নিজস্ব প্রতিবেদক:
কী দোষ ছিল আমার? সেশনজটের অভিশাপ থেকে বাঁচতে সহপাঠীদের সঙ্গে রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলাম। ওরা আমার চোখটাই নষ্ট করে দিল! আমি আর কিছুই চাই না, শুধু আমার দৃষ্টিশক্তি ফেরত চাই। কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন তিতুমীর সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র সিদ্দিকুর রহমান। গত বৃহস্পতিবার শাহবাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাতটি কলেজের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। ওইদিন পুলিশ খুব কাছ থেকে সিদ্দিকুর রহমানের মুখ লক্ষ্য করে গুলি করে। এতে তার দুই চোখ গুলিবিদ্ধ হয়। দুই চোখে মোটা ব্যান্ডেজ বাধা অবস্থায় বন্ধুদের কাঁধে ভর দিয়ে শনিবার রাতে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতালের বারান্দায় হাঁটাহাটি করছিলেন সিদ্দিকুর রহমান।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আমি শুধু আমার দৃষ্টিশক্তি ফেরত চাই। আপনাদের কাছে একটাই অনুরোধ, আপনারা আমার চোখে দেখার ব্যবস্থা করে দেন। আমি যাতে সুস্থ হয়ে পুনরায় পড়াশোনা শুরু করতে পারি।’ কৃষক পরিবারের সন্তান সিদ্দিকুর লেখাপড়া শেষ করে চাকরি নিয়ে পরিবারের হাল ধরার স্বপ্ন দেখেছিলেন। এই ঘটনার কারণে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে সেই সিদ্দিকুরই যেন উল্টো পরিবারের বোঝা হয়ে না পড়েন এমনটাই আশা প্রকাশ করেছেন তার বন্ধুরা।
সিদ্দিকুরের বন্ধু ফরিদ বলেন, বারবার সিদ্দিকুর আমাদের জিজ্ঞাসা করে সে কবে দেখতে পাবে? সুস্থ হতে কতদিন লাগবে? জবাবে আমরা তাকে কোনো সান্ত্বনা দিতে পারি না। তবে সব সময় তার সঙ্গে থাকার চেষ্টা করছি। কারণ আমরা পাশে থাকলে ওর একটু ভাল লাগে, সাহস পায়। তিনি বলেন, আমরা সিদ্দিকুরের দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রী সাহায্য চাই। একই সঙ্গে ওই পুলিশি হামলার যাতে সঠিক বিচার হয়, সেটিও দাবি করছি। ফরিদ বলেন, ‘আমরা তো সেশনজট থেকে মুক্তি পেতে আর ভালভাবে লেখাপড়া করার নিশ্চয়তার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলাম। তাহলে কেন আমাদের ওপর এমন হামলা হলো?’
জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতালের পরিচালক ডা. গোলাম মোস্তফা সাংবাদিকদের বলেন, সিদ্দিকুর দুই চোখেই মারাত্মক আঘাত পেয়েছে। এতে তার একটি চোখ প্রায় অকেজো হয়ে গেছে। রোববার দু’চোখেই অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।
সিদ্দিকুরের চিকিৎসায় পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা তাকে অবজারভেশনে রেখেছি। তার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার বিষয়ে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।’
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ