আগামী শনিবার সারাদেশে পালিত হবে পবিত্র ঈদুল আযহা। ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর আমাদের এ ধর্মীয় উৎসব। এ ঈদ কোরবানির ঈদ হিসেবে পরিচিত। আজ থেকে পাঁচ হাজার বছর আগে মুসলমানদের জাতির পিতা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) তার প্রাণাধিক প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আঃ) কে আল্লাহর নামে উৎসর্গ করতে গিয়ে ঈমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তারপর থেকেই ঈমান ও আকীদার প্রমাণ হিসেবে মু’মীনদের মধ্যে কোরবানীর রেওয়াজ চালু হয়ে যায়। আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আল্লাহপাক কোরবানী ওয়াজেব করে দিয়েছেন। জিলহজ্ব মাসের ১০,১১ ও ১২তারিখই কোরবানীর নির্দিষ্ট সময়। এ উপলক্ষে প্রতি বছর জিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আযহা উদযাপিত হয়ে আসছে। ঈদুল আযহার দিনে ধনী-গরীব, সবাই এক শামিয়ানার নিচে এক কাতারে দাঁড়িয়ে রোনাজারি করবে নিজেদের কৃতকর্মের গোনাহ-খাতার মাফ চাইবে। তারপর সর্বোচ্চ সামর্থ অনুসারে কোরবানী দিয়ে মহান আল্লাহর প্রতি আনুগত্য-ভালোবাসা প্রকাশ ও ত্যাগ স্বীকার করে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করবে।
পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন। নেতৃবৃন্দ তাদের বাণীতে দেশবাসীসহ বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ্্র সবাইকে ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এবং সবার সুখ ও শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেছেন। তারা কোরবানীর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে দেশ ও জাতির কল্যানে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে উদ্বুদ্ধ হতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
আল্লাহপাক যুগে যুগে তার বান্দাদের নানা ছলে পরীক্ষা করে থাকেন। বিশ্ব-নিয়ন্তার সেই পরীক্ষার পরই এক মহিমান্বিত রূপ হচ্ছে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর দেয়া কোরবানীর ঘটনা। যতদিন দুনিয়ায় মু’মীনের অস্তিত্ব থাকবে, ততদিন পর্যন্ত তাঁর এই মহান দৃষ্টান্ত অনুসৃত হবে। তবে এই ত্যাগ যতোটা স্বত্ত্ববর্জিত হবে ত্যাগের সঙ্গে বাস্তব জীবনাচরণের যতটা ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ স্থাপিত হবে, ততোটাই তা সার্থকতা লাভ করবে। কারণ এই ত্যাগ মূলত একটি শিক্ষা। মহা মনীষীদের ত্যাগ ও ভালোবাসার শিক্ষা দিয়ে তাদের দ্বারা আল্লাহপাক এই ধর্মে শান্তি ও শৃংঙ্খলার প্রতিষ্ঠা দেখাতে চান। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, হলো আমাদের এই সমাজে একশ্রেণীর মানুষ কোরবানীর আধ্যাত্মিক শিক্ষা ভুলে যেতে বসেছে। আল্লাহর রাহে কোরবানী না দিয়ে কেউ কেউ নিজের সামাজিক প্রতিপত্তি বা মর্যাদা বৃদ্ধির উপায় হিসেবে ব্যবহার করতে গিয়ে ঈদ উৎসবকেও তারা পর্যবসিত করছে কেবল লোক দেখানো অনুষ্ঠানে বিত্ত-বৈভবের এর গরিমায় এরা ঈদ এবং কোরবানীর মূল উদ্দেশ্যের বিপরীত কর্মই সাধন করে চলেছে। কোরবানী মানে তো শুধু মুখে দোয়া দরূদ উচ্চারণ করে পশু জবাই করা নয়, বরং পশুর জীবন উৎসর্গ করার সঙ্গে স্বীয় অন্তরের হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-মোহ, মদ-মাৎসর্য, অহংকার পরিত্যাগ করাই এর প্রধান দীক্ষা। কোরআন পাকে আল্লাহ পরিস্কার বলেছেন, ‘‘তোমাদের কোরবানীর পশুর রক্ত ও গোশত আমার কাছে পৌঁছে না, আমি দেখি তোামাদের অন্তর বা তাকওয়া।
এসব কারণেই কোরবানীর বিষয়ে আমাদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। অন্তর পরিস্কার করে সমর্পিত হতে না পারলে, আল্লাহর নির্দেশ মতো নিজের নফসকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ওই ঈদ উদযাপন ও কোরবানী দানে কোনো ফায়দা নেই আল্লাহর ধিক্কার ও অসন্তুষ্টিই নেমে আসতে পারে। সুতরাং এটা বিশেষভাবে স্মরণ করা প্রয়োজন যে, ধর্মীয় উৎসব ব্যক্তিগত তরাক্কী লাভের বিষয়মাত্র নয়। আল্লাহ-অবশ্যই তার প্রিয় বান্দাকে তরক্কী দান করবেন, কিন্তু আল্লাহর সেই সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য মানুষের প্রতি তার দায়িত্ব পালন করতে হবে। আল্লাহর বান্দার প্রতি ভালোবাসা, সহমর্মিতা প্রকাশ করার মধ্যদিয়ে তার সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব। কোরবানীর মধ্যে সেই শিক্ষাও রয়েছে। শরীয়তের বিধান অনুযায়ী কোরবনীর গোশতের একটি প্রধান অংশ আত্মীয়-স্বজন,পাড়া-প্রতিবেশি এবং গরীব-মিসকিনদের মধ্যে বিলি করে দিতে হয়। এই বিধান-অনুসরণ করলে আত্মীয়তা ও সামাজিক বন্ধন সুদৃঢ় হয়; সামাজিক মূল্যবোধ ও দায়িত্ব সচেতনতাও সৃষ্টি হয়। জাগতিক শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সেটাই-আল্লাহপাক কামনা করেন।
তাই আমরা যেন আল্লাহপাকের ইচ্ছাকে উপলব্ধি করে খাস নিয়তে ঈদ ও কোরবানীর উৎসব সম্পন্ন করতে পারি, সে ব্যাপারে আমাদের গভীরভাবে সজাগ থাকতে হবে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে এবারও সারা দুনিয়ার কোটি কোটি মুসলমান আল্লাহর রাহে কোরবানী দেবে, ঈদগাহে মিলিত হয়ে হাত তুলে মুনাজাত করবে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ ও মুক্তির জন্যে। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে আমরা বাংলাদেশসহ বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করি। সবাইকে শুভেচ্ছা জানাই। ঈদ মোবারক।