আজ প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, সংগঠক ও কথাসাহিত্যিক জহির রায়হানের জন্মদিন। তিনি ১৯৩৫ সালের এ দিনে ফেনীর মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বিশেষ এ দিন উপলক্ষে একাধিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে মউল্লেখযোগ্য হলো বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী আয়োজনে দুদিনব্যাপী ‘জহির রায়হান চলচ্চিত্র উৎসব’। শুক্রবার শুরু হয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে উৎসব । জহির রায়হান ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বাংলায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তার কর্ম জীবনের শুরু সাংবাদিকতা দিয়ে। ১৯৫৭ সালে এ জে কারদারের ‘জাগো হুয়া সাবেরা’ সিনেমায় সহকারী হিসেবে রূপালি জগতে পা রাখেন। ১৯৬১ সালে নির্মাণ করেন প্রথম সিনেমা ‘কখনো আসেনি’। ১৯৬৪ সালে পাকিস্তানের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র ‘সঙ্গম’ নির্মাণ করেন (উর্দু ভাষার ছবি) এবং পরের বছর তার প্রথম সিনেমাস্কোপ চলচ্চিত্র ‘বাহানা’ মুক্তি পায়।
জহির রায়হান ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন এবং ২১ ফেব্রুয়ারির ঐতিহাসিক আমতলা সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। ভাষা আন্দোলনের ছাপ দেখতে পাওয়া যায় তার বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘জীবন থেকে নেওয়া’ ছবিতে। তার একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়ে আলাদা একটা সিনেমা নির্মাণের পরিকল্পনাও ছিল। জহির রায়হান ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থানে অংশ নেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে কলকাতায় চলে যান, সেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রচারাভিযান ও তথ্যচিত্র নির্মাণ শুরু করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর জহির রায়হান ঢাকা ফিরে আসেন। পরের বছরের ৩০ জানুয়ারি মিরপুর যান নিখোঁজ ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে। এরপর তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
জহির রায়হানের উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে- কখনো আসেনি (১৯৬১), সোনার কাজল (১৯৬২), কাঁচের দেয়াল (১৯৬৩), সঙ্গম (১৯৬৪), বাহানা (১৯৬৫), আনোয়ারা (১৯৬৭), বেহুলা (১৯৬৬), জীবন থেকে নেয়া (১৯৭০), স্টপ জেনোসাইড (১৯৭১), এ স্টেট ইজ বর্ন (১৯৭১) ও লেট দেয়ার বি লাইট (অসমাপ্ত, ১৯৭০)। উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে শেষ বিকেলের মেয়ে (১৯৬০), হাজার বছর ধরে (১৯৬৪), আরেক ফাল্গুন (১৯৬৯), বরফ গলা নদী (১৯৬৯) ও আর কত দিন (১৯৭০)।
জহির রায়হান জীবদ্দশায় ও মৃত্যুর পর অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, নিগার পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক ও স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি