নিজস্ব প্রতিবেদক:
সময়মতো ভিসা না পাওয়ায় একের পর এক হজ ফ্লাইট বাতিল হচ্ছে। অনেকে আশকোনা হজ ক্যাম্পে কয়েক দিন থাকার পর বিমানবন্দর গিয়েও ফিরে আসছেন। টাকা জমা দেয়া সবাই হজে যেতে পারবেন কি না তা নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়। কেউ তাও জানেন না কে হজে যেতে পারবেন আর কে পারবেন না,। এবার এমনই হ-য-ব-র-ল অবস্থা তৈরি হয়েছে হজযাত্রায়।
আজ শনিবারের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দুটি হজ ফ্লাইটও বাতিল করা হয়েছে ভিসা সংক্রান্ত জটিলতায় । গতকাল শুক্রবার দুপুরে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিমানের বিজি ৩০৩৯ ও বিজি ৫০৩৫ ফ্লাইট দুটি বাতিলের ঘোষণা দেওয়া হয়। শুক্রবার সকাল ৬টা ৫৫ মিনিটের বিজি ৩০৩৯ ফ্লাইটও সময়মতো ঢাকা ছেড়ে যেতে পারেনি। আজকের দুটি মিলিয়ে মোট ১৪টি হজ-ফ্লাইট বাতিল হলো। সমস্যা সমাধানে সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেয়ার পরও দৃশ্যত কোনো সুরাহা হচ্ছে না। সরকার ও হজ এজেন্সিগুলো পরস্পরকে দুষছেন। ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের ভাষ্য, ‘হজযাত্রীদের নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তার জন্য হজ এজেন্সিগুলোই দায়ী।’তিনি হজের ফ্লাইট জটিলতায় দায়ী হজ এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ারও হুমকি দেন ।
তিনি এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, বারবার তাগাদা দেয়ার পরও হজ এজেন্সিগুলো সময়মতো পদক্ষেপ নেয়নি। তবে মন্ত্রী দ্রুত এ সংকটের সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করে জানান, তাদের সৌদি দূতাবাসের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা হয়েছে । আর হজ এজেন্সিগুলো বলছে, ভিসা সমস্যার কারণে এবার এই জটিলতা তৈরি হয়েছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, এ বছর হজে যাওয়ার জন্য নাম নিবন্ধন করেছেন এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। তাদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৪২ হাজার ২০০ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এক লাখ ২২ হাজার ৯৯৮ জন হজে যাচ্ছেন। এ পর্যন্ত মোট ৯৭ হাজার ১৪০ জনের ই-হজ সিস্টেমে ভিসা লজমেন্ট করা হয়েছে। ভিসা হাতে পেয়েছেন ৫২ হাজার ৬০০ জন । তাদের মধ্যে এ পর্যন্ত সৌদি আরব পৌঁছেছেন ৩২ হাজার ৫০৪ জন।
হজ এজেন্সি সূত্রে জানা গেছে, নির্ধারিত কোটার চেয়েও এবার প্রায় হজ যাত্রী অতিরিক্ত নিবন্ধিত হয়েছেন ৩৮ হাজার। অতিরিক্ত নিবন্ধিতরা এবার হজে যেতে পারছেন না। নিবন্ধন বাতিল না করলে অতিরিক্ত এসব হজযাত্রী পর্যায়ক্রমে আগামী বছর হজে যেতে পারবেন। বাংলাদেশ ও সৌদি সরকারের মধ্যে সম্পাদিত হজ চুক্তি অনুযায়ী এবার বাংলাদেশ থেকে হজে যেতে পারবেন এক লাখ এক হাজার ৭৫৮ জন। এদিকে দ্বিতীয়বার যারা হজ করতে চান তাদের জন্য জনপ্রতি দুই হাজার রিয়েল অতিরিক্ত দিতে হবে। হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) জানায়, সৌদি কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের আগাম নোটিশ ছাড়াই অতিরিক্ত দাবি করেছে যাত্রীপ্রতি (২০১৫ ও ২০১৬ সালে যারা হজ করেছেন) ২ হাজার রিয়েল। চলতি বছর এ ধরনের হজযাত্রীর সংখ্যা ১৫ থেকে ২০ হাজার। তাছাড়া প্রায় দুই হাজার জন প্রতি বছর হজ পালন করেন এমন মোয়াল্লেম ও এজেন্সি মালিক আছেন । এর বাইরে কোনো পরিবার বা গ্রুপভিত্তিক হজযাত্রীদের একজন যদি এর আওতায় পড়েন তাহলে পুরো টিমের যাত্রা স্থগিত হয়ে যাচ্ছে। এর সংখ্যাও ৫ হাজারের বেশি।
সূত্র জানায়, সৌদি আরবে কম বেতনের সার্ভিস প্রোভাইডার বা মোয়াল্লেম না পাওয়ায় বাংলাদেশের ৯১টি হজ এজেন্সি এত দিন হজ কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। মাত্র গত সপ্তাহে তারা এ চুক্তি সম্পন্ন করেছে। ফলে হঠাৎ করে এ সিদ্ধান্ত আসায় পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া আগে পাসপোর্টে স্টিকার লাগানোর কাজটি ঢাকার সৌদি দূতাবাস ইস্যু করত। কিন্তু এবার ভিসা অনলাইনে করা হয়েছে। পাসপোর্টে কোনো ভিসা থাকছে না। হজে যাওয়ার সময় পাসপোর্টের সঙ্গে আলাদা কাগজে ই-ভিসার প্রিন্ট করা কপি সঙ্গে রাখার বাধ্যবাধকতা করা হয়েছে। সাদা কাগজে প্রিন্ট করা এই ই-ভিসা দেখে অনলাইনে চেক করে বিমান বন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশ পাস দিচ্ছে।
হজ এজেন্সিগুলো বলছে, অনলাইনে ই-ভিসার প্রিন্ট নেয়ার সমস্যা হচ্ছে। সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর প্রিন্ট করতে গিয়ে অনেকের ভিসা প্রিন্ট হচ্ছে না। পরে দৌড়াতে হচ্ছে সৌদি দূতাবাসে। সেখানেও দ্রুত সমস্যা মিটছে না। আবেদন সৌদি দূতাবাসে পাঠানোর পর ভিসা নিয়ে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। আর হজযাত্রীকে পাসপোর্টের সঙ্গে ই-ভিসার প্রিন্ট করা কপি না থাকলে ফেরত পাঠাচ্ছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল জলিল জানান এই জটিলতা নিরসনের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে মক্কার অফিসকে জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সৌদি আরবের আরোপ করা নিয়ম-কানুন আমাদের মেনে চলতে হচ্ছে। আশা করি শিগগিরই সমস্যা কেটে যাবে। সৌদি আরব নিশ্চয়ই এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।’
হজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) মহাসচিব মো. শাহাদাত হোসেন তসলিমও অনলাইনে সমস্যার কথা জানান। তবে তিনি দাবি করেন, তারপরও এবার নিবন্ধিত ১ লাখ ২৭ হাজার জনই হজে যেতে পারবেন। আশকোনা হজ ক্যাম্পের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টিকেট কনফার্ম থাকার পরও অনেক হজযাত্রী বিমানে উঠতে পারছেন না। তাদের হজ ক্যাম্প থেকে বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়ার পর ভিসা বুঝিয়ে দিতে না পারায় ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এতে হজযাত্রীদের সৌদি আরব পৌঁছা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি