২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সন্ধ্যা ৬:৩০

৮ শতাধিক রোহিঙ্গা হত্যার দাবি, রেহাই পাচ্ছে না শিশুরাও

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাখাইনে রোহিঙ্গা নর-নারী ও শিশুদের প্রতি অমানবিকভাবে গুলি চালিয়ে নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সম্প্রতি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সহিংসতায় দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে আলজাজিরা।

মিয়ানমার সরকারের হিসাবেই বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু হওয়া সেনাবাহিনীর অভিযানে এখন পর্যন্ত একশ’র কাছাকাছি রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। রাখাইন রাজ্যে পুলিশ ক্যাম্পে রোহিঙ্গা সলভেশন আর্মির হামলার পর থেকে এ অভিযান শুরু হয়। জানা যায়, মংডু, বুথিডং, রাথেডং এলাকার আট লাখ মানুষ বসতিকে ঘিরে ‘সন্ত্রাসবাদ’র বিরুদ্ধে এ অভিযান চালায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী। সেখানে সকাল-সন্ধ্যা কারফিউ জারি করা হয়েছে ইতোমধ্যে।

কিন্তু রোহিঙ্গা সমর্থন সূত্রে আল জাজিরা জানায়, সেনাবাহিনীর হামলায় সেখানে মুসলিম সংখ্যালঘুর অনেক নারী ও শিশুসহ অন্তত ৮০০ মানুষ নিহত হয়েছে। মংডু বাসিন্দা আজিজ খান বলেন, ‘সেনাবাহিনী শুক্রবার সকালে তার গ্রামে হামলা চালায় এবং সাধারণ জনগণের গাড়ি ও বাড়ি লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি চালায়।’  তিনি জানান,’সরকারী বাহিনী এবং সীমান্ত পাহারা পুলিশ আমার গ্রামের অন্তত ১১ জনকে হত্যা করে। তারা সেখানে পৌঁছে নির্বিচারে গুলি চালানো শুরু করে। কিছু সৈন্যরা সেখানে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুও ছিল। তারা শিশুদের পর্যন্ত রেহায় দেয়নি।’ রোহিঙ্গা সংগঠক এবং ইউরোপের একজন অনলাইন লেখক রো নাই সান লউইন বলেন, ‘সাম্প্রতিক হামলায় পাঁচ থেকে দশ হাজার রোহিঙ্গাকে জোরপূর্বক তাদের ঘর থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।’

তিনি আরও জানান, ‘মসজিদ ও মাদ্রাসাসমূহ পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম খাদ্য ও আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। সরকার থেকে কোন সাহায্য নেই, তার পরিবর্তে জনগণের বাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে এবং তাদের সম্পদ লুট করা হয়েছে।’

আলজাজিরাকে মেইউন্ট লউইন ছদ্মনামে বুথিডঙ্গের এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, ‘মানুষ হোয়াটস আপের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের দৃশ্য প্রকাশ করছে। সেখানে দেখা গেছে, সেনাবাহিনীর হামলায় নারী ও শিশুরাও রেহায় পাচ্ছে না। নিরীহ মানুষ মারা যাচ্ছে তাদের গুলিতে।’

তার কথার সূত্র ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রাপ্ত বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা গেছে, শত শত নারী, পুরুষ ও শিশু শুধুমাত্র এক কাপড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে এবং শস্যক্ষেতে আশ্রয় খুঁজছে। রোহিঙ্গা সশস্ত্র গ্রুপ কর্তৃক সীমান্তে হামলায় ৯ পুলিশ সদস্য নিহতের ঘটনায় অং সান সু চি’র সরকার রোহিঙ্গা গ্রাম এবং বসতিগুলোতে কয়েক হাজার সৈন্য প্রেরণ করেছে। তাদের বিরুদ্ধে অগ্নিসংযোগ, হত্যাকাণ্ড এবং ধর্ষণের অভিযোগসহ বলা হচ্ছে ইতিমধ্যে ৮৭,০০০ এরও বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে তারা ।

মানবাধিকার সংগঠন ফোর্টফাইট রাইটস এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ম্যাথিউ স্মিথ বলেন,’সব রোহিঙ্গার প্রতিই আক্রমণকারী যোদ্ধা হিসেবে আচরণ করছে কর্তৃপক্ষ।’ তার মতে, ‘সরকারের এ আচরণ যে কোন প্রকারে সন্দেহজনক।’

রোববার তিনি আলজাজিরাকে বলেন, ‘রাখাইনে জাতিসংঘের সংকট নিরসনের মিশনকে সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে সরকার এবং সেইসাথে তাদের বিরুদ্ধে নিরস্ত্র সাধারণ জনগণের ওপর সামরিক হামলা চালানোর অভিযোগ রয়েছে।’ তিনি আরও জানেন,’বেশিরভাগ লোকই পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। তাদের জরুরী নিরাপত্তা সুরক্ষা প্রয়োজন কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাদেরকে কোন ধরণের সহায়তা দিচ্ছে না।’

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের জনগোষ্ঠীর ১.১ মিলিয়নই রোহিঙ্গা। এ রাজ্যে অধিক জনসংখ্যার এ জনগোষ্ঠী প্রচণ্ড দারিদ্রতার মধ্য বসবাস করে এবং বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠদের ব্যাপক বৈষম্যের মুখোমুখি হয়। সেখান থেকে বিভিন্ন সময়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা কয়েক প্রজন্ম ধরে বাংলাদেশে বসবাস করে আসলেও সেখানে তাদেরকে অবৈধ অভিবাসী জনগোষ্ঠী হিসেবেই গন্য করা হয়। সরকার তাদেরকে রাষ্ট্রহীন বলে চিহ্নিত করে এবং জাতিসংঘের মতে, তারা সেখানে জাতিগত নিধন চালাচ্ছে যদিও অং সান সু চি এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ

 

প্রকাশ :আগস্ট ২৮, ২০১৭ ১:১২ অপরাহ্ণ