২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৬:২০

সাত খুন মামলা: হাইকোর্টের রায় পিছিয়ে ২২ আগস্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলায় ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিলের ওপর রায় ঘোষণার জন্য আগামী ২২ আগস্ট পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট। রোববার বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ দিন ধার্য করেন। এর আগে গত ২৬ জুলাই আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ও আসামিপক্ষে মামলার যুক্তি উপস্থাপন শেষে ১৩ আগস্ট রায়ের দিন ধার্য করেছিলেন।

ওইদিন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এ মামলার শুনানিতে সংশ্লিষ্ট আদালতের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ আদালতে বলেছিলেন, ‘এই মামলার ২১ জন সাক্ষী তাদের জবানবন্দিতে স্বীকার করেছেন এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আসামিরা জড়িত ছিলেন।’ এর আগে গত ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন আলোচিত সাত খুন মামলার ঘোষণা করেন।

রায়ে ৩৫ আসামির মধ্যে ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বাকি ৯ জন বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। আসামিদের মধ্যে ২৩ জন কারাগারে রয়েছেন।
রায়ে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত ২৬ আসামি হলেন- র‌্যাব-১১-এর সাবেক সদস্য চাকরিচ্যুত লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাসুদ রানা, হাবিলদার এমদাদুল হক, আরওজি-১ আরিফ হোসেন, ল্যান্স নায়েক হীরা মিয়া, ল্যান্স নায়েক বেলাল হোসেন, সিপাহি আবু তৈয়ব, কনস্টেবল মো. শিহাব উদ্দিন, এসআই পূর্ণেন্দ বালা, সৈনিক আবদুল আলীম (পলাতক), সৈনিক মহিউদ্দিন মুন্সী (পলাতক), সৈনিক আসাদুজ্জামান নূর, সৈনিক আল আমিন (পলাতক), সৈনিক তাজুল ইসলাম (পলাতক), সার্জেন্ট এনামুল কবীর (পলাতক)।
আর মৃত্যুদণ্ড পাওয়া বাকিরা হলেন-নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, তার সহযোগী মিজানুর রহমান দীপু, রহম আলী, আলী মোহাম্মদ, আবুল বাশার, মোর্তুজা জামান (চার্চিল), সেলিম (পলাতক), সানাউল্লাহ ছানা (পলাতক), ম্যানেজার শাহজাহান (পলাতক) ও ম্যানেজার জামাল উদ্দিন (পলাতক)। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে ৯ জনই পলাতক।

এছাড়া বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড পাওয়া আসামিরা হলেন-র‌্যাব-১১-এর সাবেক সদস্য এএসআই আবুল কালাম আজাদ (অপহরণের দায়ে ১০ বছর), এএসআই বজলুর রহমান (সাক্ষ্য-প্রমাণ সরানোর দায়ে ৭ বছর), এএসআই কামাল হোসেন (পলাতক) (অপহরণের দায়ে ১০ বছর), করপোরাল মোখলেছুর রহমান (পলাতক) (অপহরণের দায়ে ১০ বছর), করপোরাল রুহুল আমিন (অপহরণের দায়ে ১০ বছর), হাবিলদার নাসির উদ্দিন (সাক্ষ্য-প্রমাণ সরানোর দায়ে ৭ বছর), কনস্টেবল বাবুল হাসান (অপহরণের দায়ে ১০ বছর), কনস্টেবল হাবিবুর রহমান (পলাতক) (অপহরণের দায়ে ১০ বছর, সাক্ষ্য-প্রমাণ সরানোর দায়ে ৭ বছর) ও সৈনিক নুরুজ্জামান (অপহরণের দায়ে ১০ বছর)।

নিয়ম অনুযায়ী চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি এই ঘটনায় দুটি মামলার ডেথ রেফারেন্সের কপি হাইকোর্টে পৌঁছে। নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রায়ের কপি, জুডিশিয়াল রেকর্ড, সিডিসহ বিভিন্ন নথিপত্র সংশ্লিষ্ট নথিপত্র হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা দেন।

পরে ২৯ জানুয়ারি এই মামলার পেপার বুক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তৈরির জন্য নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। সেই অনুযায়ী গত ৭ মে ৬ হাজার পৃষ্ঠার পেপার বুক বিজি প্রেস থেকে হাইকোর্টে পাঠানো হয়। এরপর প্রধান বিচারপতি বেঞ্চ নির্ধারণ করে দিলে গত ২২ মে হাইকোর্টে এই মামলার আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানি শুরু হয়।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল বেলা দেড়টার দিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকার, নজরুলের বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম ও চন্দন সরকারের গাড়িচালক মো. ইব্রাহীম।
ঘটনার তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে একে একে ভেসে ওঠে ছয়টি লাশ। পরদিন মেলে আরেকটি লাশ।

ঘটনার এক দিন পর কাউন্সিলর নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বাদী হয়ে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা (পরে বহিষ্কৃত) নূর হোসেনসহ ৬ জনের নাম উল্লেখ করে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করেন। আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহিম হত্যার ঘটনায় একই থানায় আরেকটি মামলা করেন নিহত চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল। পরে দুটি মামলা একসঙ্গে তদন্ত করে পুলিশ। ১১ মাস তদন্তের পর ২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল র‌্যাবের সাবেক ২৫ কর্মকর্তা ও সদস্যসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।

দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ

প্রকাশ :আগস্ট ১৩, ২০১৭ ১১:৩৭ পূর্বাহ্ণ