২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৩:১৬

বাণিজ্যিকভাবে হতে পারে টার্কি চাষ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

পাখির নাম ‘টার্কি’। চেহারায় আকারে অন্য অনেক পাখির চেয়েই দেখতে বড়। তাই এর শরীরে মাংসও একটু বেশিই। টার্কির মাংস যথেষ্ট পুষ্টিকর ও  খেতে বেশ সুস্বাদু। যাদের অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত মাংস খাওয়া নিষেধ তাদের জন্য টার্কি হতে পারে একটি আদর্শ খাদ্য।  বর্তমান বাজারে গরু কিংবা খাসির মাংসের দাম যে হারে বাড়ছে তাতে টার্কির মাংস হয়ে উঠতে পারে ভোজনপ্রিয়দের কাছে অন্যতম বিকল্প। সেই সুযোগটিই নিতে চান দেশে বাণিজ্যিকভাবে টার্কি মনোযোগী হওয়া অনেকেই।  টার্কি বাংলাদেশের জন্য নতুন বিষয় হলেও উত্তর আমেরিকা, ইউরোপসহ পৃথিবীর প্রায় সব দেশে টার্কি পালন করা হয়। পশ্চিমা দেশগুলোতে টার্কি অনেকটা জনপ্রিয়। সবচেয়ে বেশি টার্কি পালন করা হয় যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্যসহ প্রভৃতি দেশে। এসব ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের খাদ্যতালিকায় অন্যতম উপাদান এই পাখির মাংস। বাংলাদেশে সরকারিভাবে টার্কি চাষ না হলেও ব্যক্তি পর্যায়ে ব্যাপকভাবে প্রসার ঘটছে টার্কি চাষের। তবে এক্ষেত্রে দেখা যায় তরুণেরাই বেশি এগিয়ে আসছে। তথ্য-প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে তরুণেরা হয়ে উঠছে একেকজন উদ্যোক্তা। লালন-পালনে খরচ ও ঝুঁকি কম থাকায় টার্কি চাষে আগ্রহীদের সংখ্যাও দিনে দিনেই বাড়ছে।
ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে ওঠার ছয় মাসের মধ্যে টার্কি ডিম দেয়া শুরু করে। খাদ্য উপাদান ঠিক থাকলে বছরে একটি টার্কি ৮০ থেকে ১০০টি ডিম দেয়। ছয় মাসের মেয়ে টার্কির ওজন হয় পাঁচ থেকে ছয় কেজি। আর পুরুষগুলো প্রায় আট কেজি। মোখলেছ   বলেন, ‘এখন আমরা বাণিজ্যিকভাবে টার্কি চাষ শুরু করেছি। টার্কি চাষে অনলাইনে যাবতীয় বিষয় আমরা শেয়ার করছি। কেউ টার্কি চাষ কিংবা পালনে আগ্রহী হলে তাদের যথাসম্ভব সহযোগিতা করি।’ এ লক্ষ্যে চলতি বছরের শুরুতে প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে এক একর জায়গায় তিনটি শেড নির্মাণ করেছেন তিনি। ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর জন্য ইনকিউবেটর ক্রয়সহ রোগ মুক্ত রাখতে যাবতীয় ব্যবস্থাও গ্রহণ করেছেন। টার্কির স্বাদ জনগণের হাতে নাগালে পৌঁছে দিতে অল্প সময়ের মধ্যেই টার্কির মাংসের বিশেষ হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট চালুর চিন্তা করছেন ‘এটি একটি সম্ভাবনাময় খাত। টার্কির মাংস সুস্বাদু ও ফ্যাটমুক্ত হওয়ায় বিদেশে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কৃষি বিপ্লবের অন্যতম মাধ্যম হতে পারে টার্কি চাষ। কেননা টার্কির রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা অনেক বেশি। খাবার হিসেবে এরা সবুজ ঘাস তথা পালং, সরিসা, কলমি, হেলেঞ্চার সবুজ ডাটা, কচুরিপনা খেয়ে থাকে। যেসব খাবার আমাদের দেশে সহজেই পাওয়া যায়। টার্কি পালনে তেমন ঝামেলাও নেই।’একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বাণিজ্যিক খামার করলে এবং মাংস হিসেবে উৎপাদন করতে চাইলে ১৪ থেকে ১৫ সপ্তাহে একটি টার্কির গড় ওজন হবে ৫ থেকে ৬ কেজি। ৪শ টাকা কেজি দরে হিসেব করলেও একটি টার্কির বিক্রয়মূল্য দাঁড়াবে ২ হাজার টাকা থেকে ২৫শ টাকা। ১৪ থেকে ১৫ সপ্তাহ পালন করতে সর্বোচ্চ খরচ পরবে ১২শ থেকে ১৫শ টাকা।’বর্তমানে তার খামার থেকে পাইকারি ক্রেতারা টার্কি কিনে নিয়ে দোকানে দোকানে বিক্রি শুরু করেছেন বলেও জানা যায়।তবে সরবরাহ পর্যাপ্ত না থাকায় এখনও দাম একটু বেশি। সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপকভাবে টার্কি খাওয়ার প্রচলন শুরু হয়নি। সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপকভাবে এর চাষ শুর করতে পারলে পোল্ট্রি শিল্পের মত এটি একটি শিল্পে পরিণত হবে। বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানও হবে। এ খাতে সরকারের পৃষ্টপোষকতা পেলে এটিও হতে পারে রফতানি পণ্যের একটি উল্লেখযোগ্য খাত।
দৈনিকদেশজনতা/এন এইচ

 

 

প্রকাশ :আগস্ট ১৫, ২০১৭ ১২:৫২ অপরাহ্ণ