১৮ই জানুয়ারি, ২০২৫ ইং | ৪ঠা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | দুপুর ১:৪৮

রোহিঙ্গা শিবির গুলোতে চলছে জঙ্গি কর্মকান্ড বাড়ছে খুন-অপহরণ

উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি:
সারাদেশে জঙ্গি বিরোধী নানান প্রচার ও তৎপরতা বিদ্যমান থাকলেও উখিয়া-টেকনাফে অবস্থানকারী মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের টার্গেট করে এখনো গোপনে কাজ করে যাচ্ছে দু, একটি জঙ্গি সংগঠন। মিয়ানমার সরকারের নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা বিপুল পরিমান রোহিঙ্গা প্রসাশনের নিয়ন্ত্রনে না থাকায় ক্যাম্পে জঙ্গি সংগঠনের অপ-তৎপরতা সব সময় ছিল। এদের সাথে নতুন ভাবে যুক্ত হয়েছে মিয়ানমারে উৎপত্তি হওয়া আল ইয়াকিন নামের একটি জঙ্গিগোষ্টি। ইতিমধ্যে এ সংগঠনটি কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৩ টি খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে। টেকনাফের নয়াপাড়া, লেদা ও উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও বস্তিতে দাপিয়ে বেড়ানো এ জঙ্গি সংগঠনের ভয়ে ততস্থ হয়ে পড়েছে রোহিঙ্গাসহ স্থানীয় জনগন। এসব জঙ্গি সংগঠনকে আস্কারা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্প সুত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে নয়াপাড়া, লেদা, কুতুপালং ও বালুখালী ক্যাম্প তিনটিতে মিয়ানমারের সশস্ত্র জঙ্গী সংগঠন আল ইয়াকিনের প্রবেশ ঘঠেছে। তারা একের পর এক অপহরন ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ক্যাম্প এলাকায় আতংক ছড়িয়ে দিয়েছে। তারা গত ১৩ জুন কুতুপালং অনিবন্ধিত ক্যাম্পের হানা দিয়ে ই-১ ব্লকের নেতা মোঃ আয়ুব মাঝি ও কুতুপালং নিবন্ধিত ক্যাম্পের শরণার্থী আলী আহমদের ছেলে মোঃ সেলিম (২৬) কে তাদের ঘর লুটপাট করে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে গত ১৮ জুন দুপুরে বালুখালী তেলীপাড়া খাল থেকে ভাসমান হাত পা বাঁধা ও গলা কাটা অবস্থায় মোঃ সেলিম ও গত ২৫ জুন রাত ৮ টার দিকে অপহৃত রোহিঙ্গা মোঃ আয়ুব মাঝির লাশ উদ্ধার করে উখিয়া থানা পুলিশ। ইতিপূর্বেও রোহিঙ্গা ক্যাম্প খুন, ঘুম, অপহরণ ও অস্ত্রবাজির ঘটনা ঘটেছে। গত ২৩ মে কুতুপালং নিবন্ধিত শরণার্থী ক্যাম্পের মালয়েশিয়া ফেরত মৃত ইমাম হোসেনের ছেলে মোঃ শফি প্রকাশ বলি (২৬) কে আল ইয়াকিন গ্রুপের সন্ত্রাসীরা রাতের অন্ধকারে শিবির থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। অপহরণের ৩ দিনের মাথায় ২৫ মে সকালে পার্শ্ববর্তী মধুরছড়া জঙ্গল থেকে রোহিঙ্গা মোঃ শফির প্রকাশ বলির লাশ উদ্ধার করে উখিয়া থানা পুলিশ। সর্বশেষ কুতুপালং অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আবু ছিদ্দিককে পিঠে চুরিকাঘাত করে সন্ত্রাসীরা। এসব ঘটনা নিয়ে ক্যাম্প সহ আশেপাশের এলাকায় তৈরী হয় অস্থিরতা। ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয়রাও রয়েছে উদ্বেগ উৎকন্ঠায়। এসব হত্যাকান্ডের পর ক্যাম্প ও স্থানীয় জনগন মাগরিবের পর ঘর থকে খুব একটা বাইরে বের হচ্ছেনা। এলাকায় ব্যাপকভাবে প্রচার পেয়েছে, আল ইয়াকিন গ্রুপের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা সন্ধ্যার পর মুখে কালো কাপড় বেধে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে ঘুরোঘুরি করে। রাতে তারা চলে যায় টেকনাফের লেদা বস্তি ও নয়াপাড়া ক্যাম্পে। রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ নুর সহ একাধিক রোহিঙ্গা নেতা জানান, কুতুপালং শিবির ও লেদা বস্তির রোহিঙ্গা কলিম উল্লাহ, ছলিম উল্লাহ, ইসমাইল কুতুপালং বস্তির সন্ত্রাসী রোহিঙ্গা মোঃ জাবের (৩২), মোঃ নুর (২৮), মনির আহামদ (২৮), খুইল্যা মিয়া মুন্না (৩২), সলিম (২৬),ও নয়াপাড়ার নতুন রোহিঙ্গা বস্তির মোঃ কালু (৩৫) ও মো ইসলাম (৩৩) এর নেতৃত্বে মিয়ানমার থেকে সাম্প্রতিক সময়ে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে আল ইয়াকিন নামের সশস্ত্র গ্রুপটি। তারা প্রতিনিয়ত রোহিঙ্গাদের নিকট থেকে অপরণ পূর্বক চাঁদা দাবী,খুন, গুমসহ বিভিন্ন হুমকি ধমকি দিয়ে যাচ্ছে। জড়িতরা দিনের বেলায় লোকচঁক্ষুর আড়াঁলে থাকলেও রাতে সময়ে -অসময়ে শিবির অভ্যান্তরে মহড়া সশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে। নয়াপাড়া লেদা ক্যাম্প ও বস্তিতে এসব জঙ্গি সংগঠনকে অর্থ সহ বিভিন্ন ভাবে সহয়তা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী স্বরাষ্টমন্ত্রনালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা গড়ফাদার নুরুল হুদা, মৃত খলিলুর রহমানে পুত্র মেীলভী জামাল ও তার ভাই কামাল হোছেনের বিরুদ্ধে। লেদা এলাকার সাবেক মহিলা মেম্বার খতিজাতুল খুবরার স্বামী মোহাম্মদ আলম জানান, স্থানীয় এসব প্রভাবশালীর আশ্রয়ে থেকে জঙ্গিরা রাতের আধারে বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। তারা লেদা এলাকার বিভিন্ন পাহাড়ের গোপনীয় স্থানে জঙ্গিদের প্রশিক্ষন নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। আর এর সবকিছুই নিয়ন্ত্রন করছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহলটি। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে সরকারী পুলিশ সুপার ছাইলাউ মারমা জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জঙ্গি তৎপরতার ব্যাপারে প্রসাশনের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে, ক্যাম্প গুলোতে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে রোহিঙ্গা শিবিরে পুলিশ ফাঁড়ি নির্মানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

কায়সার হামিদ মানিক

প্রকাশ :জুলাই ১৬, ২০১৭ ৬:৩২ অপরাহ্ণ