নিজস্ব প্রতিবেদক:
হাওরে অকাল বন্যার অজুহাতে দীর্ঘদিন ধরেই চালের বাজার অস্থির। এখন আবার দেশজুড়ে বন্যার কারণে শাকসবজি, মাছ-মাংসের দামও আকাশ ছোঁয়া। সেই সঙ্গে কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে বেড়েছে পেঁয়াজ-রসুনসহ প্রায় সব ধরনের মসলার দাম। নিত্যপণ্যের এমন লাগমহীন দাম বৃদ্ধিতে দিশেহারা রাজধানীর নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষেরা। শনিবার রাজধানীর রামপুরাতে বাজার করতে আসা চাকরিজীবী জাহিদ হাসান বলেন, ‘বন্যার অজুহাতে নিত্যপণ্যের বাজার অদৃশ্যশক্তির দখলে চলে গেছে। সরকার বা সিটি করপোরেশন কারও বাজারের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেই। সরকারের মন্ত্রীরা নানা কথা বললেও বাজারের বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে কোনো মিল নেই।’
তিনি বলেন, ‘সরকার বলছে চালের শুল্ক ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা হয়েছে। এ হিসাবে প্রতিকেজি চালে কমপক্ষে ১৩ টাকা কমার কথা ছিল। কিন্তু বাজারে চালের দাম একটি টাকাও কমেনি। আসলে বাজারের প্রত্যেকটি পণ্য এখন সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে। তারা যেভাবে চাইছে সেভাবেই পণ্যের দাম বাড়ছে।’
চালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চালের আমদানি শুল্ক কমলেও বিক্রি হচ্ছে আগের বাড়তি দামেই। বিআর২৮ চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৬ টাকায়।
এছাড়া মিনিকেট চালের দাম ৫৬ থেকে ৫৮ টাকা, মোটা চাল স্বর্ণা প্রতিকেজি ৪৬ টাকা, পাইজাম ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা, চায়না ইরি ৪৬ টাকা, পারিজা ৪৬ টাকা, নাজিরশাইল ৫৬ থেকে ৬২ টাকা, বাসমতি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, কাটারিভোগ ৭৮ টাকা, হাস্কি নাজির চাল ৫৪ টাকা এবং পোলাও চাল খোলা ৯০-১০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।
পেঁয়াজের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত এক মাসে ঢাকার বাজারে পণ্যটির দাম ১১৩ শতাংশ বেড়েছে। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ আকারভেদে সর্বনিম্ন ৬০ ও সর্বোচ্চ ৭০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে, যা এক মাস আগে ৩০-৩৫ টাকা ছিল।
অন্যদিকে ভারতীয় পেঁয়াজ মানভেদে ৫০-৫৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে, যা ছিল ২৫ টাকা। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১০ লাখ ৪১ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ৪৭ শতাংশ বেশি। সর্বশেষ জুলাই মাসে আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার টন পেঁয়াজ, যা আগের মাসের তুলনায় ৫৫ শতাংশ বেশি।
পেঁয়াজের পাইকারি বিক্রেতা আশরাফুল ইসলাম বলেন, কুরবানির ঈদের আগে পেঁয়াজের দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। সরকার পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে মিশর থেকে পেঁয়াজ আমদানি করার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু এই পেঁয়াজ আসতে কমপক্ষে দুই মাস লাগবে। ফলে ঈদুল আজহার আগে দাম কমছে না।
শনিবার দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায়, যা আগের সপ্তাহে ছিল ৯০ থেকে ১০০ টাকা। চীন থেকে আমদানি করা রসুন ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই রসুনের দামও কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। আদার দামও বেড়েছে প্রতিকেজিতে ১০ টাকা। চীন থেকে আমদানি করা আদা ১২০ টাকায় এবং দেশি আদা ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শুকনো মরিচের দাম ১০ টাকা বেড়ে ২০০ টাকা হয়েছে। অন্যান্য মসলার মধ্যে দারুচিনি ৩৬০, জিরা ৪৫০, লবঙ্গ ১৫০০, এলাচ ১৬০০ এবং হলুদ ১৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচাবাজারে ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে সবজির দাম কেজি প্রতি বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা। বাজারে ৬০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। ১০০ টাকার উপরে বিক্রি হচ্ছে শিম, টমেটো ও কাঁচামরিচের কেজি।
বেগুন, বরবটি, মুলা, পেঁপে, কাঁকরোল, করলা, ঝিঙা, চিচিঙ্গাসহ বেশিরভাগ সবজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা বা তারও বেশি দামে। এছাড়া শিম ১১০-১২০ টাকা, টমেটো ১৩০-১৪০ টাকা, কাঁচামরিচ ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১২০-১৩০ টাকা।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ