বিনোদন ডেস্ক:
রুবি একজন ভিডিও বার্তার জেরে আবারো সামনে এসেছে ঢালিউডের ইতিহাসে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা নায়ক সালমান শাহ মৃত্যু রহস্য। যিনি সালমান শাহ হত্যা মামলার ৭ নম্বর আসামি। তার মৃত্যুর দিন কী ঘটেছিল, ময়নাতদন্ত করা ডাক্তার কী পেয়েছিল— বৃটিশ গণমাধ্যম বিবিসি বাংলা তা নিয়ে বুধবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, সেদিন সকাল সাতটায় বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরী ছেলে শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন ওরফে সালমান শাহর সঙ্গে দেখা করতে ইস্কাটনের বাসায় যান। তাকে প্রথমে দারোয়ান ঢুকতে দিচ্ছিল না। পরে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে দেখা না পেয়ে ফেরত আসেন।
সালমানের মা নীলা চৌধুরী বলছিলেন, ‘দারোয়ান বলেছে স্যার এখনতো উপরে যেতে পারবেন না। কিছু প্রবলেম আছে। আগে ম্যাডামকে (সালমান শাহ’র স্ত্রীকে) জিজ্ঞেস করতে হবে। এক পর্যায়ে উনি (সালমান শাহ’র বাবা) জোর করে উপরে গেছেন। কলিং বেল দেবার পর দরজা খুলল সামিরা (সালমান শাহ’র স্ত্রী)।’ নীলা চৌধুরী আরও বলেন, ‘উনি (সালমান শাহ’র বাবা ) সামিরাকে বললেন ইমনের (সালমান শাহ’র ডাক নাম) সাথে কাজ আছে। ইনকাম ট্যাক্সের সই করাতে হবে। ওকে ডাকো। তখন সামিরা বলল, আব্বা ওতো ঘুমে। তখন উনি বললেন, ঠিক আছে আমি বেডরুমে গিয়ে সই করিয়ে আনি। কিন্তু যেতে দেয় নাই। আমার হাজব্যান্ড প্রায় ঘণ্টা দেড়েক বসে ছিল ওখানে।’
বেলা এগারোটার দিকে সালমান শাহের বাসায় ফোনে জানানো হয়, তাকে দেখতে হলে দ্রুতই যেতে হবে। নীলা চৌধুরী দ্রুত ছেলের বাসার দিকে রওনা হন। তিনি সেখানে সালমান শাহকে বিছানার ওপর দেখতে পান। তিনি বলেন, ‘খাটের মধ্যে যেদিকে মাথা দেবার কথা সেদিকে পা। আর যেদিকে পা দেবার কথা সেদিকে মাথা। পাশেই সামিরার (সালমান শাহ’র স্ত্রী) এক আত্মীয়ের একটি পার্লার ছিল। সে পার্লারের কিছু মেয়ে ইমনের হাতে-পায়ে সর্ষের তেল দিচ্ছে। আমি তো ভাবছি অজ্ঞান হয়ে গেছে।’ নীলা চৌধুরী সালমান শাহর ওই মূহুর্তের শারীরিক অবস্থার বর্ণনা দেন এভাবে, ‘আমি দেখলাম আমার ছেলের হাতে পায়ের নখগুলো নীল। তখন আমি আমার হাজব্যান্ডকে বলেছি, আমার ছেলে তো মরে যাচ্ছে।’
ইস্কাটনের বাসা থেকে সালমান শাহকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানকার ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করে। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে বলা হয় সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছে।কিন্তু, তার পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, সালমান শাহকে হত্যা করা হয়েছে। নীলা চৌধুরীর অভিযোগ ছিল, তারা হত্যা মামলা করতে গেলে পুলিশ সেটিকে অপমৃত্যুর মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে। পুলিশ বলেছিল, অপমৃত্যুর মামলা তদন্তের সময় যদি বেরিয়ে আসে যে এটি হত্যাকাণ্ড, তাহলে সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে হত্যা মামলায় মোড় নেবে। সালমান শাহের মৃত্যুকে ঘিরে যখন একের পর এক প্রশ্ন উঠতে থাকে, তখন পরিবারের দাবির মুখে দ্বিতীয়বারের মতো ময়নাতদন্ত করা হয়। মৃত্যুর আটদিন পরে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে তিন সদস্য বিশিষ্ট মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। সে বোর্ডের প্রধান ছিলেন ডা. নার্গিস বাহার চৌধুরী। তিনি বলছিলেন, ‘লাশটা আমি দেখেছি মরচুয়েরিতে। আমার কাছে মনে হয়েছে যেন সদ্য সে মারা গেছে। এ রকম থাকলে তার মৃত্যুর কারণ যথাযথভাবে নির্ণয় করা যায়। আত্মহত্যার প্রত্যেকটা সাইন (চিহ্ন) সেখানে অত্যন্ত নিবিড়ভাবে ছিল। তার শরীরে আঘাতের কোনো নিশানা ছিল না।’
দ্বিতীয় ময়নাতদন্তে আত্মহত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করা হলে মামলার কাজ সেখানেই থেমে যায়। সালমান শাহ’র পারিবারিক বন্ধু চলচ্চিত্র পরিচালক শাহ আলম কিরণ বলছিলেন, ‘শেষের দিকে অনেক মানসিক চাপে ছিলেন সালমান শাহ। পরিবারের সদস্যদের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং প্রযোজকদের সাথে বোঝাপড়ার ঘাটতি তৈরি হয়েছিল। সালমান শাহ’র মৃত্যুর পরে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অভাবনীয় ক্ষতির মুখে পড়ে।’ প্রযোজকরা লোকসান কমিয়ে আনতে সালমান শাহ’র মতো দেখতে কয়েকজন তরুণকে নিয়ে অসমাপ্ত সিনেমার কাজ সম্পন্ন করার জন্য উঠে-পড়ে লাগেন।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি