২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৮:৫৬

জোড়া-তালি দিয়ে চলছে মহাসড়কের কাজ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জে শুধু মহাসড়ক নয়, আঞ্চলিক সড়কেরও বেহাল অবস্থা। প্রতিটি সড়ক খানাখন্দে ভরে গিয়ে মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে জোড়া-তালি দিয়ে চলছে এসব সড়ক-মহাসড়কের সংস্কার কাজ। এতে করে ঈদযাত্রায় ভোগান্তির আশঙ্কা করছেন পরিবহন মালিক, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ।

বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক ঘুরে দেখা যায়, জেলার হাটিকুমরুল মোড়, উল্লপাড়া, চান্দাইকোনা-ঘুড়কা ও হাটিকুমরুল-বনপাড়া সড়কের মহিষলুটি-খালকুলা মহাসড়কের বিটুমিন ও পাথরের মিশ্রণ প্রবল বৃষ্টিতে উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। হাটিকুমরুল মোড়ে কয়েক মাস আগে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার করার এক সপ্তাহ পর নতুন করে খানাখন্দ দেখা দেয়।

এসব মহাসড়ক দিয়ে ঢাকা, উত্তরবঙ্গ, রাজশাহী ও খুলনার দিকে প্রতিদিন প্রায় ১৫-১৬ হাজার যানবাহন চলাচল করে। ঈদের ছুটিতে সড়ক-মহাসড়কে গাড়ির চাপ বেড়ে যায়। জেলার বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক সড়কেরও একই অবস্থা। সয়দাবাদ-বেলকুচি-এনায়েতপুর সড়কের উপরিভাগের পাথর ও বিটুমিনের মিশ্রণ উঠে গিয়ে শতাধিক ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

একই অবস্থা শিয়ালকোল-নলকা, তাড়াশ-রানীহাটি-বারুহাস, তাড়াশ-নিমগাছী-ভুইয়াগাঁতী, উল্লাপাড়া-লাহিড়ী মোহনপুরসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কের। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বরাদ্দ নেই এমন অজুহাতে কয়েক বছর ধরেই সওজের রাস্তা সংস্কার ও মেরামত কাজে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। জোড়াতালির কাজ সারাবছর চললেও নেই টেকসই দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ও উদ্যোগ।

বাসচালক ফারুক আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, রাস্তা-ঘাটের বেহাল অবস্থা। রাস্তা-ঘাটের খানাখন্দে যেমন গাড়ির ক্ষতি হচ্ছে তেমনই ১ ঘণ্টার রাস্তা যেতে ৩ ঘণ্টা লাগছে। তারপর আবার সামনে কোরবানি ঈদ। তিনি বলেন, ‘সড়ক-মহাসড়ক যেভাবে জোড়াতালি দিয়ে কাজ করছে, দুইদিন বৃষ্টি হলেই আবার আগের রকমই হয়ে যাবে।’

ট্রাকচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সারাদেশে ট্রাক নিয়ে চলাচল করতে হয়। রাস্তার যে অবস্থা, মনে হয় গাড়ি উল্টে যাবে। আবার প্রতিটি ট্রিপে গাড়ি বিকল হয়ে আসছে। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হচ্ছে। ঈদ আসলে গাড়ির চাপ বেশি হয়। এবার কী যে দুর্ভোগে পড়তে হবে কে জানে।

ট্যাঙ্কলরির চালক আমজাদ আলী জানান, আমরা জ্বালানি তেলের গাড়ি চালাই। আমাদের তেল লোডের সময় দেয়া আছে। রাস্তার খানা-খন্দে সময় যেতে না পারায় তেল লোড করতে পারি না। সামনে ঈদ আর খানাখন্দে এবার খুব ভোগান্তি পোহাতে হবে।

ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা হানিফ এন্টারপ্রাইজের যাত্রী হাবিবা খাতুন বলেন, ‘বিশেষ কাজে ছেলেমেয়ে নিয়ে রংপুর দেশের বাড়িতে যাচ্ছি। আগমীকাল আবার ঢাকাতে ফিরব। কিন্তু এখনই রাস্তাঘাটের যে অবস্থা গাড়ি যেন হেলেদুলে চলছে। রাস্তার কাজের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে থাকতে হচ্ছে। এবার ঈদের ছুটিতে কি যে দুর্ভোগ পোহাতে হবে আল্লাহ জানে।’

সিরাজগঞ্জ (সওজ) অতিরিক্ত দয়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী মোফাজ্জল হয়দার সাংবাদিকদের জানান, কোরবানি ঈদ সামনে রেখে আমরা দ্রুতগতিতে সংস্কার কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু আবহাওয়ার প্রতিকূলতা কাজের গতি কমাতে পারে। আবহাওয়া ঠিক থাকলে আগামী ২৫ তারিখের মধ্যে মেরামতের কাজ শেষ হবে বলে তিনি জানান।

তিনি জানান, হাটিকুমরুল মোড়ে প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪টি সেকশন বা ভাগে ‘ক্লোভার-লিফ’ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া প্রায় ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নলকা থেকে সিরাজগঞ্জ শহর হয়ে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড়ে মুলিবাড়ি পর্যন্ত চার লেন রাস্তা নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে। এ জন্যই কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। তবে দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করা হবে বলে জানালেন এই কর্মকর্তা।

দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ

প্রকাশ :আগস্ট ২৩, ২০১৭ ১২:১৯ অপরাহ্ণ