আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের রাখাইন রাজ্যে পুলিশ পোস্টে হামলার পর নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ৯৬ জনে দাঁড়িয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৮২ জন সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম আর ১২ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য রয়েছেন। খবর: এবিসি, আলজাজিরা ও মিজিমা’র। গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের পর রোহিঙ্গা যোদ্ধারা পুলিশ পোস্টে হামলা ও একটি সেনাঘাঁটিতে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করলে এ সংঘর্ষ হয়।
রোহিঙ্গাদের ওপর থেকে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার এবং তাদের নাগরিকত্ব প্রদানে জাতিসংঘের সাবেক প্রধান কফি আনানের নেতৃত্বাধীন একটি প্যানেলের আহ্বানের কয়েক ঘণ্টা পরই এ হামলার ঘটনা ঘটে। আরাকান রোহিঙ্গা সলভেশন আর্মি (এআরএসএ) এক টুইট বার্তায় হামলার দায় স্বীকার করেছে। মিয়ানমার বাহিনীর বিরুদ্ধে হত্যা ও ধর্ষণের অভিযোগ এনে এআরএসএ জানায়, তারা ২৫টির বেশি এলাকায় আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
সংগঠনটি দাবি করে, রাখাইনের উত্তরাঞ্চলীয় রাথেতুয়াং শহর এলাকা গত দুই সপ্তাহ ধরে অবরুদ্ধ। সেখানে রোহিঙ্গারা না খেয়ে মারা যাচ্ছেন। মাউংদোতেও তারা যখন একই কাজ করতে যাচ্ছিল, তখন বার্মিজ উপনিবেশিক বাহিনীকে হটাতে চূড়ান্ত পর্যায়ে এই পদক্ষেপ নিয়েছি। এরপর শুক্রবার ও গতকাল শনিবার রাখাইনের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত মাওন তাও, বুথিডাং ও রাথেডংসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক অভিযান চালায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।
এ সময় তারা হাজার হাজার ঘরবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। অনেক এলাকায় তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে রোহিঙ্গা যোদ্ধারা। এখনও বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চলছে। হাজার হাজার রোহিঙ্গা আটক হয়েছেন। বাস্তুচ্যুত হয়েছে অন্তত ৫০ হাজার রোহিঙ্গা। অভিযানের মুখে প্রাণ বাঁচাতে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থান নিয়েছেন। সেখানেও তাদের ওপর গুলি চালিয়েছে মিয়ানমারের সীমান্ত পুলিশ বিজিপি।
বাংলাদেশের সীমান্ত বাহিনী বিজিবি জানিয়েছে, সীমান্তে হাজারো রোহিঙ্গা অবস্থান নিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছেন। তবে বিজিবি সতর্ক থাকায় তারা প্রবেশ করতে পারছেন না। আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে, শনিবার দুপুরের পরে সীমান্তে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা নারী-শিশুদের ওপর মিয়ানমারের সীমান্ত পুলিশ বিজিপি গুলি চালালে এক ভয়ানক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তাদের আর্তনাদের বাতাস ভারি হয়ে ওঠে।
কক্সবাজার বিজিবি কমান্ডার মঞ্জুরুল হাসান খান জানিয়েছেন, তিন হাজারের অধিক রোহিঙ্গা নাফ নদীর ওপারে সীমান্তে অবস্থান নিয়েছেন। গতবছরের অক্টোবরে একটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার ঘটনায় ৯ পুলিশ সদস্য নিহত হন। এরপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ব্যাপক অভিযান চালিয়ে রোহিঙ্গা এলাকায় হত্যাযজ্ঞ চালায়। তারা গ্রামের পর গ্রাম ঘরবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। জাতিসংঘসহ মানবাধিকার সংগঠন দাবি করে, সেনারা রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণও করেছিল।
সে সময়ে প্রায় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। তারা কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পে অবস্থান করছেন। নতুন করে সংঘর্ষের পরও কয়েক হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছেন। তাদের অনেকেই আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ