২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ভোর ৫:২৬

এতকিছুর পরেও থামেনি লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই

নিজস্ব প্রতিবেদক:

তিন বছর আগে আজকের এইদিনে কাওরাকান্দি ঘাট থেকে মাওয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা পিনাক-৬ লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের কারণে পদ্মায় তলিয়ে যায়। সরকারি হিসাবে ওই দুর্ঘটনায় ৪৯ ও বেসরকারি হিসাবে ৮৬ যাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়। সাঁতরে ও অন্যদের সহযোগিতায় জীবিত উদ্ধার হন কিছু যাত্রী। নিখোঁজ থাকেন ৫০ জন। যাদের খোঁজ মেলেনি আজও। এর মধ্যে আবার অজ্ঞাতনামা হিসেবে ঠাঁই হয় শিবচর পৌর কবরস্থানে ২১ লাশের। এতকিছুর পরেও থামেনি লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই।

দুর্ঘটনার তিন বছর পূর্ণ হলেও আজও পিনাক-৬ নাম শুনলে আঁতকে ওঠেন সে দিনের দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া মানুষ এবং মৃত্যুপথযাত্রীদের স্বজনরা। আজও থামেনি তাদের কান্না।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, তিন বছর আগে এ দিন ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফিরছিল মানুষ। ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে মাদারীপুরের শিবচরের কাওড়াকান্দি ঘাট থেকে মাওয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যায় পিনাক-৬। ওভারলোডিংয়ের কারণে লঞ্চটি পদ্মায় ডুবে যায়।

পিনাক-৬ ডুবিতে স্বজন হারানো কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে আলাপ করলে তারা জানান, এই দিনটিতে তারা হারানো স্বজনদের আত্মার শান্তি কামনার জন্য দোয়া মাহফিল করে থাকেন। কোনো কোনো পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী সন্তান হারিয়ে বৃদ্ধ বাবা-মা আজ সহায়হীন। অনাদরে বেঁচে আছেন মৃতের মতো পড়ে থেকে।

পদ্মায় লঞ্চডুবে নিহত এসব পরিবারের কষ্ট ছুঁয়ে যায় প্রতিবেশীদেরও। ঢাকায় ফেরার পথে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পিনাক-৬ ডুবির দুর্ঘটনায় মারা যান উপজেলার সন্যাসিরচর ইউনিয়ের দৌলতপুর গ্রামের ফরহাদ মাতুব্বর। স্ত্রী শিল্পী, এক বছর বয়সী সন্তান ফাহিম ও শ্যালক বিল্লালসহ সলিল সমাধি ঘটে তার। যাদের লাশও শেষ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

মাদারীপুরের শিবচরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরান হোসেন জানান, অজ্ঞাতপরিচয়ে শিবচর পৌর কবরস্থানে দাফন করা ২১টি মরদেহের মধ্যে তিনটির ডিএনএ টেস্ট মিল পাওয়ায় ওইসব পরিবারকে লাশের কবর শনাক্ত করে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, লঞ্চ দুর্ঘটনায় উদ্ধার হওয়া শিশু-তরুণসহ সব বয়সী মানুষকে এখনও তাড়া করে ফেরে সে দুর্ঘটনার ভয়াবহ স্মৃতি। তারা জানান, উত্তাল স্রোত ও ঢেউয়ের সঙ্গে সংগ্রাম করে তাদের বেঁচে থাকার কাহিনী।

লঞ্চ দুর্ঘটনায় প্রায় অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছে শিবচরের বাখরেরকান্দি গ্রামের নুরুল আমিনের আট বছর বয়সী ছেলে সাঈদ ও ১৫ বছর বয়সী মেয়ে সাবিনা। ১৩ বছর বয়সী সাবিনা জানায়, সে তার মামাকে নিয়ে বেঁচে থাকলেও তার ছোট এক বোন ও বড় এক বোনকে হারিয়েছে পদ্মায়। ভয়াল সেই দিনটির কথা মনে হলে আজও আঁতকে ওঠে সে।

পিনাক-৬ লঞ্চ দুর্ঘটনায় মাদারীপুরের কালকিনি ও শিবচর উপজেলার বেশ কয়েকটি পরিবারের প্রত্যেকটিতে ৩ থেকে ৪ জন করে নিখোঁজ রয়েছে। দেখতে দেখতে তিন বছর পার হয়ে গেছে ঠিকই। কিন্তু নিখোঁজদের পরিবারের দিন যেন কাটতেই চায় না। অনেকে সান্ত্বনাটুকুও পাননি।

দৈনিকদেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :আগস্ট ৪, ২০১৭ ১১:২০ পূর্বাহ্ণ