নওগাঁ প্রতিনিধি:
নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায় চোর সন্দেহে হেলাল হোসেন(৩৫) নামে এক যুবক স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মারপিটে নিহত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। রবিবার বিকেলে উপজেলা সদর ইউনিয়ন পরিষদে এ ঘটনা ঘটে। হেলাল হোসেন কোলা ইউনিয়নে গয়রা গ্রামের মৃত আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার দিবাগত রাতে উপজেলার সাতগাছি গ্রামে গভীর নলকুপের ট্রান্সফর্মার চুরির ঘটনাঘটে। রবিবার সকালে এ বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়। সাতগাছি গ্রামে প্রবেশের রাস্তার পাশে আদিবাসী রনজিত ও তার স্ত্রী সারথি একটি খড়ের স্তুপটি (খড়ের পালার) শুকানোর জন্য জন্য মেলে দিচ্ছিলেন। দুপুরের দিকে হেলাল হোসেন সেখানে গিয়ে তার একটি ব্যাগ খড়ের পালার কাছে ছিল বলে খোঁজাখুজি করছিল। এনিয়ে তাদের মধ্যে সন্দেহ দেখা দেয়। পরে স্থানীয়রা তাকে আটক করে গভীর নলকুপের পরিচালক সাবেক মেম্বার গোলাম মর্তূজা রেজা চৌধূরীকে সংবাদ দেয়া হলে তিনি ঘটনাস্থলে এসে হেলালকে লাঠি দিয়ে মারপিট করে। এরপর উত্তেজিত জনতা দুপুর পর্যন্ত মারপিট করে। পরে গোলাম মর্তূজা রেজা চৌধূরী বিকেলে বদলগাছী সদর ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে এসে চেয়ারম্যানের জিম্মায় দেন।
এসময় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম, বদলগাছী থানা কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সাধারন সম্পাদক খোরশেদ আলম, মেম্বার আনিছুর রহমানসহ কয়েকজন মেম্বার হেলাল হোসেনকে ইউনিয়ন পরিষদের একটি ঘরে তুলে মারপিট করে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এতে হেলাল হোসেন মারাত্বক অসুস্থ হয়ে পড়লে জনপ্রতিনিধিরা চৌকিদারকে দিয়ে তাকে হাসপাতালে পাঠিয়ে কৌশলে সটকে পড়ে তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শী এক ব্যাক্তি বলেন, রবিবার মাগরিবের আজানের পর ইউনিয়ন পরিষদের একটি ঘর থেকে চিৎকারের শব্দ শুনা যাচ্ছিল। এসময় কাছে গিয়ে দেখি শব্দ বন্ধ করার জন্য হেলালের মুখ কাপড় দিয়ে বাঁধা হচ্ছিল। আর চৌকিদার দেলোয়ার হোসেন মারপিটের জন্য লাঠিগুলো এগিয়ে দিচ্ছিলেন। কয়েক মিনিটের মধ্যে চারটি লাঠি ভাঙতে দেখেছি। এরপর ইউনিয়ন পরিষদের পাশের একটি হোটেল থেকে গরম পানি ও লবন নিয়ে যেতে দেখেছি। তবে মেম্বার আনিছুর রহমান সবচেয়ে বেশি মারপিট করেছে।
নিহতের বড় ভাই বেলাল হোসেন বলেন, চুরি করলে চোরের বিচার হবে। কিন্তু মারপিট করে মেরে ফেলার কোন নিয়ম নাই। আমার ভাই চোর না। ওই এলাকায় সে বন্যার পানি দেখার জন্য গিয়েছিল। তাকে সন্দেহমূলক আটক করে মারপিট করে মেরে ফেলা হয়েছে। এহত্যা কান্ডের সাথে যারা জড়িত তাদেরকে আটক করে এর সুষ্ঠু বিচার দাবী করছি।
বদলগাছী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. রুহুল আমিন বলেন, রবিবার রাত ৮টার দিকে এক চৌকিদার তাকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসে। প্রাথমিক অবস্থায় তার পেশার কমছিল এবং শ্বাসকষ্টে ভুগছিল। এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে তাকে ইসিজি করা হচ্ছিল। ইসিজি করা অবস্থায় হেলাল হোসেন মারা যায়। তবে ময়নাতদন্ত করলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।
বদলগাছী থানা কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সাধারন সম্পাদক খোরশেদ আলম বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে একটা কাজে গিয়েছিলাম। তখন পরিষদের একটি ঘরে হেলাল হোসেনকে বিভিন্ন ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল। তখন কোন মারপিটের ঘটনাঘটেনি বা আমিও মারপিট করিনি। আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। যা সম্পন্ন মিথ্যা।
বদলগাছী সদর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম এর মোবাইল ফোনে বার বার যোগাযোগ করা হলেও ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
বদলগাছী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জালাল উদ্দীন বলেন, চুরির ঘটনায় জনতা হেলাল হোসেনকে মারপিট করে চৌকিদারের মাধ্যমে হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। সোমবার সকালে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য নওগাঁ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় চুরি ও হত্যাসহ পৃথক দুইটি পৃৃথক মামলার প্রক্রিয়া চলছে।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ