২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ২:২৬

প্রধান বিচারপতিকে অপসারণের ক্ষমতা হাসিনা সরকারের নেই: ভারতীয় পত্রিকা

দৈনিক দেশজনতা ডেস্ক:

বাংলাদেশের সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ক্ষুব্ধ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার অপসারণ দাবি করলেও তাকে অপসারণের ক্ষমতা সরকারের নেই বলে জানিয়েছে ভারতের পত্রিকা দৈনিক যুগশঙ্খ।
শুক্রবার উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রভাবশালী পত্রিকা দৈনিক যুগশঙ্খের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্ষমতাসীন দল ও সরকার চাইলেও প্রধান বিচারপতিকে অপসারণ করতে পারবেনা। ইমপিচ বা অপসারণের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর নেই। কারণ গত ৩ জুলাই প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে হাইকোর্টের আপিল বিভাগ বাংলাদেশের সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে। এই রায়ের ফলে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা হারিয়েছে সরকার।
যুগশঙ্খের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম হিন্দু প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার অপসারণ দাবি করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দেশটির সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীকে বাতিলের রায় দেয়ায় প্রধান বিচারপতির প্রতি ক্ষুব্ধ শাসকদলের নেতারা এ দাবি করছেন। এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সুরেন্দ্র কুমারের প্রতি অসন্তুষ্ট বলে সূত্রের খবর। শেখ হাসিনা সম্প্রতি জন্মাষ্টমী উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতির নাম না উল্লেখ করে সমালোচনা করেছেন।
ওই অনুষ্ঠানে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেণ শিকদার বলেছেন, বাংলাদেশের সনাতনী সমাজ তার (এস কে সিনহা) সঙ্গে নেই। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী না হলে এস কে সিনহাও প্রধান বিচারপতি হতেন না। উনি (শেখ হাসিনা) আমাদের (হিন্দুদের) প্রধান বিচারপতি উপহার দিয়েছেন, আমরা কী দিয়েছি? বীরেণ শিকদার প্রধান বিচারপতির দিকে ঈঙ্গিত করে বলেন, ‘স্নেহ-ভালোবাসা পাবেন আর শ্রদ্ধা করবেন না; এটা তো হবে না।’
এরপরে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম আগস্টের মধ্যে প্রধান বিচারপতিকে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। নইলে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার হুমকি দিয়েছেন। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, প্রধান বিচারপতি বঙ্গবন্ধুকে অবমাননার মত ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন। আমরা তার অপসারণ চাই।
এদিকে গত কয়েকদিন ধরেই বাংলাদেশের সর্বত্র জল্পনা চলছে যে, প্রধান বিচারপতিকে অপসারণ করা হবে শিগগিরই। গত বুধবার রাতে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সঙ্গে দুই মন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেলকে সঙ্গে নিয়ে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই জল্পনার ডালপালা গজাতে থাকে।
তবে ক্ষমতাসীন দল ও সরকার চাইলেও প্রধান বিচারপতিকে অপসারণ করতে পারবেনা। ইমপিচ বা অপসারণের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর নেই। কারণ গত ৩ জুলাই প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে হাইকোর্টের আপিল বিভাগ বাংলাদেশের সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে। এই রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি দেশের রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি, সুশাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন। তাতে ‘বঙ্গবন্ধুকে কটাক্ষ ও অবমূল্যায়ন’ করা হয়েছে অভিযোগ করে রায়ে সংক্ষুব্ধ হন সরকারি দলের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং ক্ষমতাসীন দল ও জোটের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। যদিও রায়ের পর থেকে এটিকে ‘ঐতিহাসিক’ রায় বলে আসছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।
যুগশঙ্খের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রসঙ্গত, সততা, নিষ্ঠা ও প্রজ্ঞার কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে বিচারপতি এস কে সিনহাকে দেশটির সর্বোচ্চ আদালতের নেতৃত্ব দেন। অবসরের বয়স অনুযায়ী ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিচারপতি সিনহা প্রধান বিচারপতির পদে থাকবেন।

 

প্রকাশ :আগস্ট ১৯, ২০১৭ ৩:১০ অপরাহ্ণ