স্বাস্থ্য ডেস্ক:
ইয়োগা বা যোগব্যায়াম সাধারণত তিনটি প্রধান কাঠামোর ওপর নির্মিত হয়। যেমন ব্যায়াম, শ্বাস এবং ধ্যান। ব্যায়াম ও বিভিন্ন আসনের মাধ্যমে শরীরকে নিজের আয়ত্তে আনার কৌশল জানা যায় এবং বিভিন্ন রোগ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা যায়। আপনাদের সুবিধার জন্য আমরা ইয়োগার শুধু ‘ব্যায়াম’ (আসন) নিয়ে আলোচনা করব। যোগব্যায়ামে প্রতিটা আসনের কয়েকটা ধাপ বা লেভেল থাকে। আমরা প্রথম ধাপ ও সবচেয়ে সহজ আসন ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করছি। আজকের আসন, তারাসন
তারাসন (তারা = স্টার পোজ)
দাঁড়ানোর নিয়ম : প্রথমে একটি ইয়োগা ম্যাটে দাঁড়ান। দুই পায়ের পাতার মাঝে ৪-৬ ইঞ্চির মতো জায়গা ফাঁকা রাখুন। দুই হাতের তালু কোমরের দুই পাশে সমানভাবে রাখুন। দুই হাতের আঙুল একটার সাথে আরেকটা লক করে একসাথে রাখুন। এবার লম্বা করে শ্বাস নিন। দুই হাত কান বরাবর মাথার উপর তুলুন। লক অবস্থায় হাতের তালু উপরমুখী করুন। পায়ের গোড়ালি উপর দিকে তুলে পায়ের আঙুলের উপর দাঁড়ান। মাথা পেছন দিকে সামান্য হেলিয়ে উপরের দিকে তাকান। সম্পূর্ণ শরীর উপরের দিকে টান টান রাখুন। চেষ্টা করুন শরীরকে উপর দিকে টেনে তুলতে। স্বাভাবিক শ্বাস প্রশ্বাস চালিয়ে যান কিন্তু টান টান ভাব কমানো যাবেনা। এভাবে ২-১০ মিনিট (যতক্ষণ আপনি পারবেন) অপেক্ষা করুন। এবার আবার লম্বা করে শ্বাস নিন এবং শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে হাত নামিয়ে এনে হাতের তালু মাথার উপর রাখুন। তারপর হাত নামিয়ে আগের অবস্থানে এবং পায়ের গোড়ালি মাটিতে নামিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ান। ৫-১০ সেকেন্ড স্বাভাবিক দম নিন। তারপর ঠিক একইভাবে আবার তারাসন করুন। এভাবে ৫-১০ রাউন্ড করুন।
উপকারিতা :
উচ্চতা বাড়াতে সাহায্য করে
এই আসন পায়ের আঙুল থেকে হাতের আঙুল পর্যন্ত প্রসারিত করে এবং শক্তি জোগাতে সাহায্য করে।
যারা বিষণ্ণতায় ভোগেন তাদের জন্য এটা অনেক উপকারী আসন।
মনোবল, একাগ্রতা ও অনাক্রমণতা বাড়ে।
পা, বুক, পিঠের পেশির নমনীয়তা বাড়ায়।
এটা হাঁটুর জন্য ভালো। যারা হাঁটুর ব্যাথায় ভুগছেন তাদের এই আসন নিয়মিত করা উচিৎ
উরু এবং কাফ মাসল শক্তিশালী করে তোলে।
এটা আপনার সেলফ-কনফিডেন্স বাড়াতে সাহায্য করবে।
স্নায়ু শিথিল করে উত্তেজনা কমাতে সাহায্য করে।
শিরসাসন করার পর তারা আসন করলে দ্রুত মাথা থেকে রক্ত নিচের দিকে নেমে আসে।
গর্ভাবস্থায় প্রথম দিকে এই আসন করলে গর্ভের শিশুর গ্রোধ ভালো হয়।
সতর্কতা :
যাদের লো ব্লাড প্রেসার আছে তারা করবেন না।
যাদের মাইগ্রেনের সমস্যা আছে তারা করবেন না।
যাদের ইনসোমনিয়া (অনিদ্রা) সমস্যা আছে তারা করবেন না।
অথবা যাদের উপরের সমস্যাগুলো আছে তারা সাবধানে করুন।
ইয়োগা কি?
ইয়োগা বা যোগব্যায়াম একটি শাস্ত্রীয় কৌশল। যা পাঁচ হাজার বছরেরও পুরোনো। প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশের মুনি ঋষিরা তাদের স্বাস্থ্য ঠিক রাখা এবং দীর্ঘজীবনের জন্য বিভিন্ন কলা-কৌশল আবিষ্কার বা আয়ত্ত করেন। প্রায় ৪০০ বছর আগে সর্বপ্রথম ঋষি পতঞ্জলি কিছু আসনের কথা বলেন এবং এগুলো মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে ধীরে ধীরে এই কলাকৌশল ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীর সর্বত্র। উনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর দিকে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাষায় ‘পতঞ্জলিআসনা’ নামে গ্রন্থটি ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে আরো অনেকেই যোগব্যায়াম এর ওপর বেশকিছু গ্রন্থ রচনা করেন।
‘ইয়োগা’ শব্দের আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে ‘যুবক’ বা ‘যৌবন’। অর্থাৎ মানুষের দেহ ও মনের যৌবন ধরে রাখার কৌশল। এটা নিয়ে অনেকে অনেক রকম মতামত প্রকাশ করেছেন। কেউ বলেছেন আত্মা বা মন ও শরীরকে একত্র করার কৌশলকে ইয়োগা বা যোগ বলে।
প্রতিদিন নতুন নতুন ইয়োগা আসন ও আসনের উপকারিতা সম্পর্কে জানার জন্য পরিবর্তন ডটকমের সঙ্গে থাকুন।
দৈনিকদেশজনতা/এন এইচ