২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৬:০৮

যন্ত্রণার আরেক নাম মিরপুরের রাস্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

‘সিএনজি চালকরা সচরাচর ফাঁকা রাস্তা পেলে জোরে গাড়ি চালায়। ভাঙা অংশ অনেক সময় কেয়ার করে না। এই রাস্তায় খোঁড়াখুড়ির পর, ও মেরামতের আগে সিএনজিতে প্রচণ্ড ঝাঁকি লেগে আমার মেরুদণ্ড বরাবর মাংসপেশিতে প্রচণ্ড টান লাগে। অনেকদিন ভুগতে হইসে, বেড রেস্টে ছিলাম।’

গাবতলী থেকে সিএনজি অটোরিকশায় করে মিরপুর-১০ যাওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছিলেন আলী আজম।

এই একটি সড়কে নয়, মিরপুর জুড়েই খোঁড়াখুঁড়ি আর রাস্তা ভেঙে দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। স্বাভাবিকের তুলনায় দ্বিগুণ বা তিনগুণ লাগছে যাতায়াতে। আর সেই সঙ্গে তীব্র ঝাঁকুনি আর দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়েছে।

বিভিন্ন সময়ের খোঁড়াখুড়ির পর সময় মতো তা মেরামতের অভাবে অজস্র খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে এখানে সেখানে। শুধু মূল সড়কের পাশাপাশি গলির পথগুলোও কম ভাঙাচোরা নয়।মিরপুর চিড়িয়াখানার সামনের সড়কটির অবস্থাও করুণ। সেখানে বিশাল বিশাল গর্ত তৈরি হয়েছে।

কফিলউদ্দিন তার সাত বছর বয়সী ছেলের বায়না পূরণ করতে পরিবারকে নিয়ে মিরপুর-১০ থেকে রিক্সায় করে চিড়িয়াখানা দেখতে যান। কিন্তু খুশির বদলে বাচ্চাটির চরমভাবে বিরক্ত। ভাঙা রাস্তায় প্রচণ্ড ঝাঁকুনিই এর কারণ।

চিড়িয়াখানার পুরো চত্তরটি ১৫ থেকে ২০ ফুট বড় গর্ত রয়েছে। বৃষ্টির মৌসুমে ছোট খাটো কোন জলাশয় মনে হতে পারে। রাইন খোলা বাজারের সামনেও রয়েছে বিরাটাকারের গর্ত। এই পথে নিয়মিত চলাচল করে না, এমন রিকশাচালকরা এই গর্তে যাত্রী সমেত পড়ে যাচ্ছেন বলে জানান এলাকার বাসিন্দা মেহেদি হাসান। আর বড় যান্ত্রিক গাড়ি গুলো এতোটাই দুলছে যে গাড়ির চাকার উপরে থাকা বডি সড়কের সাথে সজোরে ঘষা খাচ্ছে।

ওই এলাকার আরেক বাসিন্দা জামাল আহমেদ বলেন, ‘চিড়িয়াখানার সামনের অংশ প্রায় তিন-চার বছরের মতো এমন ভাঙা। মাঝে মাঝে ভাঙা ইটা ফালাইয়া কোন রকমে গর্ত ভরা হয়। কিছুদিন পর আবার ভাঙে। আর রাইন খোলা বাজারের ওই বড় গর্তটা প্রায় ছয়-সাতমাস হবে। জায়গা কম থাকায় ওইখানে শুনছি ছোট-খাট দুর্ঘটনা হয়।’

টেকনিক্যাল মোড় থেকে মিরপুর-১ আসার পথে এখানে সেখানে ঢেউ খেলানোর মত হয়ে গেছে সড়ক। স্থানীয়রা জানান, সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে পানিতে ডুবে থাকা অবস্থায় ভারী যান চলাচলে সড়কটি ভেঙেছে আরও বেশি। তৈরি হয়েছে বিশাল আকারের সব গর্ত। রাতের বেলায় এই সড়ক ধরে চলাচল হয়ে উঠে ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, গর্ত না দেখছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যায়। মিরপুর-১ থেকে মিরপুর-১০ পর্যন্ত মূল সড়কে ঢাকা ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ির পর সঠিক মেরামতের অভাবে তৈরি হয়েছে অজস্র খানাখন্দক।

মিরপুর ১০ থেকে পল্লবীর রাস্তার দুই দিকে চলছে কাটাকাটি। বাকি সড়ক তেমন ভাঙা না হলেও ওই কাটাকাটির কারণে সড়কটি হয়ে গেছে সরু। তাই গাড়ি চলে শম্বুক গতিতে। মেট্রোরেলের খোঁড়াখুঁড়ির কারণে মিরপুর-১০ থেকে আগারগাঁও আসার পথ যন্ত্রণাক্লিষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু এই পথ ছাড়া বিকল্প না থাকায় গাড়িগুলো চলতে বাধ্য হচ্ছে এখান দিয়েই। তারা ছুটির দিনেও দীর্ঘ যানজট এখন এখানকার নিত্য ভোগান্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সড়কে চলতে হয় প্রচণ্ড ঝাঁকুনি সহ্য করে।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য স্থানীয় ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী টিপু সুলতানের ৮ নম্বর কমিউনিটি সেন্টারের অফিসে, মিরপুর-১ এর পানির ট্যাঙ্কি এলাকার তার নিজস্ব অফিসে ও সব শেষে তার বাসায় গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান সহকারী প্রকৌশলী সৈয়দ কুদরত উল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের দেশের সড়ক ভাঙার ১২ আনা দায়ী জলাবদ্ধতা, আর চার আনা দায়ী খোঁড়াখুড়ি। দেখা যায় আমরা কোন একটা সড়ক ঠিক করলাম, কিছুদিন পর ওয়াসা এসে খোঁড়াখুঁড়ি করল। আমাদের সড়কে গাড়ি চলাচল তো আর থেমে নেই, ফলে আমদের হাতে কাজ আসার আগে আরো ভাঙতে থাকে।’

মিরপুর-১ থেকে মিরপুর-১০ পর্যন্ত সড়ক নিয়ে ডিএনসিসির এই সহকারী প্রকৌশলী বলেন, ‘ওয়াসার খোঁড়াখুড়ির পর আমরা সড়কটার কিছু অংশ মেরামত করেছি। মাঝখানে বৃষ্টির কারণে কাজ বন্ধ ছিল। আশা করি কাল পরশুর মধ্যে সড়কটি মেরামত শুরু করা যাবে।’

মিরপুর চিড়িয়াখানার সামনের চত্বরের পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে কুদরত উল্লাহ বলেন, ‘গত দুই আড়াই বছর ধরে চিড়িয়াখানার সামনের অংশ মেরামত করা হয় না। আসলে চিড়িয়াখানার সামনের সড়ক আমাদের আওতায় ছিল না। তারা আমাদের অনুরোধ করায়, এক বছর আগে কোনরকমে মেরামত করে দিয়েছি। এই আমাদের বাজেটে এই সড়কটি দ্বিতীয় অংশে আছে। তারপরও এখন যখন জেনেছি, আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ

প্রকাশ :আগস্ট ১২, ২০১৭ ১১:১৯ পূর্বাহ্ণ