২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১১:৫৫

জাতীয় কবির ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী

নিজস্ব প্রতিবেদক:

আজ ১২ ভাদ্র ১৪২৪ বঙ্গাব্ধ। মেঘাচ্ছন্ন আকাশ আর বৃষ্টি ভেজা এমনই একদিনে পৃথিবী ছেড়েছেন আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। আজ তার ৪১তম মৃত্যুবর্ষিকী। ১৯৭৬ সালে এই দিনে সকাল ১০টার দিকে ঢাকার পিজি হাসপাতালে ১১৭ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জাতীয় কবি। দীর্ঘদিন চেতনাহীন নির্বাক থাকার পর ৭৭ বছর বয়সে ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দ্রোহ, প্রেম ও মানবতার কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিচরণ করেছেন সাহিত্যের সব শাখায়। সমাজ আর মানুষের সম্মান প্রতিষ্ঠাই ছিল তার দেশকালজয়ী সাহিত্য সৃষ্টির লক্ষ্য। বাংলা ভাষা-সাহিত্যকে নজরুল দিয়েছেন অমিত তেজ। দিয়েছেন নতুন শক্তি ও পথচলা। গোটা বাংলা সাহিত্যে নজরুল এক ব্যতিক্রমী কবিপ্রতিভা। নজরুল রবীন্দ্রনাথের প্রবল প্রভাব বলয় ছিন্ন করে সম্পূর্ণ ভিন্ন ভাবধারার কাব্য ও সাহিত্য সৃষ্টি করেছেন।

ধূমকেতুর মতো আবির্ভূত হয়ে সাহিত্যের সবকিছু যেন বদলে দিয়েছেন। প্রেম ও বিদ্রোহের পৌরুষদীপ্ত পদচারণা জাতিকে দিয়েছে নতুন পথের দিশা। ‘চির উন্নত শির’ এই কবি আমাদের জাতীয় মর্যাদার প্রতীক। ১৮৯৯ সালে অবিভক্ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে দুরন্ত এ শিশুটির জন্ম। কবিতা-গানে, প্রেমে-দ্রোহে সৃষ্টি সুখের উল্লাস এনে বিপুল সাড়া ফেলে দেয়া এই কবি এক সময় কঠিন রোগে আক্রান্ত হন।

১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে দৈনিক নবযুগে সাংবাদিকতা করার সময় কবি অসুস্থ হয়ে পড়েন। মস্তিষ্কের দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন বাক্যের জাদুকর এই চির অভিমানী কবি। তার অসুস্থতা সম্বন্ধে সুস্পষ্টরুপে জানা যায় ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে। অসুস্থ কবিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ২৪ মে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর বাংলা সহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব লজ’ ডিগ্রি প্রদান করা হয়। ১৯৭৬ সালে কবিকে দেয়া হয় অমর একুশে পদক। এ বছর ২৯ মে রবিবার কবির জীবনাবসান ঘটে। ১৯৭৬ সালে এই দিনে কবির মৃত্যুর খবরে ঢাকার রাস্তায় সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে। লাখো মানুষ কবির জানাযায় অংশ নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

তৎকালীন প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল জিয়াউর রহমানের দৃঢ় পদক্ষেপের কারণে আমাদের জাতীয় কবিকে বাংলাদেশের মাটিতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে সমাহিত করা হয়। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আলাদা বাণীতে নজরুলের আদর্শ ও চেতনায় উজ্জ্বীবিত হয়ে সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়েছেন।

কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে পালিত হচ্ছে বিভিন্ন কর্মসূচি। সারা দেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কবির জীবন ও কর্মকে স্মরণ করা হচ্ছে। বেতার টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। পত্র পত্রিকাগুলো বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছে জাতীয় কবির অবদানকে নিয়ে। আজ ভোরে ঢাকার সব পথের ঠিকানা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশে কবির মাজার। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতৃবৃন্দ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষসহ দলমত নির্বিশেষ সবার ফুলেল শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিক্ত হয় কবির মাজার।

দৈনিকদেশজনতা/ আই সি

প্রকাশ :আগস্ট ২৭, ২০১৭ ১০:৪৯ পূর্বাহ্ণ