স্বাস্থ্য ডেস্ক:
তৃতীয় বিশ্বের দেশেগুলোতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার অনেক বেড়ে গেছে এবং এর সংখ্যা প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ। সম্প্রতি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে এই তথ্যই উঠে এসেছে।
হৃদরোগের ক্ষেত্রে অনেকাংশেই উচ্চরক্তচাপ সরাসরি ভাবে দায়ী৷ কিন্তু উচ্চ রক্তচাপের কোনো নির্দিষ্ট কারণ এখনও পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি৷ কিন্তু এমন কিছু ‘রিস্ক ফ্যাক্টর’ আছে যেগুলো উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রে অনুঘটক হিসেবে কাজ করে।
১. উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রে বয়স একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিও বাড়ে। আপনি যদি বয়স্ক ব্যক্তি হন তবে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আপনার ক্ষেত্রে অনেক বেশি। বয়স্ক ব্যক্তির ক্ষেত্রে হৃদ সংকোচন সংক্রান্ত রোগের ঝুঁকি অনেক বেশি। এক্ষেত্রে রোগীর ধমনিগুলো শক্ত হয়ে যায়।
২. আপনার পরিবারে আগে থেকে কারো উচ্চ রক্তচাপ থাকলে আপনার উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া উচ্চ রক্তচাপের কারণে কম বয়স থেকেই বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দিতে পারে৷
৩. পুরুষদের ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের প্রবণতা অধিক মাত্রায় চোখে পড়ে৷ তবে এতে নারীদের নিশ্চিন্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। মহিলাদের ক্ষেত্রেও এই রোগে আক্রন্ত হওয়ার যথেষ্ট সম্ভবনা রয়েছে৷ সুতরাং জীবনযাপন পদ্ধতি ও খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।
৪. উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা অন্যতম প্রধান কারণ হতে পারে। তবে বিষয়টি বিভিন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন প্রভাব ফেলে। যাদের পেট, নিতম্ব ও উরুতে অতিরিক্ত চর্বি জমে গেছে তাদের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে৷ কারণ এতে যেকোনো সময় উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন।
৫. কিছু মানুষ আছে যারা অতিরিক্ত পরিমাণে লবণ খান। এই প্রবণতা উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি করে। যারা অতিরিক্ত পরিমাণে লবণ খান তবে উচ্চ রক্তচাপ প্রতিহত করতে অবিলম্বে এই অভ্যেস ত্যাগ করুন৷ কোনো খাদ্য তৈরির সময় লবণের পরিমাণ সম্পর্কে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ার সময় লবণের পরিমাণ জেনে নিতে হবে। ফাস্ট ফুডে প্রচুর পরিমাণ লবণ ব্যবহার করা হয়, এ কারণে এই ধরণের খাবার খাওয়ার ব্যাপারে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে।
৬. আপনি যদি অতিরিক্ত অ্যালকোহলে আসক্ত হন তবে এটি বন্ধ করা উচিত। অতিরিক্ত অ্যালকোহল পানে আসক্ত হলে আপনার এবং আপনার সুস্থ জীবনযাপনের ক্ষেত্রে এটি বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। কাজেই আপনার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান করা থেকে বিরত থাকুন।
৭. অফিসের এবং অফিসের বাইরে বিভিন্ন কারণে আপনি যদি বেশি চাপ নিয়ে কাজ করেন, অতিরিক্ত চিন্তা করেন তবে এটি আপনার রক্তচাপকে বাড়িয়ে দিতে পারে। কাজেই চিন্তামুক্ত থাকুন। নিজকে শান্ত ও রিলাক্স রাখুন। চাকরির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত স্ট্রেস আপনার স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
৮. সম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত জন্ম নিরোধক পিল সেবন করলে উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রে মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে।
৯. অলস জীবনযাপন শুধুমাত্র আপনার শরীরে মেদ বৃদ্ধি করবে তা নয় এটি আপনাকে উচ্চ রক্তচাপের মুখোমুখি দাঁড় করাবে। যেকোনো ধরণের খেলা বা হাঁটাহাঁটির সঙ্গে যুক্ত থাকুন, শারীরিক কসরত উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি অনেকটাই দূরে রাখে।
১০. কিছু কিছু ওষুধ আছে যেগুলো ঠাণ্ডা অথবা অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেবন করা হয়। এতে উচ্চ রক্তচাপের সম্ভাবনা রয়েছে। ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রে সবসময় চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি