নিজস্ব প্রতিবেদক:
চালের বাজারে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠছে। চলমান চালের দাম অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছে। এখন খুচরা বাজারে মোটা চাল ৪৮ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একটু ভালো সরু চাল কিনতে লাগে পুরো ৬০ টাকা। অসহায় মানুষের কথা ভাববার সময় সরকারের না থাকলেও মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে নিজেদের আখের সরকার ঠিকই গুছিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সরকার বিরোধী রাজনীতিবিদরা। তাদের অভিযোগ চালের দাম বৃদ্ধির জন্য অসাধু ব্যবসায়িদের দায়ি করে সরকার ব্যর্থতা আড়াল করার চেষ্টা করছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ বলেছেন,‘ সরকারি হিসাব অনুযায়ী গত এক মাসে সাধারণ মানের মোটা চালের দাম বেড়েছে ৮ শতাংশের বেশি। আর এক বছরে দাম বৃদ্ধির পরিমাণ ছিলো ৫০ শতাংশ’। শুল্ক কমানোর পর আমদানি বাড়লেও দাম কমছে না চালের। মোটা চালের দাম কিছুটা কমলেও সরু চাল আগের দরেই বিক্রি হচ্ছে। ফলে এখনো স্বস্তি ফেরেনি চালের বাজারে। শুল্ক কমানোর পর এ পর্যন্ত বেসরকারিভাবে ভারত থেকে ৮৪ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে।
এছাড়া সম্প্রতি ভিয়েতনাম থেকে সরকারিভাবে আমদানিকৃত ২০ হাজার টন চালের প্রথম চালান চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছেছে। যা এখন খালাস হচ্ছে। সেখান থেকে আগামী ১৮ জুলাই আরও ২২ হাজার টন, ২৪ জুলাই ২১ হাজার টন, ৩০ জুলাই ২৪ হাজার টন চাল আসার কথা রয়েছে। সবমিলিয়ে আগস্টের মধ্যে আরো এক লাখ ৪০ হাজার টন চাল ঢুকবে দেশে। কিন্তু চাল আমদানির উল্লেখযোগ্য কোনো প্রভাব পড়ছে না দামের ক্ষেত্রে। পাইকারি বাজারে দাম কিছুটা কমলেও খুচরাবাজারে তার কোনরকম প্রভাব পড়েনি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার আমদানি শুল্ক কমালেও একই সময়ে ভারত প্রতি টন চালে ৩৫ থেকে ৪০ ডলার রপ্তানি মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। শুল্ক কমানোর আগে যে চাল প্রতি টন ৩৯০ থেকে ৪০০ মার্কিন ডলারে আমদানি করা হতো, সেই একই চাল এখন ভারত থেকে ৪২০ থেকে ৪৩০ মার্কিন ডলারে আমদানি করা হচ্ছে। ফলে আমদানি শুল্ক কমানোর সুফল পাচ্ছে না ভোক্তারা।
বিষয়টি স্বীকার করে গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে চাল আমদানি পরিস্থিতি নিয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন, ভারত তাদের চালের মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। তারপরও চাল আসছে। তবে চালের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির পেছনে অবৈধভাবে চাল মজুদকারিদের দায়ি করে মন্ত্রী বলেছেন, হাওর অঞ্চলে অকাল বন্যা হওয়ার পর থেকেই অসাধু মিল মালিকরা চাল মজুদ শুরু করে। ফলে চালের বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। বাজারে চালের মূল্য বৃদ্ধির একমাত্র কারণও অবৈধ মজুদ। যে সব মিল মালিক অবৈধভাবে চাল মজুদ করেছে, তাদের আমরা তিন বছরের জন্য কালো তালিকাভুক্ত করেছি।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বাদামতলী ও বাবুবাজার চাল আড়ত ও কাওরানবাজার ঘুরে দেখা গেছে, চাল আমদানির উল্লেখযোগ্য কোনো প্রভাব পড়েনি খুচরাবাজারে। ভালোমানের নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। মিনিকেট ৫৬ থেকে ৫৮ টাকা। এছাড়া মোটা মানের চাল ইরি/স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে ৪৩ থেকে ৪৬ টাকা কেজিতে।
দৈনিকদেশজনতা/এন এইচ