২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৭:৫৫

শোকে বাকরুদ্ধ রুপার পরিবার, মা হাসপাতালে

নিজস্ব প্রতিবেদক:

টাঙ্গাইলে গণধর্ষণের পর হত্যার শিকার কলেজছাত্রী রুপার বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে গোটা পরিবার। শোকে পাথর মা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আদরের বোনকে হারিয়ে বার বার জ্ঞান হারাচ্ছে দুই বোন পপি ও জিয়াসমিন।

নিহত জাকিয়া সুলতানা রুপা সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার বারুহাস ইউনিয়নের আসানবাড়ী গ্রামের মৃত জেলহক প্রামাণিকের মেয়ে। তিনি ঢাকা আইডিয়াল ল’ কলেজে পড়াশোনা করতেন। পাশাপাশি পড়াশোনা ও পরিবারের ব্যয়ভার বহন করতে ইউনিলিভার কোম্পানিতে চাকরি করতেন।

তাড়াশ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অসুস্থ মা হাসনা হেনা বলেন, ‘আমাকে এখন কে দেখবে। কে মা বলে ডাকবে। মেয়ে আমার অনেক বড় অফিসার হতে চেয়েছিল। খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করছিল। কষ্ট করে ছোট বোন ও ভাইদের খরচ চালাতো। ছোট ভাইকে প্রতিষ্ঠিত করবে বলে কথা দিয়েছিল। বোনকে ভাল ঘরে বিয়ে দিবে বলে আশা করেছিল। কিন্তু তার কোন আশাই পুরণ হলো না।’

মা, তিন বোন, দুই ভাইয়ের সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন রুপা। অকালে তাকে হারিয়ে পরিবারটি চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে রুপার বড় বোন জিয়াসমিন জানান, আকাশ ছোয়া স্বপ্ন ছিল তার বোনের। লেখাপড়া শেষ করে বড় উকিল হবে। কিন্তু মানুষ রূপী হায়েনারা তার সব স্বপ্ন পূরণ হতে দিল না। স্বপ্ন পূরণের আগেই পৃথিবী থেকে নির্মমভাবে শেষ করে দেয়া হলো তাকে।

তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সর্বশেষ বোনের সাথে তার কথা হয়। তার অসুখের কথা শুনে রুপা বলেছিল, ‘আপা আমি ঈদের ছুটে পেলেই তোমাকে রাজশাহী হাসপাতালে নিয়ে ডাক্তার দেখাবো। আর মাকেও ভাল ডাক্তার দেখাবো।’ কিন্তু তা আর হলো না। এখন মাকে ছোট ভাই-বোনকে দেখার মতো কেউ রইলো না।

রুপার ছোট বোন পপি বলেন, দুইবোন এক সাথে চাকরি করতাম। রুপা থাকতো শেরপুরে। আর আমি থাকতাম জামালপুরে। শুক্রবার দিন সকালে আপু ফোন দিয়ে বলল, আমি বগুড়া শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা দিতে যাচ্ছি। পরীক্ষা শেষে ময়মনসিংহ হয়ে শেরপুরে ফিরব। তিনি বলেন, বিকেল ৫ টার দিকে ফোন দিয়ে আপু বলে আমি ছোয়া পরিবহন গাড়িতে উঠছি। রাত ৮ টার দিকে ফোন দিলে আপু বলে আমি সিরাজগঞ্জ রোডে খাবার খাচ্ছি। আমি তাকে তাড়াশের বাড়ীতে যেতে বলি। কিন্তু আপু বলে অফিসে না গেলে চাকরি থাকবে না। এ বলেই আবার গাড়িতে উঠে।

পপি বলেন, রাত ১০ টার দিকে আমি ঘুমিয়ে পড়ি। অনেক রাতে আপুর বস আমাকে ফোন দিয়ে বলে রুপার ফোন বন্ধ, তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। সেই থেকে বার বার ফোন করলে আপুর ফোন বন্ধ পাই। তিনি বলেন, শনিবার সকালে পত্রিকায় ছবি দেখে মধুপুর থানায় গিয়ে আমার বড় ভাই হাফিজুর আপুর ছবি দেখে শনাক্ত করেন। বাসের চালক-হেলপাররা আপুকে ধর্ষণের পর মাথা থেতলে হত্যা করেছে।

রুপার পাঁচ বছর বয়সী ভাতিজা হুমায়রা খাতুন হিমু বলেন, ফুফি আমাকে খুব আদর করত। চকলেট, জামা-কাপড় কিনে দিতো। এখন আমাকে আর আদর করবে না-কোলেও নিবে না। আমার ফুফুকে যারা হত্যা করেছে তাদের ফাঁসি দাবি করলো এই ছোট্ট শিশুটিও।

দোষীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবিতে ফুঁসে উঠেছে সিরাজগঞ্জ জেলার সাধারণ মানুষও। তাড়াশ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হক জানান, দেশে এখনো মেয়েরা নিরাপদ নয়। রাস্তাঘাটে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে মেয়েরা। রুপা ভাল মেয়ে ছিল। রুপা হত্যা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে স্থানান্তরের মাধ্যমে বিচারকার্য সম্পন্ন করে আসামিদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি করেন তিনি।

সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহমেদ জানান, ঘটনাটি ন্যাক্কারজনক ও বেদনায়ক। প্রয়োজনীয় কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য টাঙ্গাইল পুলিশ প্রশাসনের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। রুপার পরিবারের পাশে সিরাজগঞ্জ প্রশাসন সবসময় থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দীকা জানান, সংবাদ পাওয়ার পরপরই উপজেলা প্রশাসনকে রুপার পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাদের নিরাপত্তাসহ সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হবে বলে তিনি জানান।

স্থানীয় সংসদ সদস্য ম ম আমজাদ হোসেন মিলন রুপার ছোট বোনকে চাকরি দেয়ার আশ্বাস প্রদান করেন। বুধবার সন্ধ্যার দিকে রুপার আসানবাড়ীতে গিয়ে তিনি হত্যাকারীদের শাস্তি নিশ্চিত ও আইনী সহায়তা দেয়ারও আশ্বাস দেন। পরে তিনি তাড়াশ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রুপার মার চিকিৎসার খোঁজখবর নেন।

দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ

প্রকাশ :আগস্ট ৩১, ২০১৭ ১:৩৫ অপরাহ্ণ