোটের আগে কাতালানদের জাতীয় দিবস হওয়ায় এটি ভিন্ন রূপ নিয়েছে।
স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোট আয়োজনকে স্পেনের আদালত অবৈধ বললেও কাতালোনিয়া অঞ্চলের সবচেয়ে সমৃদ্ধ প্রদেশ বার্সেলোনার সরকার বলেছে, ভোট হবে। ভোটে যদি স্বাধীনতার পক্ষে রায় হয়, তাহলে কাতালোনিয়া অঞ্চল স্পেন থেকে বেরিয়ে স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। আগাম জরিপে দেখা যাচ্ছে, যদি গণভোট হয়, তাহলে স্বাধীনতার পক্ষে-বিপক্ষে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।
কাতালোনিয়া অঞ্চলের ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য স্পেনের চেয়ে আলাদা। যে কারণে স্পেনের সঙ্গে থাকলেও প্রচণ্ডভাবে তাদের নিজস্বতা রয়েছে। স্বায়ত্তশাসনের চেয়েও বেশি স্বাধীনতা ভোগ করে তারা। তবে কাতালানদের অভিযোগ, তাদের করের অর্থের মোটা অঙ্ক চলে যাচ্ছে মাদ্রিদে। তাদের অর্থে মাদ্রিদ ফুলে-ফেঁফে উঠলে কাতালোনিয়া বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে।
স্বাধীনতার পক্ষে সোমবারের এই জমায়েতে প্রায় ১০ লাখ লোক জড়ো হয়েছে বলে দাবি করেছে সংগঠকরা। কিন্তু স্পেন সরকারের দাবি, যতটা বলা হচ্ছে, সংখ্যাটা তত বড় নয়, অনেক কম।
২০০৮ সালে অর্থনৈতিক মন্দায় পড়ে নাজেহাল স্পেনে বেকারত্ব মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়। এর প্রভাব পড়ে কাতালোনিয়া অঞ্চলে। যে কারণে স্বাধীনতার পক্ষে দাবি আরো জোরালো হয়।
১৭১৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর স্পেনের কাছে পরাজিত হয় কাতালান বাহিনী। সেই থেকে স্পেনের সঙ্গে একীভূত হয়ে যায় কাতালোনিয়া অঞ্চল। ওই যুদ্ধে অনেক কাতালান শহীদ হন। তাদের স্মরণে ১১ সেপ্টম্বরকে জাতীয় দিবস হিসেবে পালন করে কাতালানরা।
তথ্যসূত্র : বিবিসি অনলাইন
দৈনিক দেশজনতা /এন আর